মানুষের সার্বিক উন্নয়নে সহায়তা না করলে সেই সংস্কার কোনো কাজে আসবে না: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: ইউএনবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাষ্ট্রে সংস্কার ও কাঠামোগত পরিবর্তনের লক্ষ্য হওয়া উচিত জনজীবনে প্রকৃত উন্নয়ন, বিশেষ করে শিশুদের জন্য।

তিনি বলেন, 'আমরা রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তন চাই, আমরা সংস্কার চাই। কিন্তু এই সংস্কার ও পরিবর্তন যদি আমাদের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে সহায়তা না করে, যদি আমাদের শিশুদের জন্য একটি উন্নত ভবিষ্যৎ বা নিরাপদ জীবন নিশ্চিত না করে—তাহলে আমি মনে করি, এই সংস্কারের কোনো মূল্য থাকবে না।'

আজ মঙ্গলবার বনানীর কামাল আতাতুর্ক মাঠে 'আমরা বিএনপি পরিবার' এবং 'মায়ের ডাক'-এর যৌথ আয়োজনে 'গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় শিশু' শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার এবং জুলাই গণ-আন্দোলনে নিহত শিশুদের স্মরণ করা হয়।

তিনি গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রিয়জন হারানো পরিবারগুলোকে সহায়তায় রাষ্ট্র খুব কম কিংবা কোনো পদক্ষেপই নেয়নি।

বিএনপি মহাসচিব আশা প্রকাশ করে বলেন, গুমের শিকার ও গণআন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত শিশু ও পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে সরকার জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

তিনি বলেন, 'আমি আশা করি, আমাদের এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার—যদিও বিলম্বিতভাবে—তাদের পুনর্বাসনকে অগ্রাধিকার দেবে, যেসব পরিবার, তাদের পিতা, আত্মীয় বা ভাইদের খুঁজে বেড়িয়ে কষ্ট ও যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে গেছে।'

গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কার্যকারিতা নিয়েও সমালোচনা করেন ফখরুল। তিনি বলেন, 'একটি তদন্ত কমিশন গঠিত হলেও তারা কেবল একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। আমি মনে করি না তারা খুব বেশি অগ্রগতি করেছে—না নিখোঁজদের খোঁজে, না ঘটনার সত্য উদঘাটনে।'

বিএনপি নেতা বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুম বা হত্যার শিকার পরিবারগুলো—এমনকি শিশুদেরও—মানুষের হারানো অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দীর্ঘ লড়াইয়ে বিপুল ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, 'গত বছর ৫ আগস্ট দেশে যে পরিবর্তন ঘটেছিল, তাতে অনেকে ক্ষমতার চূড়ায় পৌঁছেছেন—কেউ হয়েছেন মন্ত্রী, কেউ শীর্ষ কর্মকর্তা, কেউ গড়ে তুলেছেন বিশাল ব্যবসা। কিন্তু আমাদের শিশুদের জন্য আমরা সেইভাবে এগোতে পারিনি।'

ফখরুল বলেন, তারা আশা করেছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন হলেও বর্তমান সরকার গুমের শিকার শিশু ও পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের জন্য একটি বিশেষ সেল গঠন করবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'দুর্ভাগ্যবশত, তা হয়নি।'

তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এলে গুম ও সহিংসতার শিকার শিশু ও পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তার বক্তব্যের শেষদিকে ফখরুল এক আবেগঘন আহ্বান জানান, 'চলুন আমরা সবাই মিলে এগিয়ে আসি এবং এই শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তুলি—সেই শিশুটি যে এখনও একটি প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছে, তার বাবার ফিরে আসার অপেক্ষায়। আমরা জানি না, সেই বাবা বেঁচে আছেন কি না, তাকে ফিরিয়ে আনতে পারব কি না—কিন্তু অন্তত আমরা তার একটি সুন্দর জীবন ও আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারি। এই ঋণ কখনোই শোধ করা সম্ভব নয়।'

Comments

The Daily Star  | English

US cuts tariffs on Bangladesh to 20% after talks

The deal for Dhaka was secured just hours before a midnight deadline set by President Donald Trump

2h ago