আগামী নির্বাচনে আ. লীগ প্রার্থী: বাদ পড়তে পারেন ৯০ এমপি

সূত্র জানায়, শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিও নির্ভর করবে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্তের ওপর।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী

আওয়ামী লীগের ২৬১ জন সংসদ সদস্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ আওয়ামী লীগের প্রায় ৯০ জন সংসদ সদস্য তাদের অপকর্ম ও ক্রমবর্ধমান অজনপ্রিয়তার কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন নাও পেতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় ভিন্নমতাবলম্বীদের পৃষ্ঠপোষকতা, ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা এবং দলীয় নেতাদের উপেক্ষা করে নিজের গ্রুপের পক্ষে অবস্থান নেওয়া তাদের বিতর্কিত হওয়ার মূল কারণ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও উত্তরাঞ্চলের সংসদ সদস্যরা অন্য যেকোনো এলাকার চেয়ে দলীয় আনুকূল্য বেশি হারিয়েছেন।

আগামী নির্বাচনে বিতর্কিতদের পরিবর্তে তরুণ, জনপ্রিয় ও নিবেদিতপ্রাণ নেতারা দলীয় টিকিট পাবেন। দলের সেবা করার দীর্ঘ ইতিহাস থাকা সাবেক সংসদ সদস্যরাও মনোনয়ন পাবেন।

সূত্র জানায়, এবার ক্ষমতাসীন দল কোন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবে তা আগাম জানিয়ে দেবে, যাতে অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে কোনো সংকট তৈরি না হয়।

আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের দুটি তালিকা তৈরি করবে দলটি। একটি ব্যবহার করা হবে যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে এবং অন্যটি যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়।

সূত্র জানায়, শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিও নির্ভর করবে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্তের ওপর।

বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে ক্ষমতাসীন দল ৩০০ ডামি প্রার্থীর তালিকাও প্রস্তুত করবে বলে জানিয়েছে তারা।

২০১৪ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি এড়াতে এটি করা হবে, যেখানে আওয়ামী লীগের ১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।

সূত্রগুলো দাবি করেছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতার জয়ের সম্ভাবনা বেশি, তা জানতে একটি গোয়েন্দা সংস্থা দলের তৃণমূল ও জনগণের ওপর বেশ কয়েকটি জরিপ চালায় এবং প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৯০ জন বর্তমান সংসদ সদস্য তৃণমূলের সমর্থন হারিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের অনেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও দলীয় কমিটিতে নেতা মনোনয়নে স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্ব, টেন্ডারবাজি, টাকার বিনিময়ে মানুষকে চাকরি দেওয়া এবং দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল উস্কে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিবেদনে প্রত্যেক আসনে তিন জন বিকল্প প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে, যার মধ্যে তরুণ ও নিবেদিতপ্রাণ নেতা এবং সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন।

সূত্র জানায়, একটি জরিপ এখনও চলছে এবং বিএনপি কোন পথে যায় তা দেখার পর আরেকটি জরিপ করা হবে।

চূড়ান্ত জরিপ প্রতিবেদন দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সামনে উপস্থাপন করা হবে, যাতে তারা মনোনীত প্রার্থীদের তারা চূড়ান্ত করতে পারেন।

যেকয়েকটি থেকে দলের নেতারা অংশ নেবেন সেগুলো ছাড়া বেশির ভাগ আসনেই বিদ্রোহী প্রার্থীরা হুমকির মুখে পড়েছেন।

অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ইতোমধ্যে মনোনয়ন নিশ্চিতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।

দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে প্রতি আসনে আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী নিশ্চিত করা দলের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও উদ্বেগের কারণ।

২০১৮ সালের নির্বাচনে ৪০৩৭ জন আওয়ামী লীগের টিকিট প্রত্যাশী ছিলেন এবং পরে দলটিকে প্রায় ৩০০টি আসনেই বিদ্রোহী প্রার্থীদের মোকাবিলা করতে হয়েছিল।

গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় ভিন্নমতাবলম্বীদের মোকাবিলা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ৪০২৭টি ইউপি চেয়ারম্যান পদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা পেয়েছেন ২১৭২টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ১ হাজার ৭৭৮টি। যাদের বেশিরভাগই ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।

গত প্রায় ১০ বছর ধরে দলটি ভিন্নমতাবলম্বীদের আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে করে শেষ পর্যন্ত দলটির তৃণমূল ইউনিট দুর্বল হয়েছে।

বিতর্কিত সংসদ সদস্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আইনপ্রণেতাদের একটি অংশের পতনের বিষয়ে তারা অবগত আছেন।

'আমরা তাদের পরিবর্তে তরুণ, সৎ, নিবেদিতপ্রাণ ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেব। এবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তাই হবে প্রধান মাপকাঠি,' বলেন তিনি।

২০১৮ সালের নির্বাচনে দশম জাতীয় সংসদের ৫৬ জন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী দলের মনোনয়ন পাননি। এর আগে একইভাবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৪৯ জন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

Comments