তফসিল ঘোষণার আগেই চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায় বিএনপি

সরকার নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে বিএনপির কিছু নেতাকে নির্বাচনে অংশ নিতে প্ররোচিত করতে পারে বলেও আশঙ্কা দলটির।
বিএনপির অবরোধ

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বিরোধী দল বিএনপি তাদের আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে। সুতরাং, বিএনপি তার আগেই তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে চায়, কারণ দলটির আশঙ্কা সরকার নির্বাচনের আগেই বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে কারারুদ্ধ করার চেষ্টা করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, সরকার নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে বিএনপির কিছু নেতাকে নির্বাচনে অংশ নিতে প্ররোচিত করতে পারে বলেও আশঙ্কা দলটির।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, 'নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়ে যাবে। অতএব, সেই সময়ে আমাদের আন্দোলনের গতি অর্জন করা কঠিন হবে। সুতরাং তার আগেই নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে।'

নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে যে নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে এবং জানুয়ারির শুরুতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এসব কথা মাথায় রেখে আজ মঙ্গলবার থেকে রোড মার্চসহ ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।

দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, এসব কর্মসূচির মাধ্যমে তারা তাদের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় শুরু করার আগে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এবং অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনে বাধ্য করার চেষ্টা করছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। তারা আশঙ্কা করছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে তাদের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করা হতে পারে, যাতে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি এক সমাবেশে বলেন, 'বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীরা যাতে নিরপেক্ষ সরকারের আন্দোলনে অংশ নিতে না পারে, সেজন্য সরকার তাদের কারাগারে রাখার পরিকল্পনা করছে।'

আরেক সিনিয়র নেতা বলেন, সরকার বিরোধী দলের কিছু নেতাকে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রলুব্ধ করতে পারে।

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তারকে উদ্ধৃত করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আগামী নির্বাচনেও সরকার অবশ্যই এ ধরনের চেষ্টা করবে।

তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশন যেন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে বিরত থাকে, সে জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হবে। আমরা যদি তা করতে পারি, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত হবে।'

উকিল সাত্তার ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয় লাভ করেন।

বিএনপির আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ থাকায় এবারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ মানুষ।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'চলমান আন্দোলনের তীব্রতা আগামী দিনগুলোতে আরও বাড়বে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'একটি বিষয় নিশ্চিত যে, এবার কোনো একতরফা নির্বাচন হবে না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দলটি ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করে এবং নির্বাচন প্রতিহত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যোগ দিলেও কিছু জায়গায় নির্বাচনের আগের রাতে ভোট দেওয়ার অভিযোগ আছে। এরপর থেকে অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের অধীনে নির্বাচনের দাবি আবারও সামনে আসে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ১২ জুলাই থেকে বিরোধী দল এক দফা আন্দোলন শুরু করে এবং ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

Comments