কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মিছিলে যুবলীগের হামলা, আহত ২

যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ শহীদ নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে ঐক্য পরিষদের মিছিলে ধাওয়া দেয় ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
কুমিল্লায় সংসদ সদস্য বাহারের শতাধিক নেতাকর্মী ঐক্য পরিষদের মিছিলে ধাওয়া দেয়। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে মহানগর যুবলীগ। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর রানীর বাজার সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কুমিল্লা মহানগরীর রানীর বাজারে বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদের ব্যানারে প্রতিবাদ সভা আয়োজন করা হয়।

মুন্সিগঞ্জের মেয়র ফয়সাল বিপ্লবের স্থানীয় সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসকে উদ্দেশ্য করে সাম্প্রদায়িক গালিগালাজ, কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহারের দুর্গাপূজা কটাক্ষ করে বক্তব্য, কুড়িগ্রামে চারণকবি রাধাপদ রায়ের ওপর হামলা, বিভিন্ন জায়গায় মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের প্রতিবাদ এবং শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি ৩ দিন করার দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সভায় ঐক্য পরিষদের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তাপস বকসী সাম্প্রদায়িক শক্তির নিন্দা করে বক্তব্য দেন।

কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মিছিল। ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে নগরীর রামঘাট দলীয় কার্যালয় থেকে 'শান্তি মিছিল' বের করে কুমিল্লা মহানগর যুবলীগ। সদর আসনের সংসদ সদস্য বাহারের অনুসারী মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ শহীদ এতে নেতৃত্ব দেন। 

ঐক্য পরিষদের প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর কান্দিরপাড়ের দিকে রওনা দেয়। মিছিলটি রানীর বাজার সড়কের কর ভবন এলাকায় এলে পুলিশ তাদের থামিয়ে দেয়। তখন তারা সেখানেই সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। 

অপরদিকে যুবলীগের শান্তি মিছিল রানীর বাজার সড়কে এলে পুলিশ তাদের ফরিদা বিদ্যায়তন স্কুলের সামনে থামিয়ে দেয়। পরে তারাও সংসদ সদস্য বাহারের পক্ষে পাল্টা স্লোগান দিতে থাকে।

রানীর বাজারে উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি শ্লোগানের একপর্যায়ে যুবলীগের মিছিল থেকে ঐক্য পরিষদের মিছিল লক্ষ্য করে ধাওয়া দেওয়া হয়। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।

যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ শহীদ নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে ঐক্য পরিষদের মিছিলে ধাওয়া দেয় ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

হামলায় ঐক্য পরিষদের ২ জন আহত হন। তারা কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আতিকুল্লাহ খোকন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ষড়যন্ত্রকারীদের ওপর হামলা করেছে যুবলীগের কর্মীরা। যারা ষড়যন্ত্র চায়, তারা সংসদ সদস্য বাহারের বক্তব্যের খণ্ডাংশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তিনি কোনো এক ধর্মের এমপি নন। তিনি সবার জন্য কথা বলেন।'

যোগাযোগ করা হলে সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন বাহার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে আজ সকালে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ও বিকালে মহানগর আওয়ামী লীগের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রাখার শান্তি সমাবেশে ছিল। সকালে হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের নামে উস্কানিমূলক স্লোগান দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পুলিশ সেখানে হস্তক্ষেপ করে।'

হামলায় আহত ঐক্য পরিষদের ২ জনকে দেখতে হাসপাতালে যান কুমিল্লার জেলা প্রশাসক এম মুসফিকুর রহমান ও পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান।

জানতে চাইলে পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশ উভয় পক্ষকে বাধা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ আরও কঠোর হবে।'

উল্লেখ্য, গত ৪ অক্টোবর কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি উপলক্ষে আয়োজিত সভায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাদকমুক্ত পূজা উদযাপন করতে বলেন সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহাউদ্দিন বাহার। তিনি বলেন, 'আসুন কুমিল্লা থেকেই শুরু হোক মাদকমুক্ত পূজা আয়োজন। মণ্ডপে লিখে দেবেন "মাদকমুক্ত পূজা"।' তার এ বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

Comments