বিএনপি প্রতিশোধ নেবে, প্রতিরোধ করবে, তার মানে তারা ভায়োলেন্সে যাবে: কাদের

বিএনপির কোনো সভা-সমাবেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কখনো কোনো প্রকার হামলা বা আক্রমণ করেনি বলে দাবি করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানীর বনানী সেতু ভবনে সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা (বিএনপি) প্রতিশোধ নেবে, প্রতিরোধ করবে, তার মানে তারা ভায়োলেন্সে যাবে। দ্য অ্যানসার অব ভায়োলেন্স ইজ নট সাইলেন্স। দ্য অ্যানসার অব ভায়োলেন্স ইজ ভায়োলেন্স। মুক্তিযুদ্ধ, একাত্তরের চেতনা তারা ধারণ করে না। তারা সাতচল্লিশের চেতনা ধারণ করে। দ্বিজাতি তত্ত্বের যে কনসেপ্ট, সেটা তারা ধারণ করে।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ তারা পঁচাত্তরে নিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ তারা ১৫ই আগস্ট নিয়েছে, তারপর ২৩ নভেম্বরে নিয়েছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টও তারা সেই প্রতিশোধ নিয়েছে। প্রতিশোধ নেওয়ার তাদের যে লক্ষ্য, এটার শেষ কোথায়, এটা আমাদের বোধগম্য নয়। তাহলে তারা মাঝে মাঝে যে বলে, পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার, সেটাই তারা বিশ্বাস করে? তাদের এক জেলার নেতা প্রকাশ্যে বলেছে যে, শেখ হাসিনাকে এবার কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনাকে এবার কবরস্থানে পাঠানোই কি তাদের প্রস্ততি নেওয়ার শেষ লক্ষ্য? সর্বশেষ টার্গেট? সেটা জানতে চাই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা শান্তি সমাবেশ করব এবং এ পর্যন্ত আমরা অনেকগুলো শান্তি সমাবেশ ঢাকার বাইরে করেছি, এই নগরীতে সবচেয়ে বেশি করেছি। বিএনপিও সমাবেশ করেছে, বিক্ষোভ করেছে। তবে আমাদের প্রতিটি শান্তি সমাবেশ শান্তি সমাবেশই ছিল। আমরা কখনো বিএনপির কোনো সভা-সমাবেশের ওপর আওয়ামী লীগ কোনো প্রকার হামলা বা কোনো প্রকার আক্রমণ আমরা কখনো করিনি। এখন যদি তারা গায়ে পড়ে আমাদের ওপর আক্রমণ করতে আসে, তখন আমরা চুপচাপ বসে থাকব? আমাদের কর্মীরা কি তখন শান্ত থাকবে? শান্তি সমাবেশে যদি হামলা হয়, তাহলে কী হবে? কর্মীরা বসে থাকবে না। পাল্টা হামলা অবশ্যই করবে। আমরা তাদের সভাস্থলে গিয়ে তাদের হামলা করতে যাব না, এ পর্যন্ত আমরা এটা করিনি এবং এটা আমরা করব না।
'আমরা সরকারে, আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমরা অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই, আমরা নির্বাচনে শান্তি চাই, নির্বাচনের আগের পরিবেশটায় শান্তি চাই, শান্ত চাই এবং নির্বাচনের পরেও শান্ত চাই। কারণ আমরা দেশ চালাচ্ছি, আমরা গায়ে পড়ে অশান্ত হতে যাব কেন, আমরা উসকানি দেবো কেন? আমাদের কোনো প্রয়োজন নাই। পরিবেশটা শান্ত থাকলেই আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে পারব। শান্তিপূর্ণভাবে দেশটা চালাতে পারব।'
ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকের এই উন্নয়ন, তারা এগুলো স্বপ্নেও দেখেনি কোনোদিন, ভাবতেও পারেনি। তারা আন্দোলন করছে। আমরা একদিকে জনগণের জানমাল রক্ষায় রাজপথে সতর্ক পাহারায় আছি, অন্যদিকে আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রম। আজকে দেখুন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, শত সেতু, এরপর দেড়শ সেতু আমরা উদ্বোধন করেছি। এখন কর্ণফুলী টার্নেল, নদীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র টানেল হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল। এই টানেলের কাজও আমরা শেষ করেছি। আমরা উন্নয়ন করছি। আমরা কাজ করছি। আমরা শুধু আওয়াজ দিচ্ছি না, বক্তৃতা করছি না। আমরা উন্নয়ন করছি, আমরা কাজ করছি। তাদের সমালোচনার জবাব আমরা কাজ দিয়ে দিচ্ছি।
বিএনপির সমাবেশের দিনই আওয়ামী লীগের সমাবেশ দেওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা যাতে... ২০১৪ সাল, ২০১৫ সালে তারা যেটা করেছে, তারা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করতে চায়, তারা যদি সন্ত্রাস করতে আসে, আমরা সরকারে আছি, সরকারি দল হিসেবে জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব আমাদের আছে। সেজন্য আমরা অবস্থান নেই। আমরা তাদের ওপর আক্রমণ করি না।
২৮ অক্টোবর ঘিরে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে উল্লেখ করে তা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আতঙ্ক এ দেশে সব সময় থাকে... রাজনীতিতে আতঙ্ক-ভয়ভীতি থাকবেই। এর মধ্যেই তো বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই তো বাংলাদেশে সবকিছু হয়ে যাচ্ছে।
বিদেশি চাপের বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীর প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমি কোনো চাপের বিষয়ে অবগত নই। বিদেশি চাপ কেন থাকবে? আমাদের নির্বাচন আমরা করছি... নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হচ্ছে কি না, যেটা নিয়ে কথা আছে, অবাধ-নিরপেক্ষ হচ্ছে কি না, তারা পর্যবেক্ষক হিসেবে দেখতে পারে। চাপ দিবে কেন? চাপটা কেন হবে? আমরা তো নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করব, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করব। এখানে চাপ আসবে কেন? আমরা তো নির্বাচনটা একটা ভালো নির্বাচন করতে চাই।
'তলে তলে সমঝোতা হয়ে গেছে'—তার এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে তিনি চাইলে বলেন, রাজনীতিতে পলিটিক্যাল হিউমার একটা বিষয় আছে। যেমন আমি খেলা হবে বলি। এটা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাইম মিনিস্টার নরেন্দ্র মোদি যখন বলেন নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে, তখন তো ভারতের কেউ এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না। এত বড় দেশ। বাইরের কেউ এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না। এখন পলিটিক্যাল হিউমার আমি এই অর্থে বলছি যে, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী কন্যাকে (নিয়ে) যখন সেলফি তোলে দুইবার, তখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তারা কথা বলেছে, ভেতরে নিশ্চয়ই কোনো কথা ছিল। কথাবার্তা হয়েছে।
'আর এই যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সেলফি তোলা... এটা সুসম্পর্কের লক্ষণ। আমি সেটাই বোঝাতে চেয়েছি। এটা সুসম্পর্কের লক্ষণ হতে পারে। তা না হলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন কেন, কত নেতারা আসছেন, শেখ হাসিনা ও তার মেয়ের ছবি সেলফিতে কেন নেন। একবার না, দুইবার। আমি এটাকে বোঝাতে চাচ্ছি সুসম্পর্কের লক্ষণ। সেটা তো জানান দিয়ে, ঘোষণা দিয়ে হয় নাই। তারপরে সেখানে নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিজেই পরে বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা হয়েছে। সেটা কিন্তু তখন মার্কিন কোনো কর্তৃপক্ষই জানায় নাই... এখন ২৯ অক্টোবর মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছেন। আমি এখনো বলিনি। আমি বলেছি আমি জানাব। আপাতত এটুকুই।'
Comments