যেভাবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা

পল্টনে বিএনপির এক কর্মী। ছবি: স্টার

রাজধানীতে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ঘিরে ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। এসব চৌকিতে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

আজ শনিবার সকাল থেকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসতে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু ঢাকায় প্রবেশের সময় নয়, নিজ নিজ জেলা থেকে বের হওয়ার সময়ও অনেকে পুলিশি তল্লাশির মুখে পড়েছেন।

লালমনিরহাট সদর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. বিপ্লব হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি যেন সমাবেশে আসতে না পারি, সেজন্য কয়েকদিন আগে আমার বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের একটা গায়েবি মামলা দিয়েছে। তারপরও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসেছি।'

পল্টনে জড়ো হয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ছবি: স্টার

'আমি জানতাম আমাকে আটকাবে। তাই ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে লালমনিরহাট থেকে রওনা দিয়েছি। পথে পুলিশ আটকালে বলেছি চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকায় যাচ্ছি। সব সার্টিফিকেট নিয়েই বের হয়েছি বাড়ি থেকে', বলেন তিনি।

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, সমাবেশের আগের দিন পুলিশের তল্লাশি জোরদার হতে পারে বলে দুই দিন আগেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন অনেকে। ঢাকার হোটেলগুলোতে পুলিশের অভিযান চালাতে পারে বলে তারা চেষ্টা করেছেন আত্মীয়-স্বজনের বাসায় উঠতে।

রংপুরের ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি রায়হান শরীফ বলেন, 'রংপুর থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তল্লাশি করতে আটকায়। সেখানে বলেছি চাকরির পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি।'

তিনি বলেন, 'স্মার্টফোন সঙ্গে আনিনি। আনলেই নানা ধরনের সমস্যা করতে পারে। একটা বাটন ফোন নিয়ে এসেছি। সেখানেও শুধু পরিবারের মানুষগুলোর মোবাইল নম্বর আছে।'

পল্টনে বিএনপির এক কর্মী। ছবি: স্টার

দলটির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, যারা স্মার্টফোন সঙ্গে নিয়ে এসেছেন, তারা দলীয় নেতাদের ছবিসহ সব ধরনের তথ্য ডিলিট করে দিয়েছেন। এমনকি অনেকে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপও ডিলিট করে দিয়েছেন, যাতে সেগুলো পুলিশ চেক করতে না পারে।

জামালপুরের সরিষাবাড়ী যুবদলের এক নেতা জানান, তারা তাদের মোবাইলে আওয়ামী লীগের নেতাদের ছবি ডাউনলোড করে এনেছেন। এমনকি পথে পুলিশ চৌকিতে আটকালে তারা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দিতেই ঢাকা যাচ্ছেন তারা।

সমাবেশের মধ্যে আরও সমাবেশ

আজ দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

এর আগে নয়াপল্টন ও এর আশেপাশের এলাকাজুড়ে দেখা যায় অসংখ্য ছোট ছোট সমাবেশ।

পল্টনে জড়ো হয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ছবি: স্টার

বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কখনো বক্তৃতা দিচ্ছেন, খাবার খাচ্ছেন।

ওই এলাকায় এমন অন্তত ৩০টি ছোট ছোট জটলা দেখা গেছে, যেখানে স্থানীয় নেতারা বক্তৃতা দিয়ে তাদের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখছেন।

তারা জানান, সমাবেশ শুরু হলেই তারা মূল মঞ্চের সামনে চলে যাবেন।

এর আগে সমাবেশ ঘিরে সব জেলা ইউনিটকে দেওয়া চিঠিতে বিএনপি বলেছে, নেতাকর্মীরা যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমাবেশে যোগ দেয় এবং সমাবেশের পরের দিন নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে। নেতাকর্মীদের ছোট দলে ভাগ হয়ে ঢাকা আসার ও বিএনপি কার্যালয়ের কাছাকাছি অবস্থিত হোটেলে অবস্থান না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমনকি নেতাকর্মীদের নিজ নিজ কর্মস্থলের আইডি কার্ড সঙ্গে রাখার পাশাপাশি বিএনপি নেতাদের ছবি বা নির্বাচনী প্রতীকসহ তাদের বিএনপি কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়, এমন কিছু না পরার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

দলটি তাদের নেতাকর্মীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারেও সতর্ক থাকতে বলেছে। কারণ ঢাকার প্রবেশপথে চেকপয়েন্ট ও গণপরিবহনে মোবাইল ফোনও চেক করা হতে পারে। ঢাকায় আসার পর নেতাকর্মীদের নয়াপল্টন কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের আশেপাশে ঘোরাঘুরি না করার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

2h ago