একই সমতলে
মাটির মানুষের জগতে হিংস্রতা ও হানাহানি দেখে আকাশের পাখির জগতে আশ্রয় নিয়েছিলেন চিন্তক আহমদ ছফা।
মানবজীবনের সঙ্গে বিহঙ্গজীবন ও উদ্ভিদজীবনের অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক নিয়ে রচিত 'পুষ্প, বৃক্ষ ও বিহঙ্গ পুরাণ' উপন্যাসে এই সাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক দেখিয়েছিলেন, একই গোত্রভুক্ত হয়েও খাবারের ভাগ নিতে কীভাবে দাঁড়কাকের জোট পাতিকাকদের তাড়িয়ে দেয়।
কাকের জগতেও এমন হিংস্রতা ও মাস্তানি দেখে তার উপলব্ধি ছিল—'মাটির মানুষের জগতে হিংস্রতা এবং হানাহানি দেখে আকাশের পাখির জগতে আমি আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখানেও হিংস্রতা এবং জাতিবৈরিতার প্রকোপ দেখতে পাচ্ছি।'
আবার মহাকবি আলাওলের মতো আহমদ ছফার মনেও এই বিশ্বাস জন্মেছিল যে, মনুষ্যশব্দ শ্রবণ করলে পাখির মনেও মনুষ্যজ্ঞান সঞ্চারিত হয়।
বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা এখনো হয়নি। বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীন নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দলগুলো সরকারের পদত্যাগের দাবিতে হরতাল, অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে।
এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই ১৫ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল ঘোষণার পর তা প্রত্যাখ্যান করে অবরোধ ও হরতালের মতো কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এর মধ্যেই চলছে ধরপাকড়, গণগ্রেপ্তার ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের মতো সহিংস ঘটনা।
এমন সংঘাতময় পরিস্থিতির শেষ কোথায় তা কেউ জানে না। এ অবস্থায় উপরের ছবিটি দেখে এই প্রশ্ন উঠতেই পারে যে—পাখিদের মধ্যেও কি এই সংঘাত সঞ্চারিত হলো? এই চিত্র কি বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক অবস্থাকেই নির্দেশ করছে?
পাখির জগতে হিংস্রতা দেখে মানুষের মতো কর্তব্য পালনের জন্য আবার মানুষের জগতেই ফিরে এসেছিলেন আহমদ ছফা। লিখেছিলেন, 'ভাল হোক, মন্দ হোক, আনন্দের হোক, বেদনার হোক আমাকে মানুষের মতো মানুষের সমাজে মনুষ্যজীবনই যাপন করতে হবে। মনুষ্যলীলার করুণ রঙ্গভূমিতে আমাকে নেমে আসতে হবে।'
কিন্তু কথা হচ্ছে—বরাবরের মতোই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পালাবদলের সময় একই ধারাবাহিকতায় সৃষ্ট এমন রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? কার কাছে যাবে?
জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছে দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী পলাশ খান।
Comments