রাজনীতি

নির্বাচন উপলক্ষে ছোট হচ্ছে মন্ত্রিসভা, পদত্যাগ করছেন উপদেষ্টারাও

জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে মন্ত্রিসভা ছোট হচ্ছে। পদত্যাগ করছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারাও। সরকারের একাধিক উচ্চ পর্যায়ের সূত্র, মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে মন্ত্রিসভা ছোট হচ্ছে। পদত্যাগ করছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারাও। সরকারের একাধিক উচ্চ পর্যায়ের সূত্র, মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান রোববার রাতে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।' অন্যদিকে মন্ত্রিসভার দায়িত্বশীল এক মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, মন্ত্রিসভার টেকনোক্র্যাট সদস্যদের পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

টেকনোক্র্যাট সদস্যদের পদত্যাগের ব্যাপারে এক প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'তাদেরকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে, এটা জানি, কিন্তু উপদেষ্টাদের বিষয়টি জানি না।'

মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট সদস্যদের মধ্যে আছেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং পরিকল্পনার প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।

অন্যদিকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে আছেন ছয় জন। তারা হলেন, অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান, বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান।

(বামে থেকে) প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান, বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ। ছবি: সংগৃহীত

উপদেষ্টাদের মধ্যে সালমান ফজলুর রহমান বাদে অন্য পাঁচজন অনির্বাচিত (সংসদ সদস্য নন)। তাই বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টাকে তার পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে কিনা তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তফসিল ঘোষণার চার দিনের মাথায় টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের পদত্যাগ করতে বলা হলো। তবে মন্ত্রিসভায় থাকা অন্য মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদের মধ্য থেকে কাউকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছিল। বর্তমান মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীসহ ৪৭ জন সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে মন্ত্রী ২৫ জন, প্রতিমন্ত্রী ১৯ জন এবং উপমন্ত্রী তিন জন। সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রিসভার এক-দশমাংশ অর্থাৎ দশভাগের একভাগ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের বাইরে থেকে নেওয়ার সুযোগ আছে।

সংবিধানের ৫৬ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে 'একজন প্রধানমন্ত্রী থাকিবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রী থাকিবেন।' একই অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুযায়ী 'প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীদিগকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দান করিবেন: তবে শর্ত থাকে যে, তাহাদের সংখ্যার অন্যূন নয়-দশমাংশ সংসদ-সদস্যগণের মধ্য হইতে নিযুক্ত হইবেন এবং অনধিক এক-দশমাংশ সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য ব্যক্তিগণের মধ্য হইতে মনোনীত হইতে পারিবেন।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সাল থেকে থেকে এটি টানা তৃতীয় মন্ত্রিসভা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে টেকনোক্র্যাটসহ ৩০ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টা পদত্যাগ করেছিলেন। তবে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয় বিশেষ কোনো নির্দেশনা নেই। নির্বাচনকালীন সময়ে মন্ত্রিসভার আকার কেমন থাকবে সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাধীন।

Comments