আসন বণ্টন নয়, জাপা ও ১৪ দলের সঙ্গে রাজনৈতিক আলাপ হয়েছে: কাদের
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন বণ্টন নিয়ে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি জানান, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
কাদের বলেন, 'আজ সকালে মুরগির বাচ্চাবাহী একটি কাভার্ড ভ্যান সিরাজগঞ্জে পোড়ানো হয়েছে। এতে সাত হাজার মুরগির বাচ্চা পুড়ে গেছে। এখন মুরগির বাচ্চাও ওদের শত্রু। মুরগির বাচ্চাও ওদের টার্গেট। নাশকতা, গুপ্ত হামলার আজকে যে ভয়াবহ চিত্র সেটা নতুন নতুন রেকর্ড স্থাপন করছে। গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৬০০ যানবাহন পোড়ানো-ভাঙচুর, ১০টি রেলে আগুন দেওয়া হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'বিএনপির আন্দোলন ও অগ্নি সন্ত্রাসে পুলিশ বাহিনীর সদস্য, পরিবহন শ্রমিক, রাজনৈতিককর্মীসহ কয়েকজন মৃত্যুবরণ করার পাশাপাশি আড়াই শতাধিক মানুষ মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। এই নৃশংস রাজনীতি মাঝে মাঝে আমাদের মনে করিয়ে দেয়, গাজায় ইসরায়েলের যে হামলায় এ পর্যন্ত ১৬ হাজার মানুষ রক্তাক্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। এর মধ্যে ছয় হাজার বাচ্চা।
'এরা যখন মুরগির বাচ্চাকে টার্গেট করেছে, তখন এদের গুপ্ত হামলার টার্গেট আরও বিস্তৃত হতে পারে। আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, নির্বাচন বানচালের জন্য এরা ততই মরিয়া হয়ে উঠছে এবং মরণ কামড় দিচ্ছে,' বলেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি আরও বলেন, 'সে কারণেই আমরা আজকে নির্বাচনমুখী যেসব রাজনৈতিক দল আছে; যাদের সঙ্গে আগে আমাদের জোট ছিল-মহাজোট ছিল, তাদের সঙ্গে আমরা আমাদের সহযোগিতা, আমাদের সম্পর্ক আরও জোরদার করার তাগিদ অনুভব করছি। যে কারণে ১৪ দলের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। আমরা জাতীয় পার্টির সঙ্গেও আলোচনা করেছি।
'সেটার মূল বিষয়টাই ছিল যে, নির্বাচনটাকে অবাধ, শন্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠু করার জন্য যারা নির্বাচনমুখী, তাদের নিয়ে আমরা সমন্বিতভাবে-ঐক্যবদ্ধভাবে গুপ্ত হামলা, নাশকতা, নির্বাচনবিরোধী অপকর্মকে আমরা প্রতিহত করব ভোটারদের নিয়ে। এটাই আসলে আমাদের আলাপ-আলোচনার মূল বিষয়; যেটা রাজনৈতিক,' যোগ করেন তিনি।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক নিয়ে লুকোচুরি কেন জানতে চাইলে কাদের বলেন, 'লুকোচুরি নেই। এটা নিয়ে এত ঢাকঢোল পেটানোর কী আছে! নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী যে রাজনৈতিক দল, এদের মধ্যে একটা সমন্বয় থাকা দরকার। কারণ নির্বাচনবিরোধী শক্তি যে অপরাজনীতি করছে, এটা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের মধ্যে সমন্বয়, একটা ঐক্য দরকার। কারণ নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করা, গ্রহণযোগ্য করা অবাধ ও সুষ্ঠু করার অঙ্গীকার আমাদের রয়েছে। সে জন্য আমরা নিজেরা আলাপ-আলোচনা করছি। এখানে লুকোচুরির কোনো ব্যাপার না।'
আসন বণ্টন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাদের বলেন, 'সিটা ভাগাভাগি আমাদের আলোচনায় ছিল না। আমরা রাজনৈতিক আলোচনা করেছি। নির্বাচনটা যাতে ভালোভাবে হয়।'
বাংলাদেশ নিয়ে আওয়ামী লীগ নতুন করে কোনো ষড়যন্ত্র দেখছে কি না—গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'বাংলাদেশের ব্যাপারে এখন অনেকগুলো বিবৃতি দেওয়ার ব্যাপার ছিল কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব দেশ এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে বিরূপ বক্তব্য দেওয়া বা চরম পন্থায় যাওয়া; এ নিয়ে বিভেদ আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে টানাপোড়েন আছে। বিদেশে আমরাও তো বন্ধুহীন নই! আমাদেরও বন্ধু আছে। বাংলাদেশের সব খোঁজ-খবর তারাও রাখে। তারাও জানেন এখানে কী অবস্থার মধ্যে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্বাচন করে যাচ্ছেন, নির্বাচনের পথে হাঁটছেন। দেশটা যাবে বিশৃঙ্খলার আবর্তে ডুবে না যায়, ভেসে না যায়। সে জন্য এটা আমাদের জাতীয় পবিত্র কর্তব্য। সে কর্তব্য আমরা পালন করে যাচ্ছি।'
জাতীয় নির্বাচনে যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী। নেতাদের কারণে কর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়ছে। ভবিষ্যতে এটা বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন—জানতে চাইলে কাদের বলেন, 'বিষফোঁড়া কেন হবে আমি জানি না। এটা আমাদের নির্বাচনী রণকৌশল। এখানে আমাদের নির্বাচনকে অর্থবহ করতে হবে। মোটা টার্ন-আউটের ব্যাপার আমরা মাথায় রাখছি। এটা একটা ফেয়ার কম্পিটিশন হবে। এখানে তো সংঘাত-মারামারির বিষয় নেই।
'নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন যে, স্বতন্ত্র যারা করতে চায় তারা করবে। এতে আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা কোনো ভিন্ন অবস্থান নেইনি। আমরা মনে করি, ফেয়ার কম্পিটিশনে যে জিতে জিতবে। অসুবিধা কী, স্বতন্ত্র হলে তার জেতার অধিকার নেই,' প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'আমরা দলগতভাবে অবশ্যই দলকে বেছে নেব প্রথমে। কারণ দলই আমাদের কাছে মূল ব্যাপার। স্বতন্ত্রদের দেওয়া হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য। যদি জনগণের ভোটে তারা এগিয়ে যায়, সেখানে আমাদের কী করার আছে?'
নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে কি চুপিসারে আওয়ামী লীগ সমঝোতায় যাচ্ছে অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা আলোচনার সুবিধার্থে; এখন আমরা একটা বৈঠক করছি, এ রকম বৈঠকে দলীয় নেতাকর্মীদেরও আগ্রহ থাকতে পারে। অনেকে ভিড় জমাতে পারে। এটাকে আমরা এড়াতে চেয়েছি।'
জাতীয় পার্টির সঙ্গে আপনারা জোটগতভাবে নির্বাচনে যাচ্ছেন নাকি আলাদা যাচ্ছেন জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'আমরা কথা-বার্তা বলছি। আমরা এ ব্যাপারে আলাপ করিনি, এ জন্য সিদ্ধান্ত হয়নি।'
আরেক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছা করলেই কোনো কিছুর ব্যাপারে আমাদের ওপর একতরফা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের যে বন্ধুরা আছে এই এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায়, ইউরোপে, সেই বন্ধুরা কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাপারে চরম কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষপাতী এখন আর নয়। এটাই আমরা জানি।
Comments