আ. লীগ নিষিদ্ধের জন্য পাড়ায়-মহল্লায় জনতার আদালত তৈরি করব: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই সনদ কার্যকর করতে হবে এবং সনদে স্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা থাকতে হবে।

গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার, দলটির নিবন্ধন বাতিল এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে আজ শুক্রবার বিকেলে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে এনসিপির বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

নাহিদ বলেন, 'জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নয় মাস পরেও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে আমাদের রাজপথে নেমে আসতে হচ্ছে, আমাদেরকে রাজপথে কথা বলতে হচ্ছে। এটা আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতা বলেই আমরা মনে করি।'

তিনি আরও বলেন, 'জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে অংশ নিয়েছিলাম সেই সরকারের কাছে আমাদের অন্যতম দাবি ছিল জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ১৬ বছরের ফ্যাসিজম স্বৈরাচারের বিচার নিশ্চিত করা।'

নাহিদ ইসলাম বলেন, '১৯৯০ সালের গণভুত্থানের পর স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় ৩০ বছর পর বাংলাদেশের জনগণকে আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে নামতে হয়েছিল। কারণ ওই গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছিল সেই প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করেনি।'

'গত ১৬ বছরেও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে জনগণ রাজপথে নেমে আসেনি। বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রাজপথে নেমে এসেছিল ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে,' যোগ করেন তিনি।

এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, 'আওয়ামী লীগ স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিল তিনটি ভোটে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে, হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। তারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছিল। শাপলায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, মোদি-বিরোধী আন্দোলনে তারা হত্যাকাণ্ড এবং দমন-পীড়ন চালিয়েছিল। জনগণের ওপর তারা এই দেশের পুলিশকে দিয়ে, সেনাবাহিনীকে দিয়ে, বিজিবিকে দিয়ে গুলি চালিয়েছিল।'

তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার আর কোনো আলোচনার প্রশ্ন থাকে না। এজন্য আমরা বলছি যে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করে তার রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম বিচার চলা পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।'

'কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে দেখছি আওয়ামী লীগের যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে আওয়ামী লীগ তৃণমূলে পুনর্বাসিত হওয়ার পরিকল্পনা করছে,' বলেন তিনি।

'আমরা দেখতে পাচ্ছি নির্বাচন কমিশন গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের লোকদের প্রার্থিতা অযোগ্যতা ঘোষণা করতে সম্মতি দিচ্ছে না। তারা বলছে যে, এটি নাকি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমরা সন্দেহ প্রকাশ করছি এই নির্বাচন কমিশন কার পারপাস সার্ভ করবে,' যোগ করেন নাহিদ ইসলাম।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা দুঃখের সঙ্গে দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন মিডিয়ায় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করছে, শেখ হাসিনা গণহত্যাকারী, সেটা কি প্রমাণিত হয়েছে কি হয় নাই? সেই সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা সাংবাদিক নন আপনারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর।'

'জাতিসংঘের রিপোর্ট স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের নির্দেশে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনায় জুলাই-আগস্টে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। তাই আজকের এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, অবিলম্বে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে, নৌকা মার্কাকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে,' বলেন তিনি।

'জুলাই ঘোষণাপত্রের' উল্লেখ করে এই তরুণ নেতা বলেন, 'আমরা জুলাইকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কারণে সেই জুলাই ঘোষণাপত্র এখনো আসছে না। আমরা বলতে চাই অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে এবং আমরা যে জুলাই সনদের কথা বলছি, যে মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল পরিবর্তন শাসন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে মৌলিক সংস্কারের উদ্দেশ্যে জুলাই সনদ কার্যকর করতে হবে এবং জুলাই সনদে সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা থাকতে হবে।'

গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'দ্রুত সময়ের মধ্যে শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে। তাদের মানবিক মর্যাদা নাগরিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা জানি আমাদের হাতের সময় অল্প, কিন্তু আমাদের দায়িত্ব অনেক। আমরা বিশ্বাস করি আগামীতে এনসিপির ওপরই জনগণ আস্থা রাখছে।'

এনসিপি দ্রুত সংগঠিত হবে জানিয়ে নাহিদ বলেন, 'আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি শৃঙ্খলিত দল হিসেবে জনগণের কাছে পৌঁছে যাব। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে যাব। প্রতিটি দরজায় গিয়ে এনসিপির বার্তা পৌঁছে দেবো। আপনারা প্রস্তুত হন। জেলায় জেলায়, ইউনিয়নে ইউনিয়নে, পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় আমরা আসছি এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জন্য আমরা জনতার আদালত তৈরি করব।'

'যদি এই সরকার বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয় তবে আমরা বসে থাকব না। জনতার আদালতে আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিজমের বিচার নিশ্চিত করা হবে। যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এবং যেই সেকেন্ড রিপাবলিক গঠনের উদ্দেশ্যে আমরা এনসিপি গঠন করেছি, আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং জলবায়ু এবং প্রযুক্তির জন্য একটি নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করব এবং মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে একটি নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠা করব,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

World press freedom day: 266 journalists face criminal cases so far

The repression of journalists has taken a new form since August 5, 2024.

7h ago