আওয়ামী লীগ ছাড়া কারো বাসযোগ্য নেই দেশ: রিজভী

রিজভী বলেন, নেতাকর্মীদের যাদের পক্ষে সম্ভব তারা আগামীকাল সকাল ৭টার মধ্যে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ যাবেন। সেখানে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ হবে এবং পরে দুপুর ১টায় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শুরু হবে বিজয় র‍্যালি।
রুহুল কবির রিজভী। ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশ কারও বাসযোগ্য নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ের বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।

রিজভী বলেন, 'আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে বিনা ভোটে অটোপাস এবং ২০১৮ সালে মধ্যরাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এলেও, এবার আর কোনো রাখ-ঢাক নেই তাদের। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে প্রকাশ্যে আসন বাটোয়ারা করে যাচ্ছেন।'

তিনি বলেন, 'শেখ হাসিনার পরিষদবর্গ-দলদাস-আজ্ঞাবহরা ব্যস্ত কীভাবে পাতানো নির্বাচন নিয়ে জনগণ ও বিদেশিদের চোখে ধুলো দেওয়া যাবে। একদল উচ্চ শিক্ষিত তথাকথিত আত্মা ও ব্যক্তিত্ব বিক্রি করা বুদ্ধিজীবী ব্যস্ত নির্বাচনে নৌকা জিতবে কত আসনে সেই হিসাব নিয়ে। প্রশাসন ব্যস্ত কীভাবে নির্বাচন করলে জনগণ বুঝতে পারবে না যে, এটা পাতানো নির্বাচন সেই কৌশল নিয়ে।'

'ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ব্যস্ত শেখ হাসিনার হাতে জিম্মি জনগণের মহাবিপদের সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কীভাবে বাড়ানো যায়, সেই কৌশল নিয়ে। আর জনগণ লড়াই করছে জীবন বাঁচানোর যুদ্ধে। এর মধ্যে ধেয়ে আসছে প্রলয়ঙ্করী বিপর্যয়। বেপরোয়া ও নজিরবিহীন আওয়ামী লুটপাটে ধ্বংস হয়ে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি,' যোগ করেন তিনি।

দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ৯ বিলিয়ন ডলারে নীচে, প্রথম আলো পত্রিকার এমন একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এক সপ্তাহ আগে বলেছেন যে, আমরা বর্তমানে একেবারে তলানিতে এসেছি। আর তো নিচে নামার পথ নেই। বিদেশি ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।'

'এ অবস্থায় কার্যত দেউলিয়াত্ব ঘোষণার অপেক্ষা মাত্র' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সারা দেশ ধাবিত হচ্ছে নিশ্চিত ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির দিকে। লুটপাট ও দুর্নীতি করে ব্যাংকিং সেক্টর ফোকলা করে দিয়েছে আওয়ামী লুটেরা গোষ্ঠী। টাকার ঘাটতির কারণে দেশের শরিয়াহভিত্তিক ৫ ব্যাংকের আর্থিক লেনদেন সেবা বন্ধের উপক্রম। দেশের জনগণ জানে, এই ব্যাংকগুলো শেখ পরিবারের ক্যাশিয়ার হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত। একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার সহযোগিতায় শরিয়াহভিত্তিক  লাভজনক ব্যাংকগুলোর মালিক, চেয়ারম্যান, পরিচালকদের চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে দখলের ইতিহাস রীতিমত রোমহর্ষক।'

মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকটের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, 'অর্থ পাচার করে বিদেশে গাড়ি বাড়ি ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। সিঙ্গাপুরসহ দেশে দেশে শ্রেষ্ঠ ধনীর তালিকাভুক্ত হচ্ছে। দেশে-বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছে। আর অন্যদিকে গরিব আরও গরীব হচ্ছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, করোনা উত্তরকালে প্রায় ৪ কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চমূল্যের যাঁতাকলে মানুষের নাভিশ্বাস। অর্থনীতি আজ মহাসংকটে নিমজ্জিত। রাষ্ট্রযন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়েছে।'

'আওয়ামী লীগ ছাড়া কারো বাসযোগ্য নেই দেশ' মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'দুর্ভিক্ষের এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হলে প্রতিটি মানুষকে রাজপথে নেমে মাফিয়া সরকারের ক্ষমতায় থাকার সিলমোহরের নির্বাচন বানচাল করে দিতে হবে। এখন আর কারো ঘরে বসে থাকার পরিস্থিতি নেই। প্রতিবাদে নামতেই হবে।'

রিজভী বলেন, সবকিছু উজাড় করে দেওয়া শেখ হাসিনা সরকারকে জোড়াতালির ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের পরিকল্পনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করে বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশের দেশের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের সময়ের মতো আগামী ৭ জানুয়ারির ভাগ বাটোয়ারার নির্বাচনের আগে জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা করছে।'

তিনি বলেন, 'এ দেশের মানুষ ধর্মভীরু, কিন্তু উগ্র নয়। দেশের অসংখ্য ছেলেমেয়ে ইসলাম ধর্মের শিক্ষা নিতে কওমি, আলিয়া, সুন্নি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। এখন পর্যন্ত এসব মাদ্রাসায় কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ড কিংবা সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেখা যায়নি। অথচ আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রলীগ বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো চর দখলের মতো দখল করে রেখেছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ফেসবুকে ভারতবিরোধী লেখার জন্য বুয়েটের ছাত্র আবরারকে হত্যা করেছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর বারবার হামলা করে তাদের আহত করেছে।'

এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, 'এভাবে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা দেশের আপামর জনসাধারণকে জিম্মি করে রেখেছে। অথচ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রকৃত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করে, পাশের দেশের নির্দেশনায় জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টায় মরিয়া।

'শুধু ফ্যাসিস্ট সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে দেশের ইসলামপ্রিয় আলেমদের বিশ্বে জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে আহ্বান করছি আপনারা শেখ হাসিনা ও তার প্রভুদের প্রপাগান্ডাকে বিশ্বাস না করে আওয়ামী লীগের একতরফা সাজানো ডামি নির্বাচন নিয়ে সোচ্চার হোন এবং এ দেশের জনগণের একান্ত চাওয়া গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন,' যোগ করেন তিনি।

বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'রাষ্ট্রীয় অর্থের বিনিময়ে খরিদ করা কুইনস পার্টি, ভূঁইফোড় পার্টি, তৃণভোজী পার্টি, ডামি পার্টি এবং বিভিন্ন দল থেকে লোকজন হায়ার করে কথিত নির্বাচনী নাটক মঞ্চস্থ করার তামাশায় কেউ কোনোভাবে অংশ নেবেন না। ভোটকেন্দ্রে যাবেন না, ভোট দেবেন না। "আমরা আর মামুরা" মার্কা এই নির্বাচনের প্রার্থী বা তাদের পক্ষের লোকদের ত্যাগ করুন। বিএনপি বা অঙ্গ-সংগঠনের কোনো নেতাকর্মীকে যদি ভুয়া নির্বাচনের কোনো প্রার্থীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, প্রচার-প্রচারণায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অংশগ্রহণ বা সমর্থন বা ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

আগামীকাল বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা করে রিজভী বলেন, 'নেতাকর্মীদের যাদের পক্ষে সম্ভব তারা আগামীকাল সকাল ৭টার মধ্যে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ যাবেন। সেখানে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং পরে দুপুর ১টায় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শুরু হবে বিজয় র‍্যালি।'

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির আয়োজনে এ বিজয় র‌্যালি মগবাজার গিয়ে শেষ হবে বলে জানান তিনি।

Comments