একজন লন্ডন বসে হুকুম দেয়, এখানে কিছু চ্যালা আগুন দেয়: প্রধানমন্ত্রী

‘এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে জনগণকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, এটাই বাস্তবতা।’
sheikh_hasina
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন ও ভোট দিতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বুধবার দুপুরে সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার জিয়ারত শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'আমার তো বার্তা একটাই। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার যে স্বপ্ন আমার বাবা দেখেছেন, আমি সেটাই করতে চাই। আর আমরা নির্বাচনী প্রচারকাজ শুরু করেছি এবং আজকে আমরা এখানে এসেছি। হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগা ও শাহপরাণের দরগা আমরা জিয়ারত করব। এখানে জনসভা করব। এরপর আরও কয়েকটি জনসভা করব। আর তা ছাড়া এবার ভিডিও কনফারেন্সিং করেও অনেক জেলায় আমরা যোগাযোগটা রাখব, করব। কারণ ডিজিটাল বাংলাদেশ, সেটা তো করতে হয়। আমার একটাই কথা, আওয়ামী লীগ সরকার আসলে জনগণের কল্যাণ হয়। ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেছিলাম। বাংলাদেশের জনগণ ২০১৪ সালে আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। ২০১৮ সালে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে।'

তিনি বলেন, 'আজকে এই যে সিলেটে আমি এসেছি, এই সিলেটে কিন্তু এখন আর কোনো ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষ নেই। প্রত্যেকটা ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে আমরা ঘর করে দিতে পেরেছি। কমিউনিটি ক্লিনিক দিয়েছি তাদের চিকিৎসার জন্য। অর্থাৎ মানুষের যে মৌলিক চাহিদাগুলি, সেগুলো আমরা পূরণ করে যাচ্ছি এবং যেটুকু বাকি আছে, ইনশাআল্লাহ আগামীতে নির্বাচন ৭ জানুয়ারি, বাংলাদেশের জনগণ যদি নৌকা মার্কায় ভোট দেয়, আবার যদি সরকার গঠন করতে পারি, পুরো বাংলাদেশটাকেই আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ করব। আর কোনো মানুষই ঠিকানাবিহীন থাকবে না, গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। এটাই আমাদের নিয়ত। আর কিচ্ছু না। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে বাংলাদেশটাকে উন্নত-সমৃদ্ধ করা। ইতোমধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। কিন্তু সেটাকে কার্যকর করতে হবে। আমি জানি আমাদের সরকার আসলে পরেই এটা কার্যকর হবে।'

'আরেকটা কথা হচ্ছে, যারা নির্বাচন করবে না, করবে না। কিন্তু আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা, আগুন দিয়ে, সরকারি সম্পত্তির মালিক, এটা তো জনগণের সম্পত্তি। নতুন নতুন কোচ কিনে নিয়ে এনেছি, নতুন রেল, সেই রেললাইন তুলে ফেলে অ্যাক্সিডেন্ট করে মানুষ হত্যা করা, এটা তো সম্পূর্ণ সন্ত্রাসী কাজ, জঙ্গিবাদী কাজ। আর সেই সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী কাজ করে যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে। কারণ বিএনপির তো এই একটাই, আমরা ২০১৩ সালে দেখেছি, ২০১৪-তেও দেখেছি, মানুষ পুড়িয়ে মারা। এটা কোন ধরনের আন্দোলন? গতকালকে যে ঘটনাটা ঘটল, তারা তো হরতাল দিয়েছে, দেশের মানুষ তো হরতাল মানেও নাই। তাদের ডাকে কোনো সাড়াই দেয়নি। এটা তাদের বোঝা উচিত, এই দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, ভোট দিতে চায়। আমরা ভোটের জন্য সব সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিয়েছি, আমাদের দলকেও যে, ঠিক আছে, সবাই দাঁড়াবে, সবাই কাজ করবে, জনগণ যাকে বেছে নেবে, সেটাই।'

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কিন্তু সেখানে আমরা কী দেখলাম? রেলে আগুন দিলো। একটা মা সন্তানকে নিয়ে সেই আগুনে পুড়ে মারা গেল। মা সন্তানকে কিন্তু বুকের মধ্যে চেপে রেখে দিয়েছে। মানে এরচেয়ে কষ্টের সিন বোধ হয় আর কিছু হতে পারে না, কষ্টের দৃশ্য আর হতে পারে না। কী করে একটা মানুষ এভাবে করতে পারে? আজকে নারী, শিশু, পুলিশের ওপর হামলা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, চিফ জাস্টিসের বাড়িতে হামলা, জজ কোর্টে হামলা, জনগণের ওপর হামলা, এসব কোন ধরনের রাজনীতি। জনগণের কাছে তাদের কর্মসূচি নিয়ে যাবে, জনগণ যদি তাদের ডাকে সাড়া দেয়, তখন আসবে। কিন্তু মানুষকে মেরে একটা ভীতি সৃষ্টি করে তারা নির্বাচন বানচাল করছে। তাদের অভিজ্ঞতা নাই, তারা চেয়েছে সেটা পারেনি, ২০১৪ সালে পারেনি, তাহলে আবার কেন এই আগুন দিয়ে পোড়ানো?

'আর বেশ ভালোই খেলা চলছে। একজন লন্ডন বসে হুকুম দেয়, আর এখানে তার কিছু চ্যালা আছে আগুন দেয়। বাংলাদেশ নিয়ে এইভাবে খেলা, দুর্বৃত্তপরায়ণতা বাংলাদেশের মানুষের কেউ মেনে নেবে না। সেটাই আমরা চাই। মানুষ এত শান্তিতে ছিল, আজকে এত কষ্টের পরেও, কোভিড হলো, ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন, সবকিছুর পরেও আমরা তো আমাদের অর্থনীতিটা ধরে রেখেছিলাম। মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা, ভর্তুকি দিয়ে দিয়ে আমরা তাদের জন্য খাবার কিনে নিয়ে এসে তাদের দিচ্ছি, সব রকম ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। রাস্তাঘাট সবকিছুই তো উন্নতি করেছি। কোথায় কোন জায়গাটা আমরা বাদ রেখেছি? আমাদের বিরুদ্ধে এখন আন্দোলন করার নাম দিয়ে তারা এভাবে দুর্বৃত্তপরায়ণতা করছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে।'

শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু আমি বলব যে, এই জিনিসটা তুলে দেওয়া উচিত যে, ভোট জনগণের অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার। সেই ভোট জনগণ দেবে। সেই ভোট দিতে জনগণ আসবে, তাদের বাধা দেওয়া, তাদের খুন করা, এই অধিকার কারো নাই। এটা বাংলাদেশের কেউ মানবেও না। এটা যারা করবে, তারা একদিন, আমি মনে করি এদেশের মানুষ তাদের উৎখাত করবে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '(যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে, তাদের বিরুদ্ধে) আমরা যথেষ্ট কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। সমস্ত জায়গায় আমরা পরিকল্পনা করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই যে হঠাৎ হঠাৎ একেকটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলা, এই ঘটনাগুলো যারা এভাবে ঘটাচ্ছে... যারা এই অগ্নিসন্ত্রাসে জড়িত, যারা হত্যা করেছে, কারো ক্ষমা নাই। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবোই।'

অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি  বলেন, 'তারা (বিএনপি) নির্বাচন বানচাল করতে চায়। মানুষকে ভোট দিতে দেবে না। মানুষ কিন্তু ভোটের পক্ষে। মানুষ নির্বাচনের পক্ষে। মানুষ তো তাদের হরতালে সাড়া দিচ্ছে না। মানুষ বরং ভোটের মিছিলে যোগ দিচ্ছে। তাহলে এরপরেও কেন আবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, সেটাই আমার প্রশ্ন। এতে তাদের কী অর্জন হবে? হয়তো মানুষের দ্বারা আরও ধিক্কৃত হবে।'

বিদেশে বসে যারা এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ইন্ধন দিচ্ছে, তারা কি সফল হবে—এমন প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, 'কোনোদিন সফল হবে না, হতে পারে না। এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে জনগণকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, এটাই বাস্তবতা।'

Comments

The Daily Star  | English

Students back to school even as Met office extends heat alert

All primary and secondary schools, as well as colleges, reopened today after a long break that included the Eid-ul-Fitr and Pahela Baishakh holidays, and a week off due to the ongoing heatwave

18m ago