রাজনীতি এখন দুর্বৃত্তদের হাতে বন্দি: সিপিবি

সিপিবি
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতারা বলেছেন, রাজনীতি যখন কেনাবেচা, ভাগবাটোয়ারা, আখের গোছানো এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, তখন নীতির প্রশ্নে আপসহীন থেকে শ্রমিক-কৃষক, মেহনতি মানুষের পার্টি সিপিবি মানুষ ও প্রকৃতির মুক্তির লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

সিপিবির ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আজ বুধবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নেতারা এ কথা বলেন।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম। বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ। এ সময় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান, অধ্যাপক এ এন রাশেদা, পরেশ কর, সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রেজা, কোষাধ্যক্ষ ডা. ফজলুর রহমানসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, 'বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সিপিবি সবচেয়ে অপসহীন ও মেহনতি মানুষের স্বার্থে যোগ্য রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আর এই শক্তি ও দৃঢ়তা অর্জন করেছে তার ৭৬ বছরের লড়াই-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে।'

তিনি আরও বলেন, 'স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আমরা বাংলাদেশে অনেক কিছুই দেখলাম। এখন রাজনীতি দুর্বৃত্তদের হাতে বন্দি। এরাই পালাক্রমে ক্ষমতা দখল করে আছে। এদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে গণতন্ত্রহীনতা, লুটপাটতন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধেও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ করে তুলতে হবে। কমিউনিস্ট পার্টিই একমাত্র জনগণের পক্ষের শক্তি এবং প্রকৃত বিরোধীদল। কারণ নীতির প্রশ্নে আমরাই তাদের বিরোধিতা করি এবং জনগণের পক্ষে কথা বলি।'

সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'ক্ষমতায় গেলে মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও সব মানুষের ভোটাধিকার গণতন্ত্র কাজ শিক্ষা চিকিৎসার অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে কমিউনিস্ট পার্টি। এ পর্যন্ত যারা পালাক্রমে শাসন ক্ষমতায় ছিল এবং আছে তারা মেহনতি মানুষকে অমর্যাদায় রেখেছে। সমভোটের অধিকারের কথা থাকলেও ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকার পাচারের টাকা উদ্ধার, খেলাপি ঋণ আদায় ও দুর্নীতি লুটপাট বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয় না। রাস্তাঘাট-হাটবাজারে ইজারা, ভূমি অফিসের দুর্নীতি, চাঁদাবাজি দৈনন্দিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে।'

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'ক্ষমতাসীনরা দেশটাকে আজ এমন জায়গায় নিয়ে গেছে, তরুণ প্রজন্ম দেশকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে না। তথ্যই বলছে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রাপ্ত তরুণ কাজ না করে অনির্দিষ্ট ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে। দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার চিন্তায় বিভোর তারা। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে এটি কাম্য হতে পারে না।'

তিনি সরকারের ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, 'কিছু ব্যবসায়ী ও কমিশনভোগীদের সুযোগ দিতেই বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদ গ্যাস, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থাকার পরও জ্বালানি খাতকে জাতীয় অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের গলার কাটায় পরিণত করা হয়েছে। সরকারের এই ভুলনীতি ও দুর্নীতির দায় জনগণের কাঁধে চাপিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে।'

তিনি গণতন্ত্র-ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'বিনা ভোটে নির্বাচিতরা কখনোই জনগণের স্বার্থে কাজ করবে না। তাদের জবাবদিহিতা থাকবে না। স্বচ্ছতা থাকবে না। তাই মেহনতি মানুষকে নিজেদের দাবির সঙ্গে সঙ্গে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের লড়াইয়ে শরিক হতে হবে।'

সমাবেশ শেষে একটি লাল পতাকা মিছিল পুরানা পল্টন, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল, দিলকুশা, গুলিস্তান, প্রেসক্লাব হয়ে পার্টি কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh rubber imports rise 33 percent FY25

Rubber imports rose 33% last fiscal year

Import reliance grows as domestic rubber supply chain faces disruption

15h ago