বাবা-মায়ের পর এবার ছেলেও জনপ্রতিনিধি
উপজেলা নির্বাচনে ছেলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় স্থানীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর দখল আরও মজবুত হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
২৬ বছর বয়সী নবীন রাজনীতিবিদ আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরী ৭০৩ ভোটে পরাজিত করেছেন বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুল আনাম চৌধুরী সেলিমকে।
পেশায় ব্যবসায়ী শাবাব একরামের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বশেষ জনপ্রতিনিধি হিসেবে জায়গা করে নিলেন। এই পরিবারের অন্তত ছয়জন সদস্য এবং নিকটাত্মীয় ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক পদ ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে আছেন।
একরামুলের স্ত্রী কামরুন নাহার শিউলী নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং তার ভাতিজা জহিরুল হক রায়হান কবিরহাট পৌরসভার মেয়র।
তার সৎ ভাই হাজী ইব্রাহিম কবিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। একরামুলের আরেক ভাই মোহাম্মদ ইলিয়াস কবিরহাট উপজেলার সুন্দলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
সম্প্রতি একরামুলের নির্বাচনী এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায়, সুবর্ণচরে নিজের নামে একটি বাজার—একরাম নগর—করেছেন সংসদ সদস্য একরামুল। সেখানে স্ত্রীর নামে একটি হাইস্কুল এবং ছেলের নামে একটি রাস্তা ও নদী ঘাটের নামকরণও করেছেন তিনি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে রাখা এই সংসদ সদস্য এখন তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে পারেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরপরই সুবর্ণচরের বিভিন্ন এলাকায় একরামুলের সমর্থকরা খায়রুলের অনুসারীদের ওপর হামলা চালায়। এতে তার অন্তত ১৫ সমর্থক আহত হয়।
দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ খান সোহেল বলেন, 'একরামুল করিম চৌধুরী সুবর্ণচরে "রাজনৈতিক রাজবংশ" কায়েম করতে চান। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা সত্ত্বেও তিনি তার ছেলেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করেননি। তিনি দলের শৃঙ্খলা ও নীতিরও তোয়াক্কা করেন না।'
স্থানীয়রা জানান, একরামুল তার অনুগতদের দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়েছেন এবং তার বিরোধিতাকারীরা রাজনীতিতে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছেন।
সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ চৌধুরী ২০২২ সালের চরজুবিলী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় টিকিট পেয়েছিলেন। কিন্তু ওই নির্বাচনে জয়ী স্বতন্ত্র সাইফুল্লাহ খশরুকে সমর্থন দেন একরামুল।
২০২১ সালে ছেলেকে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক করার প্রস্তাব দেন একরামুল। তবে সিনিয়র স্থানীয় নেতাদের বিরোধিতার কারণে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহার উদ্দিন খেলান বলেন, 'একরামুল করিম চৌধুরী এই উপজেলা নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তা নয়। যদি তার পছন্দের কাউকে দল মনোনয়ন না দেয়, তাহলে তিনি তার অনুগত ব্যক্তিকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামিয়ে দেন।'
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে নোয়াখালী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের টিকিট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী-৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান একরামুল।
স্থানীয়রা জানান, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৪ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরপরই একরামুল স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন।
এসব বিষয়ে মন্তব্য নেওয়ার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি কল রিসিভ না করায় মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
Comments