নির্বিচারে হত্যা করা হলো কেন, প্রশ্ন জিএম কাদেরের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহতদের কাউকে সরকার সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেনি। প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তাহলে নির্বিচারে হত্যা করা হলো কেন?

আজ বুধবার বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই প্রশ্ন তোলেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা।

তিনি বলেন, 'নির্বিচারে' এজন্যই বলছি, তারা যদি সন্ত্রাস দমন করতে চায় তাহলে আগে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে হবে। এরপর না হয় প্রতিহত করার প্রশ্ন আসে। কিন্তু বহুতল ভবন থেকে, হেলিকপ্টার থেকে যখন গুলি করা হয় তখন নিচে কে সন্ত্রাসী, কে ভালো মানুষ, কে শিশু, কে পথচারী তারা কীভাবে বুঝবে।

তার মানে হলো, তারা একটা ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে দমন নিপীড়নের মাধ্যমে তাদের মতামত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেই পরিস্থিতি থেকে দেশ এখানে উদ্ধার হয়নি।

জিএম কাদের আরও বলেন, সরকার এবং সরকারি দল রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে। রাষ্ট্র আমাদের সকলের। রাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, প্রতিরক্ষা বাহিনী রাষ্ট্রকে রক্ষা করবে, জনগণের অধিকার রক্ষায় কাজ করবে। সেখানে সরকারকে রক্ষার জন্য তাদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, প্রতিরক্ষাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যারা দেশ ও জনগণকে রক্ষা করবে তারাই জনগণের দিকে বন্দুক তাক করেছে। সরকার গদি রক্ষার জন্য যেটা করছে তা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি করেছে।

বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে দাবি করে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, দেশে অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে। আবারও জনগণ মাঠে নামবে, মানুষ মারা যাবে। এক সময় বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে সন্ত্রাসী জাতি হিসেবে চিহ্নিত হবে। আমি মনে করি এ থেকে উত্তরণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

জিএম কাদের বলেন, আমার জীবনে অনেক আন্দোলন সংগ্রাম দেখেছি কিন্তু সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে এরকম আন্দোলন হয় আগে দেখিনি। দীর্ঘদিন থেকে মানুষ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে, মানুষ নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। সব বৈষম্যের প্রতিবাদ জানাতে ছাত্রদের সঙ্গে জনগণ মাঠে নেমেছে।

তিনি আরও বলেন, সংঘর্ষের শুরু থেকে বিএনপি-জামায়াত বলে বলে সরকার যতবার যেভাবে প্রচার করুক না কেন, আমি ঢাকায় দেখেছি, মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, জনগণ সরকারের এ কথা গ্রহণ করেনি। এটি জনগণের সংগ্রাম। বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টির কেউ থাকলে তারা ব্যক্তিগতভাবে আন্দোলনে গিয়েছিল।

দল হিসেবে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে প্রশাসনিক আদেশে নিষিদ্ধ করা ঠিক নয়। জনগণ তাদের জন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষতিকর মনে করলে বয়কট করবে। এক সময় সেই রাজনৈতিক দল বিলীন হয়ে যাবে। জোর করে কিছু করলে তাদের যদি গ্রহণযোগ্যতা ও সাংগঠনিক কাঠামো থাকে, তাহলে তারা আন্ডারগ্রাউন্ড হবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এতে করে অস্বাভাবিক রাজনীতির বীজ বপণ হতে পারে।

কোটা আন্দোলন নিয়ে জিএম কাদের বলেন, মানুষকে হয়রানি, মামলা মোকদ্দমায় ফেলা হচ্ছে। মামলা দেওয়া হলো একজনকে পঙ্গু করে দেওয়া। মামলা হলে আদালতে যাওয়া, জামিন নেওয়া, মামলা মোকাবিলা করাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ছাত্ররা নিঃস্ব হয়ে যাবে। আমি ছাত্রদের নামে মামলা দেওয়ায় ঘৃণার সঙ্গে প্রতিবাদ জানাই। আওয়ামী লীগও এক সময় বিএনপি দ্বারা এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। তখন জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। 

এ সময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এসএম ইয়াসির, মহানগর জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহসভাপতি লোকমান হোসেনসহ জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

3h ago