সুযোগ এসেছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার, এই সুযোগ যেন হেলায় না হারাই: মির্জা ফখরুল

নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ আমাদের সামনে সুযোগ এসেছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। আমরা যেন এই সুযোগ হেলায় না হারাই।

রাজনৈতিক দমন-পীড়নের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে ও আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার ১৬ বছর দেশের জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালিয়ে গেছে। সেই স্টিমরোলার উপেক্ষা করে বিএনপি দীর্ঘ সংগ্রাম করে মুক্ত পরিবেশ পেয়েছি।

'গণতন্ত্র ও বিএনপি সমার্থক' মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসন থেকে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থা থেকে পার্লামেন্টারি শাসন নিয়ে এসেছিলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার চালু করেছিলেন।'

'২০১৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ দিয়ে সংস্কারের কথা বলেছিলেন। বছর দুয়েক আগে আমরা ৩১ দফা দিয়ে সংগ্রাম করেছি। গত ১৬ বছরে আমাদের অসংখ্য প্রাণ গেছে, অনেকে কারাগারে গেছেন,' যোগ করেন তিনি।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আজ আমাদের সামনে সুযোগ এসেছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। আমরা যেন এই সুযোগ হেলায় না হারাই। এমন অবস্থা তৈরি করতে হবে যেন এখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি। আপনারা হচ্ছেন সেই ভ্যানগার্ড, পাহারাদার। আপনারা গণতন্ত্রকে রক্ষা করবেন।'

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'সরকারের মধ্যে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা অবস্থান করছে। তারা আমাদের গনতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার প্রচেষ্টা নস্যাৎ করতে এখনো বসে আছে। এই চক্রান্তকে রুখে দিতে হবে।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের নেতা তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন। বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বাইরে যাবেন আবার ফিরে আসবেন। আজ আমি গণতন্ত্রের সংগ্রামে আহত-পঙ্গু সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। নিহতদের পরিবারে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অনুরোধ করছি। এটাই হোক আজকের দিনের শপথ।'

সমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, 'আমার সৌভাগ্য আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমি জেলে গিয়েছিলাম ২০০৮ সালে। তাকে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। আমরা জেল থেকে বের হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনি নির্বাচনে গেলেন। তিনি বললেন, নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হয়েছে। আমি নির্বাচনে না গেলে তোমাদের জেল থেকে বের করতে পারতাম না।'

'দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার কর্মীদের জন্য দেশে থেকে গেলেন। তিনি পালান নাই। দেশনেত্রী বলেছিলেন, এ দেশ আমার, মাটি আমার, বাইরে আমার কেউ নাই, আমি বাইরে যেতে পারব না,' বলেন তিনি।

মির্জা আব্বাস আরও বলেন, 'আর আজ তথাকথিত নেত্রী নেতাকর্মীদের ফেলে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার বলছেন চট করে চলে আসবেন। আমাদের দেশের জনগণ আপনার অপেক্ষায় আছে। আপনি আমাদের নেত্রীকে দীর্ঘদিন জেলে রেখে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন। এ দেশের জনগণ আপনার বিচার করবে।'

সমাবেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, 'গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনে আমরা বিজয়ের খুব কাছাকাছি আছি। আর একটু বাকি। আশা করছি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দিক-নির্দেশনায় জনগণকে সাথে নিয়ে এই রাস্তাটুকু সফলভাবে অতিক্রম করব।'

তিনি বলেন, 'আমরা অনেকবার বলেছিলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেন। শেখ হাসিনাকে বলেছিলাম আমাদের কথা শোনেন। কিন্তু আমাদের কথা শুনলেন না তিনি। শুনলেন দাদাবাবুদের কথা। যদি আমাদের কথা শুনতেন, তাহলে জনগণের এত ক্ষোভ হতো না, এভাবে পালাতে হতো না। এখন বলেন, সীমান্তের ওপারেই আছি। আরে আসেন না।'

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'যে দলের নেতারা কর্মীদের রেখে পালিয়ে যায় সেই দল কইরেন না। আর একটি কথা বলতে চাই, যারা তাকে আশ্রয় দিয়েছেন, যিনি মাত্র ১৫ দিনে ৯০০ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে, বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে, গুম করেছে—এই সিরিয়াল কিলার শেখ হাসিনাকে যারা আশ্রয় দিয়েছেন, ফোনও দিয়েছেন, কান পেতে শোনেন, যদি ঢাকা শান্তিতে না থাকে, দিল্লিও শান্তিতে থাকতে পারবে না। কীভাবে তা করতে হয়, আমরা তা ভালো করে জানি।'  '

সমাবেশে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, 'জনগণের টাকা লুটপাট করেছে সব টাকা ফেরত আনতে হবে। আমাদের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম ছিল নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। এটা আমাদের দাবি, জনতার দাবি।

'অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে' উল্লেখ করে এ্যানি বলেন, 'প্রশাসনে ফ্যাসিবাদের যত প্রেতাত্মা আছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। গণতন্ত্রের সংগ্রামে দীর্ঘদিন লড়াই-সংগ্রাম করে অসুস্থ হয়ে এখন চিকিৎসাধীন আছেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। আমরা তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। আমাদের নেতা তারেক রহমানের মামলা আইনি প্রক্রিয়ায় প্রত্যাহার করতে হবে। তিনি আমাদের মাঝে দ্রুত ফিরে আসবেন এই প্রত্যাশা করছি।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

2h ago