বিএনপি সংস্কার চায় না—এটা বলে একটা ভ্রান্ত প্রচারণা চালানো হচ্ছে: মির্জা ফখরুল

ঠাকুরগাঁওয়ে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: স্টার

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি সংস্কার চায় না, নির্বাচন চায়—এসব বলে একটা ভ্রান্ত প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

আজ বুধবার ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়ী এলাকায় নিজ বাসভবনে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।  

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা যে বিষয়ে জোর দিচ্ছি সেটা অনেকেই বুঝতে সক্ষম হচ্ছেন না। আমরা কখনোই এটা বলছি না যে, আগে নির্বাচন, পরে সংস্কার।'

'আমরা বলে আসছি, প্রথমত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য মিনিমাম সংস্কার যেটুকু দরকার, তা করতে হবে,' যোগ করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'নির্বাচন ব্যবস্থাকেন্দ্রিক যে সংস্কার তা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। তৃতীয়ত, জুডিশিয়াল রিফর্ম করতে হবে।'

'আজ যে সংস্কার দাবি উঠেছে, তা বিএনপিরই দাবি,' বলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'তবে পরস্পরবিরোধী মতামত নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কা নেই। কারণ, গণতন্ত্রের সৌন্দর্যই হচ্ছে ভিন্নমত। সব রাজনৈতিক দলের যদি একইরকম মতামত হয়, তবে তো একই ধরনের হয়ে গেল।'

'এখানে একেক দলের ভিন্নমত থাকবে। দেশের জনগণ বেছে নেবেন কোনটা তাদের জন্য প্রযোজ্য,' যোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিএনপিকে টার্গেট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা প্রচারণা চলছে যে, বিএনপি আগে নির্বাচন চায় অথবা বিএনপি সংস্কার চায় না, নির্বাচন চায়। এটা দিয়ে জনগণের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে।'

'আমরা বারবার বলে এসেছি, বিএনপিই সংস্কারের প্রবক্তা। আমরা যে ৩১ দফার প্রস্তাব দিয়েছি, সরকারের যে সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে অমিল রয়েছে। সংবিধান সংস্কার বিষয়ে আমরা সুস্পষ্ট মতামত দিয়েছি,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'যারা সংস্কার নিয়ে এসেছেন, তারা জ্ঞানী লোক, পন্ডিত লোক। বিশাল বিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন। তাদের আমরা শ্রদ্ধা করি। সম্মান করি। কিন্তু তারা যদি জনগণের বাইরে গিয়ে কিছু করেন, তবে আমরা সেটাকে সমর্থন করতে পারি না। জনগণ যেটা চাইবে আমরা সেটাকে সমর্থন করব।'

আরেক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'ভারতের মিডিয়ার বয়ানে দেখবেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চরম অন্যায় হচ্ছে। ভারতের মিডিয়াতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের যেসব প্রচারণা চালানো হচ্ছে, সেগুলো ডাহা মিথ্যা। এটা আপনারা ভালো জানেন। ঠাকুরগাঁওয়ে প্রথম দিকে কিছু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরে অন্যায় হয়েছে।'

আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক অপর এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'সারা বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রায় একই চিত্র। অভ্যূত্থানের পর নতুন একটা সরকার এসেছে। এর আগে পুলিশ প্রশাসন পুরোপুরি আওয়ামী লীগের ধামাধরা ছিল। তারা যা বলত, তাই করত। এ কারণে এখন পুলিশের কনফিডেন্স কমে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় তাদের যেসব ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেভাবে তারা সেভাবে নিতে পারছেন না।'

তিনি বলেন, 'আমাদের দলীয় কিছু ব্যক্তি কিছু কিছু কাজ (অপরাধ) করেছিল, যা আমরা প্রশ্রয় দেই না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও সংগঠনের কমিটি ভেঙে দিয়েছি, দলের নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করেছি।'

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, 'গোটা পৃথিবীতে ডানপন্থীদের একটা উত্থান হয়েছে। তারা এখন বলছেন গণতন্ত্র ইজ গোয়িং ডাউন। জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশ সফরে এলে আমরা তার সঙ্গে বৈঠক করি। সেখানে তিনি বলেছিলেন যে, গণতন্ত্র এখন বিপদের সম্মুখীন। এখন বিভিন্ন দেশে ডানপন্থীদের উত্থান হচ্ছে, কর্তৃত্ববাদের উত্থান হচ্ছে, গণতন্ত্র নীচে নামছে।'

'কিন্তু তারপরও গণতন্ত্রই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ব্যবস্থা, শাসনের জন্য সুশাসনের জন্য,' যোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা একটা জুজুর ভয়ে থাকি যে রাজনৈতিক দলগুলো স্বৈরাচার হয়ে উঠবে। স্বৈরাচার হয়ে উঠলে তো আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে। এখানে স্বৈরাচার হয়ে উঠলে জনগণই তাদের বের করে দেয়। সুতরাং এটা গণতন্ত্রের কোনো দোষ না।' 

'গণতন্ত্র অবশ্যই বেস্ট সিস্টেম। আমাদের দেশের যে কালচার সে অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারই বেস্ট সিস্টেম। তা না হলে আওয়ামী লীগের মতো স্বৈরাচার-ফ্যাসিবাদের উত্থান হয়,' বলেন তিনি।

এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সহসভাপতি ওয়াদুল্লাহ মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Disrupting office work: Govt employees can be punished within 8 days

The interim government has moved to amend the Government Service Act-2018 to allow swift disciplinary action against its employees who will be found guilty of disrupting official activities.

7h ago