‘ছেলে আমাকে ফোন করে না, আর কোনোদিন করবে না…’
বাইশ বছর বয়সী রাব্বি মিয়া ছিলেন তার পরিবারের সবার প্রত্যাশা আর ভরসার জায়গা।
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পঞ্চাশী গ্রামের এক হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য রাব্বি এগিয়ে চলেছিলেন উন্নত জীবনের পথে। তার বাবা আব্দুর রহিম রিকশা চালিয়ে কোনো রকমে পরিবারের খরচ জোগান। তার ওপর দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ জোগানো ছিল তার জন্য কঠিন।
এত প্রতিকূলতার মধ্যেও রাব্বির বড় ভাই অন্তর মিয়া সম্প্রতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষ করে সরকারি চাকরি পেতে পরীক্ষা দিচ্ছেন এবং পাশাপাশি ঢাকার গুলশান এলাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষকতা করছেন।
নিজের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি সংসারে অবদানও রাখছিলেন রাব্বি। তিনি নারায়ণগঞ্জের ওয়ালটন বেস পয়েন্টে জুনিয়র অফিসার হিসেবে কাজ করতেন এবং সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিদেশে পড়ার আশা ছিল তার। এর জন্য আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
এই দুই ভাই তাদের পরিবারকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনার জন্য কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেছেন।
কিন্তু, তাদের এই যৌথ প্রচেষ্টা শেষ হয়ে গেছে গত ২০ জুলাই।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার পাইনদী নতুন মহল্লার একটি ভবনের চতুর্থ তলায় থাকতেন রাব্বি। ২০ জুলাই বাসায় থাকা অবস্থায় বাইরে বিকট শব্দ শুনতে পেয়ে কৌতূহলবশত বারান্দায় যান। দেখতে পান, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে এবং পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে রাব্বির বাবা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, রাব্বি তার মোবাইল বের করে পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনার ভিডিও করতে শুরু করলে একটি বুলেট তার বুকে লাগে। সেখানেই মারা যান রাব্বি।
আব্দুল রহিম বলেন, 'কীভাবে নিজের মনকে বুঝাই, ছেলে হারিয়ে কীভাবে বাঁচব?'
ছোট ছেলের মৃত্যুর ১২ দিন পরও চোখের পানি আটকে রাখতে পারছেন না রাব্বির মা রাজিয়া বেগম।
সম্প্রতি জামালপুরে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রাব্বির একটি ছবি কোলে জড়িয়ে কাঁদছেন রাজিয়া।
বলছেন, 'আমার ছেলেটা প্রতিদিন ফোন করতো। সবসময় বলত, আমরা আর গরিব থাকব না মা, দেইখো। ১২ দিন হয়ে গেল, ছেলে আমাকে ফোন করে না। আর কোনোদিন করবে না।'
Comments