৪৪ বছরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ

চট্টগ্রামে প্রতি ১১০০ নাগরিকের নিরাপত্তায় ১ পুলিশ

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জনসংখ্যা এবং এলাকার পরিধি বাড়লেও বাড়েনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) জনবল। প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছর পার হলেও সীমিত জনবল দিয়েই সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছে নগর পুলিশ।
চট্টগ্রাম
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জনসংখ্যা এবং এলাকার পরিধি বাড়লেও বাড়েনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) জনবল। প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছর পার হলেও সীমিত জনবল দিয়েই সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছে নগর পুলিশ।

১৯৭৮ সালের ৩০ নভেম্বর ৬টি থানা ও ৩ হাজার ৬২২ জনবল নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল সিএমপি। তখন মহানগরীর জনসংখ্যা ছিল ১০ লাখ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, বর্তমানে নগরীতে জনসংখ্যা ৬০ লাখের বেশি। এছাড়া ভাসমান জনসংখ্যা আরও ১৫ লাখ।

এই ৭৫ লাখ মানুষের নিরাপত্তায় রয়েছে মাত্র ৬ হাজার ৭৪৮ জন পুলিশ সদস্য। অর্থাৎ বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ১০০ জন নাগরিকের সুরক্ষার বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ১ জন পুলিশ সদস্য, যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। বর্তমানে নগরীতে থানা রয়েছে ১৬টি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জনবল সংকটের কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কাজের চাপ বাড়ে নগর পুলিশ সদস্যদের ওপর। এতে করে ঈদ-পূজা-পার্বনে নির্ধারিত ছুটি-ছাটা থেকেও বঞ্চিত হন অনেকে।

এছাড়া পরিবার পরিজনকে সময় দিতে না পারায় হতাশা এবং আক্ষেপও জানিয়েছেন অনেক পুলিশ সদস্য। উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এতে করে পুলিশ সদস্যদের সেবা দেওয়ার মন মানসিকতা কিংবা পুলিশিংয়ে প্রভাব পড়ছে।

সিএমপির তথ্যমতে, ১৯৭৮ সালে ২৭৬ জন নাগরিকের নিরাপত্তার বিপরীতে ছিলেন ১ জন পুলিশ সদস্য। ১৯৯০ সালের তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিলো প্রতি ৪৬৫ জন নাগরিকের বিপরীতে ১ জন এবং ২০১৭ সালে এর আনুপাতিক হার ছিল প্রতি ১ জন পুলিশ সদস্যের বিপরীতে ৮৪৬ জন নাগরিক।

কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, থানা পুলিশের দায়িত্বের বাইরেও ৪ বিভাগে ট্রাফিক পুলিশ,  গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা অর্থাৎ কেপিআই'র (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) সুরক্ষা, ভিভিআইপিদের (রাষ্ট্রীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের) প্রটোকল অ্যান্ড প্রটেকশন, ও অনান্য জরুরি কাজে তাদের নিয়োজিত থাকতে হয়।

এছাড়া পুলিশ কন্ট্রোল রুম, রিজার্ভ অফিস, দামপাড়া পুলিশ লাইন্স, মনসুরাবাদ পুলিশ লাইন্স, কাউন্টার টেররিজম বিভাগ, পোশাক ভাণ্ডার, রেশন স্টোর ও বিভিন্ন পুলিশ অফিসের দায়িত্ব থাকে। এর সঙ্গে আদালতে আসামি আনা-নেওয়া এবং চট্টগ্রাম সফররত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদীয় কমিটি চেয়ারম্যানদের প্রটোকলের দায়িত্বেও রাখা হয় পুলিশের একাধিক টিম।

সিএমপির রিজার্ভ অফিসের তথ্যমতে, ১৮ই ডিসেম্বর সিএমপিতে ছুটি ছাড়া কর্মরত ছিলেন ৫ হাজার ৬২২ জন সদস্য।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বারবার বিভিন্ন সময়ে সিএমপির অপর্যাপ্ত জনবলের কথা সামনে এলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। চিঠি চালাচালিতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে সব।

নগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, বাণিজ্যিক রাজধানী হওয়ায় দেশি বিদেশি উদ্যোক্তারা সিএমপি এলাকা ও এর আশপাশে নানান শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বিশেষ শিল্প এলাকা গড়ে তুলেছেন। এর ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ সেখানে কাজের জন্য আসছেন।

এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি রপ্তানির কার্যক্রম, জাহাজের আগমন, বহির্গমন, নাবিকদের আগমন বর্হিগমন আগের তুলনায় বেড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল কর্নফুলী টানেল চট্টগ্রাম নগরকে যুক্ত করেছে এক অন্য উচ্চতায়, যার কারণে এখানে লোকসমাগম, বাণিজ্য সামনের দিনে আরও বাড়বে।

এর পাশাপাশি বাড়ছে অপরাধের ঝুঁকি। আর মহানগরীতে কাঙ্খিত সেবা দেওয়ার সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে জনবল সংকট ও লজিস্টিকস সাপোর্ট।

সিএমপির বিদায়ী কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর সিএমপিতে জনবল সংকটের কথা উল্লেখ করে বলেন, 'এখানে জনবল সংকট রয়েছে। বেশ কিছু ইউনিটকে শক্তিশালী করতে পুলিশ সদর দপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।'

সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি-সদর) আব্দুল ওয়ারীশ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সীমিত জনবল থাকলেও আমরা সেবার কোনো ত্রুটি রাখছি না। আমাদের জনবল কাজ করছে। এটা ঠিক যে বেশি কাজ শরীর এবং মনের উপর প্রভাব ফেলে।'

সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, 'জনবল সংকট কাটিয়ে কীভাবে নগরবাসীকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া যায় সেই বিষয়ে আমরা কাজ করছি। জনগন যাতে সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় এবং নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয় সেই দিকে আমাদের পুলিশ সচেষ্ট আছে।'

'নগরীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাড়ছে, একইসঙ্গে বাড়ছে জনসংখ্যা। সবদিক বিবেচনায় জনবল বাড়ানোর সময় এসেছে,' বলেন তিনি।

Comments