৩০ বছর পর শুরু হচ্ছে বন্দরনগরীর তৃতীয় বাস টার্মিনালের নির্মাণকাজ

চট্টগ্রাম
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

দ্বিতীয় টার্মিনাল নির্মাণের ৩০ বছর পর নগরীর উপকণ্ঠে একটি বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।

এটি বন্দরনগরীর তৃতীয় বাস টার্মিনাল হতে যাচ্ছে। কুলগাঁওয়ে প্রকল্প এলাকায় জমি উন্নয়নের জন্য চসিক ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করেছে। 

জানা গেছে, চট্টগ্রামে প্রথম বাস টার্মিনাল চালু হয় ১৯৬৬ সালে নগরীর কদমতলী মোড়ে। দ্বিতীয়টি ১৯৯৩ সালে বহদ্দারহাট এলাকায় নির্মিত হয়।

চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাবেক সভাপতি কফিল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে চট্টগ্রামগামী বাসগুলো আগে কদমতলী বাস টার্মিনাল থেকে চলাচল করত। তবে এখন এই টার্মিনাল থেকে শুধু নোয়াখালীগামী বাস চলাচল করে।'  

তিনি বলেন, 'বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে চট্টগ্রাম নগরীর এবং জেলার দক্ষিণ অংশে অবস্থিত ৭ উপজেলা এবং কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার মধ্যে চলাচলকারী বাসগুলো অবস্থান করে। কিন্তু বাস টার্মিনাল না থাকায় জেলার উত্তর অংশে অবস্থিত অন্যান্য ৮ উপজেলা এবং রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং দেশের অন্যান্য জেলার মধ্যে চলাচলকারী বাসগুলোকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।'

তৃতীয় বাস টার্মিনাল হলে যাত্রী, পরিবহন মালিক ও কর্মচারী সবার কল্যাণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের করা চট্টগ্রাম সিটি মাস্টার প্ল্যানে কুলগাঁও এলাকায় মোট ২৮ একর জমি একটি বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চসিক অবশ্য  প্রাথমিকভাবে ৮ দশমিক ১০ একর জমির উন্নয়ন করে টার্মিনাল নির্মাণ করবে। 

চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) রিফাতুল করিম ডেইলি স্টারকে, মহাপরিকল্পনা অনুসরণ করে চসিক ২০১৮ সালে ২৯৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় এবং প্রকল্পটি ২০১৮ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে অনুমোদিত হয়।
এ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের জন্য ২৬০ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। ভূমি উন্নয়নে ৩ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা, অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, 'এর বাইরে ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ ইয়ার্ড নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা।'

যোগাযোগ করা হলে চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্পের উপ পরিচালক জসিম উদ্দিন ডেইলি স্টারকে জানান, তারা ইতোমধ্যে ভূমি উন্নয়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছেন। বর্তমানে চসিকের একটি কমিটি ঠিকাদারদের জমা দেওয়া দরপত্র মূল্যায়ন করছে।

জসিম বলেন, 'প্রকল্পের সময়সীমা জুনে শেষ হবে এবং এ কারণে এর মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হবে।'

২০১৮ সালে একনেকে অনুমোদিত হওয়ার পরও গত ৫ বছরে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি কেন? জানতে চাইলে জসিম বলেন, 'কিছু সমস্যার কারণে জেলা প্রশাসন গত ৫ বছরে প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমি হস্তান্তর করতে পারেনি।'

'জমির ক্ষতিপূরণ ইস্যুতে জমির মালিকদের সঙ্গে কিছু সমস্যা ছিল,' যোগ করেন তিনি।

পরিবহন খাত সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন কয়েকশ গণপরিবহন বিভিন্ন জেলার মধ্যে চলাচল করে। এছাড়া চট্টগ্রাম শহর ও জেলার ১৫টি উপজেলার মধ্যে চলাচল করে আরও কয়েকশ যানবাহন।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ১৯৯৩ সালে বহদ্দারহাট এলাকায় একটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করে এবং এরপর গত ৩০ বছরে নগরীতে কোনো বাস টার্মিনাল নির্মিত হয়নি। টার্মিনাল না থাকায় বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার ওপর যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। 

এ অবস্থায় কুলগাঁও এলাকায় বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে চসিক। 

এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল বাবুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে  চট্টগ্রামের অবস্থিত বিভিন্ন উপজেলায় ও জেলা শহরে যাতায়াতকারী বাস ও ট্রাকের যাত্রী ও কর্মচারী উভয়ের দুর্ভোগ লাঘব করবে। 

সূত্র জানায়, এই টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার ও আন্তঃনগর উভয় ধরনের বাসই ছাড়বে। 

টার্মিনালটিতে মোট ১৬০টি বাস-ট্রাক পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী রিফাতুল করিম।

টার্মিনালের প্রবেশপথে একটি ৩ তলা সুদৃশ্য ভবন থাকবে। এছাড়া একটি সিটি বাস টার্মিনাল, একটি আন্তঃনগর বাস টার্মিনাল, ২৫টি যাত্রী বোর্ডিং লেন, ১৪টি অতিরিক্ত ওয়েটিং লেন, একটি বড় খোলা হল রুম এবং তথ্যকেন্দ্র, পুরুষ ও নারীদের জন্য টয়লেট, ২২টি টিকিট কাউন্টার, যাত্রীদের বসার জায়গা, ওয়াইফাই সুবিধা, লাগেজ রুম, ট্যাক্সি বুকিং রুম, ফার্স্ট এইড স্টেশন, রেস্তোরাঁ, এসি বাসের যাত্রীদের বসার জায়গা, বাস-ট্রাক মালিকদের জন্য অফিস এবং বাস কর্মচারীদের আবাসন কক্ষ থাকবে বলে জানান তিনি। 

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

4h ago