অরক্ষিত জামাল খান খালে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

অরক্ষিত খাল পাড়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন স্থানীয়রা। ছবি: স্টার

বন্দরনগরীর হেম সেন লেন, জামাল খান খাল। মঙ্গলবার বিকেলে খালের পাড়ে দুই শিশুকে খেলতে দেখা যায়। খালটি ঝুঁকিপূর্ণ ও অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রাখায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তবে, শিশু দুটি তা বোঝেনি। খেলছিল নিজেদের মনেই।

শুধু তারাই নয়, কয়েকজন পথচারীকেও খালের পাড় ধরে হাঁটতে দেখা যায়।

শহরের খোলা খাল-নালায় পড়ে শিশুদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ প্রাপ্তবয়স্কদের প্রাণহানির ঘটনা খুব একটা পুরনো স্মৃতি নয়।

তারপরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা রোধে খুব একটা চিন্তিত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, অনেক এলাকার খাল-নালা কয়েক মাস ধরে খোলা ও অরক্ষিত।

তেমনই একটি খাল হেম সেন লেন এলাকার জামাল খান খাল। এপ্রিল থেকেই খালটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।

স্থানীয়রা জানান, ওই এলাকার তিনটি ভবনের অংশবিশেষ খালের জমি দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে খালের জমি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। সে অনুযায়ী অভিযান চলাকালে সিডিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই ভবনগুলোর অবৈধ অংশ ভেঙে দেয়।

বন্দরনগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই খালে কাজ করছে সিডিএ। স্থানীয়রা জানান, এপ্রিল থেকে জামাল খান খালের কাজ বন্ধ রয়েছে।

হেম সেন লেন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীর বড়ুয়া বলেন, 'সিডিএ কর্তৃপক্ষ খাল পাড়ে ভবনের অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলে এবং খালটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ও অরক্ষিত অবস্থায় রেখে কাজ স্থগিত করে। তারপর থেকে স্থানীয়রা অরক্ষিত খাল পাড় দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।'

শম্পা ভট্টাচার্য নামে আরেক স্থানীয় বলেন, 'রাতে জায়গাটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। রাতের অন্ধকারে খাল পাড় দিয়ে হাঁটার সময় যে কেউ খালে পড়ে যেতে পারে।'

স্থানীয় শিশুরা এখানে খেলাধুলা করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তারা এই অরক্ষিত খালে পড়ে যাওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।'

যোগাযোগ করা হলে সিডিএ মেগা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, 'কিছু জটিলতার কারণে এই এলাকায় কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এই এলাকায় প্রকল্পের যে প্রাথমিক নকশা ছিল, তা পরিবর্তন করতে হবে। কারণ, ইতোমধ্যে সেখানে অনেক উঁচু ভবন নির্মিত হয়েছে এবং খালের জন্য কেউ জায়গা ছাড়তে চায় না।'

তিনি বলেন, 'উচ্ছেদ অভিযানের পর কাজ শেষ না করে সাধারণত আমরা কোনো জায়গা ছেড়ে যাই না। শিগগির খাল পাড়ে বেড়া দিয়ে ঘেরা দেওয়া হবে।'

২০১৭ সাল থেকে চট্টগ্রামে অরক্ষিত খাল-নালায় পড়ে মোট ১১ জন নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন।

গত ৯ জুন বন্দরনগরীর আগ্রাবাদ এলাকার নাসির খাল থেকে সাত বছরের শিশু জসিম উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

গত ৯ এপ্রিল সদরঘাট নালাপাড়া এলাকায় অরক্ষিত ড্রেনে পড়ে তিন বছরের শিশু ওজাইফা নিহত হয়।

২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় একটি নাবালক ছেলে অরক্ষিত খালে পড়ে যায়। নিখোঁজের তিনদিন পর কামাল উদ্দিনের (১০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নগরীর আগ্রাবাদ মোড়ে নালায় পড়ে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী শেহেরিন মাহমুদ সাদিয়া (১৯) মারা যান। তার মৃত্যুর পর নালার ওই স্থানে প্রথমে বাঁশের বেড়া এবং পরে ফুটপাত অবরুদ্ধ করে একটি ইটের প্রাচীর দেওয়া হয়।

২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা শহরের কালুরঘাট এলাকার ওসমানিয়া খাল থেকে এক নারীকে উদ্ধার করা হয়।

২০২১ সালের ৩০ জুন ষোলশহরের চশমা পাহাড় এলাকায় একটি অটোরিকশা খালে পড়ে তিনজন নিখোঁজ হন। পরে চালক সুলতান (৩৫) ও যাত্রী খাদিজা বেগমের (৬৫) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। খাল দুটি এখনো অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।

২০১৮ সালের ৯ জুন নগরীর আমিন জুট মিল এলাকায় আল আমিন নামে এক শিশু ড্রেনে পড়ে যায়। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শীলব্রত বড়ুয়া ২০১৭ সালের ৩ জুলাই বাকালিয়ায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে পিছলে নালায় পড়ে যান।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy in early 2025

According to the latest data from the United Nations High Commissioner for Refugees (UNHCR), 2,589 Bangladeshis landed in Italian shores in January and February this year while 1,206 went to the European country in the two months last year

1h ago