বিলিভ ইট অর নট

কেন্টাকির সেই অদ্ভুত মাংস বৃষ্টি

ছবি: সংগৃহীত

১৮৭৬ সালের ৩ মার্চ। রৌদ্রজ্জ্বল একটি দিন, পরিষ্কার আকাশ। আকাশে তুলোর মতো সাদা মেঘ। বৃষ্টির চিহ্নমাত্রই নেই। হঠাৎ অনেক উপর থেকে পড়তে আরম্ভ করল মাংসের টুকরো। কাঁচা মাংস, কিছু কিছু অর্ধেক খাওয়া, কিছু একদম কাঁচা। 

সময় তখন সকাল ১১টা। ঘটনাস্থল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির বাথ কান্ট্রি। এক নারী বাইরে বসে তৈরি করছিলেন সাবান। সে সময় আকাশ থেকে কিছুক্ষণ পর পর পড়তে লাগল এমন মাংসের টুকরো। 

এলাকাটি পরিচিত ছিল অলিম্পিয়া স্প্রিং নামে। এভাবে আকাশ থেকে মাংস পড়া চারপাশের মানুষকে হতবুদ্ধি করে ফেলল। সেই নারীর স্বামী অ্যালেন ক্রাউচের মনে হয়েছিল, শীতে তুষারপাতের মতো এই রোদভরা দিনে পড়ছে মাংস। 

সেদিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে এই মাংসের পতন। ঘটনা জানাজানি হতে পরদিন আশপাশের নানা স্থান থেকে মানুষ এসে ভিড় জমায়। এমন একজন ছিলেন হ্যারিসন গিল। তিনি দেখেন মাটিতে এখানে-সেখানে ছড়িয়ে আছে মাংসের টুকরো, কিছু কিছু গেঁথে আছে বেড়ায়। 

গিল লক্ষ্য করেন, মাংসগুলোর আকার ৫ বর্গ সেন্টিমিন্টারের মতো। তবে একটি টুকরা ছিল ১০ বর্গ সেন্টিমিটারের। তাছাড়া পড়ার সময় মাংসের টুকরোগুলো বেশ সতেজই ছিল।

উপস্থিতদের ভেতর নাম না জানা দুজন ব্যক্তি কিছু মাংস তুলে পুড়িয়ে চেখে দেখেছিলেন। তাদের মনে হয়েছিল, এগুলো ভেনিসন, নয়তো  ছাগলের মাংস।

মাংসগুলো সংগ্রহ করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষণের ব্যবস্থা করেন লিওপার্ড ব্রানডেইস নামে এক গবেষক। তার মতে, এগুলো প্রকৃতপক্ষে মাংস নয়, বরং এগুলো নস্টক- এক ধরনের জিলেটিনসমৃদ্ধ ব্যাকটেরিয়া। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে এগুলো জন্মায়। বৃষ্টির সময় পানিতে ভাসে, আকারে বড় হয়। 

কিন্তু এ ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্য পাওয়া যায় সেদিনের আবহাওয়ায়। আকাশ ছিল পরিষ্কার, রৌদ্রজ্জ্বল আকাশে ছিল সাদা মেঘ। বৃষ্টির নাম-গন্ধও ছিল না। তাই এই মূল্যায়ন খুব একটা যৌক্তিক বলে বিবেচিত হয়নি। 

পরবর্তীতে কয়েকজন হিস্টোলজিস্ট এ নিয়ে গবেষণা চালান। সাতটি টুকরো পরীক্ষা করা হয়, যার ভেতর দুটো ছিলো ফুসফুসের টিস্যু, দুটো তরুণাস্থি আর ৩টি মাস্কুলার টিস্যু। তবে এতেও পাওয়া যায়নি মাংস পড়ার ব্যাখ্যা। 

তবে পরবর্তীতে এর তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হাজির করেন ড. এল ডি কাস্টেনবাইন। তিনি 'লিউসভিল মেডিকেল নিউজ' জার্নালে লেখা এক নিবন্ধে এই মাংসবৃষ্টিকে 'শকুনদের সম্মিলিত বমি' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। শকুনেরা গিলে ফেলা খাবার আবার মুখে এনে চিবোয়, সহজ কথায় জাবর কাটে। সেই খাবার অনেক সময় মুখে এনেই ফেলে দেয়। 

'আমার কাছে এর একমাত্র গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা মনে হয় ওহিয়োর বৃদ্ধ এক কৃষকের বলা কথাটি- শকুনদের বমি। শকুনেরা দলবেঁধে অনেক উপরে উড়ছিল। তারপর বিক্ষিপ্তভাবে তারা মাংসগুলো উগরে দেয়। বাতাস থাকায় সেগুলো নিচে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পড়ে। মাংসের টুকরোগুলোয় বিভিন্ন ধরনের টিস্যু পাওয়া গেছে- এটার ব্যাখ্যাও এখান থেকে মেলে।' 

তবে ঘটনা যাই হোক, এই মাংস বৃষ্টি এখনো বিবেচিত হয় অদ্ভুত এক ঘটনা হিসেবেই। 

তথ্যসূত্র: রিপলি'স বিলিভ ইট অর নট

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

Comments

The Daily Star  | English
Domestic violence killing women in Bangladesh

Domestic violence in Bangladesh: When numbers speak of the silence

When we are informed that 133 women have been killed by their husbands in seven months, it is no longer just a number.

8h ago