যুদ্ধবিরতি আর হামাসের কাছে আত্মসমর্পণ একই কথা: নেতানিয়াহু

কিরিয়া সামরিক ঘাঁটিতে বক্তব্য রাখছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: এএফপি(২৮ অক্টোবর, ২০২৩)
কিরিয়া সামরিক ঘাঁটিতে বক্তব্য রাখছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: এএফপি(২৮ অক্টোবর, ২০২৩)

ইসরায়েল প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা করে সামরিক অভিযান বন্ধ রাখতে রাজি হয়েছে এমনটা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

আজ শুক্রবার বার্তাসংস্থা এএফপি নেতানিয়াহুর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে 'অসামান্য কার্যকারিতা' দেখাচ্ছে। নেতানিয়াহু জানান, গাজা দখলের কোনো পরিকল্পনা নেই ইসরায়েলের।

যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'যুদ্ধবিরতি আর হামাসের কাছে আত্মসমর্পণ একই কথা।'

উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে দক্ষিনে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে দক্ষিনে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি নেতা আরও জানান, সামরিক বাহিনীর এই অভিযানের কোনো 'সময়সীমা' নেই। তিনি বলেন, 'আমি মনে করি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অসামান্য দক্ষতা দেখাচ্ছে। যত সময়ই লাগুক না কেন, আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করব।'

অপরদিকে, হোয়াইট হাউসের বরাতে গতকাল বৃহস্পতিবার রয়টার্স জানায়, ইসরায়েল উত্তর গাজার কিছু অংশে প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা করে সামরিক অভিযান স্থগিত রাখতে সম্মত হয়েছে।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি জানান, এটি একটি উল্লেখযোগ্য, প্রাথমিক ধাপ।

গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তরাঞ্চলে যেতে সাধারণ মানুষকে এই সুযোগ দেওয়া হবে। প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা আগেই এই বিরতির সময় জানানো হবে বলে জানান কিরবি।

তবে নেতানিয়াহু বলছেন, সামরিক অভিযান স্থগিত করা হলেও সেটি অনিয়মিতভাবে করা হবে। প্রতিদিন নিদিষ্ট সময়ে বিরতি দেওয়ার বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও আসেনি।

যুদ্ধ বন্ধ রাখা হবে কি না, এ বিষয়ে ফক্স নিউজের এক প্রশ্নের জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, 'না, আমাদের শত্রু হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। তবে আমরা সুনির্দিষ্ট অবস্থানে বিভিন্ন সময়ে ছোট ছোট বিরতি দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে বেসামরিক ব্যক্তিদের বের করে আনার ব্যবস্থা করতে আগ্রহী এবং আমরা তা করছি।'

যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণার পরও উত্তর গাজায় যুদ্ধ বন্ধ বা বিরতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এরকম সুনির্দিষ্ট বিরতির বিষয়ে কিছু জানাননি।

উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে দক্ষিনে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে দক্ষিনে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটিকে ঘিরে রেখেছে এবং ট্যাংকবহর নিয়ে শহরের কেন্দ্রে আগাচ্ছে। গাজা সিটির সড়কগুলোতে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ চলছে।

ইতোমধ্যে ইসরায়েল প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদের উত্তর থেকে দক্ষিণ গাজায় যাওয়ার জন্য গাজার মূল পথে নিরাপত্তা করিডরের ব্যবস্থা করে আসছে। এই করিডর ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। হোয়াইট হাউজের বক্তব্যে দ্বিতীয় একটি করিডরের কথা বলা হয়েছে।

হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালালে ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহত হন। হামাসের হাতে জিম্মি হয় প্রায় ২৪০ জন। এ ঘটনার পর হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার করেন নেতানিয়াহু।

ইসরায়েলের বিমানহামলার পর গাজার চিত্র। ছবি: রয়টার্স
ইসরায়েলের বিমানহামলার পর গাজার চিত্র। ছবি: রয়টার্স

টানা ৩৪ দিন ধরে গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। শুরুতে বিমানবাহিনীর বোমাবর্ষণের সঙ্গে ২৮ অক্টোবর থেকে যোগ দিয়েছে স্থল বাহিনী।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৮০০ জনে। যার বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ইসরায়েল জানিয়েছে, এই সংঘাতে তাদের ৩৩ সেনা নিহত হয়েছেন।

গাজার ভবিষ্যৎ

নেতানিয়াহু আরও জানান, দীর্ঘমেয়াদে ইসরায়েলি বাহিনীর গাজায় অবস্থান করার পরিকল্পনা নেই। 'আমরা গাজা শাসন করতে চাই না। অধিগ্রহণেরও ইচ্ছে নেই। কিন্তু গাজা ও আমাদের জন্য আরও উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চাই', বলেন নেতানিয়াহু।

উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে দক্ষিনে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে দক্ষিনে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বলেন, এই অঞ্চল থেকে সব ধরনের সামরিক বাহিনী, জঙ্গি দূর করতে হবে এবং একে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। 'আমাদেরকে একটি বেসামরিক সরকার খুঁজে বের করতে হবে, যারা সেখানে থাকবেন', যোগ করেন তিনি।

তবে ইসরায়েলি বাহিনী যেকোনো মুহূর্তে গাজায় ঢুকে 'হত্যাকারীদের হত্যা করার' জন্য প্রস্তুত থাকবে বলেও জানান তিনি। 'এর ফলে হামাসের মতো আর কোনো সংগঠন মাথাচাড়া দিতে পারবে না', যোগ করেন নেতানিয়াহু।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Killing of trader in old Dhaka: Protests erupt on campuses

Protests were held on campuses and in some districts last night demanding swift trial and exemplary punishment for those involved in the brutal murder of Lal Chand, alias Sohag, in Old Dhaka’s Mitford area.

2h ago