আল-শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলি অভিযান, কেউ বের হতে গেলেই স্নাইপার-ড্রোন হামলা
উত্তর গাজার আল-শিফা হাসপাতালে লুকিয়ে থাকা হামাস যোদ্ধাদের নির্মূলে সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। এতে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন কিংবা আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিরা হুমকির মুখে পড়েছে।
আজ বুধবার আল জাজিরা এই তথ্য জানায়।
ইসরায়েলের দাবি, হামাস কর্মীরা আল-শিফা হাসপাতালে লুকিয়ে আছে এবং এই হাসপাতালটির নিচেই ফিলিস্তিনি এই সংগঠনটির ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কের মূল নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র।
সেই দাবির জেরেই ইসরায়েল এই হামলা শুরু করেছে। তবে, হামাস বলছে, ওই হাসপাতালটিতে তাদের কোনো কর্মী লুকিয়ে নেই এবং সেখানে তাদের কোনো সুড়ঙ্গ নেই।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, আল-শিফা হাসপাতালে কোনো কিছুই গোপনে হচ্ছে না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা এক বিবৃতিতে বলেন, 'আল-শিফা হাসপাতালে শুধু চিকিৎসক, রোগী ও বাস্তুচ্যুত মানুষ রয়েছেন।'
হাসপাতালটিতে ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর তিনি এই বিবৃতি দেন।
'আমাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই এবং আমরা কিছু লুকিয়েও রাখিনি', যোগ করেন তিনি।
কুদরা এর আগে জানান, বেশ কিছু সেনা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া, পুরো মেডিকেল কমপ্লেক্সকে ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি ট্যাংক।
হাসপাতালের চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে প্রায় ৬৫০ জন রোগী এবং ছয় থেকে সাত হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আল জাজিরার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আল-শিফা হাসপাতাল থেকে কেউ বের হতে গেলেই স্নাইপার ও ড্রোনের মাধ্যমে তাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। তা ছাড়াও কিছুক্ষণ পর পর হাসপাতালের দিকে গুলি ছোঁড়া হচ্ছে।
গাজায় অবস্থিত হাসপাতালগুলোর মহাপরিচালক ড. মুনির আল-বুর্শ আল জাজিরাকে এক সাক্ষাৎকারে জানান, আজ সকালেই আল-শিফা হাসপাতালের বেসমেন্টে তল্লাশি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
তিনি আরও জানান, ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতাল কমপ্লেক্সের সার্জারি ও জরুরি বিভাগেও প্রবেশ করেছে। এই দুইটি বিভাগ পৃথক দুই ভবনে অবস্থিত।
আল-বুর্শের ভাষ্য, সেই সময় হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া মানুষের ওপর গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনারা। যারা কমপ্লেক্স ছেড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তাদের ওপরও গুলি চালানো হয়।
এর আগে হাসপাতালের চিকিৎসক আহমেদ মোখাল্লালাতি বলেন, 'ইসরায়েলি অভিযানের কারণে হাসপাতালটিতে ৬৫০ রোগী আটকা পড়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ১০০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া হাসপাতাল প্রাঙ্গণে নারী, শিশুসহ কয়েক হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের সবার জীবন এখন ঝুঁকির মুখে।'
তিনি আরও জানান, কয়েক ঘণ্টা ধরে হাসপাতালটির চারপাশে নির্বিচারে বোমা ফেলা হয়েছে। একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে ওই এলাকা। গোলাগুলির শব্দও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাই আল-কাইলা এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি বাহিনীর এই অভিযানকে 'মানবতার বিরুদ্ধে নতুন অপরাধ' হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ফিলিস্তিনের ওয়াফা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'হাসপাতালে অসহায় রোগীরা আছেন। একইসঙ্গে আছেন চিকিৎসাকর্মীরাও। হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ইসরায়েল মানবতার বিরুদ্ধে চরম অপরাধ করেছে।'
Comments