যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে হামাস প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিশরের বৈঠক আজ
হামাস কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মিশরের গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান আব্বাস কামেল বৈঠক করবেন। এই বৈঠকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও এর শর্ত নিয়ে আলোচনা হবে বলা জানা গেছে।
আজ বুধবার মিশরের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।
বৈঠকের আলোচ্য বিষয়
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস নিশ্চিত করে যে তারা এই বৈঠকে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব পেয়েছে এবং তা যাচাই করছে।
কাতারের মধ্যস্থতায় হামাসের কাছে এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। যুদ্ধবিরতির চুক্তির অন্যতম শর্ত হল গত ৭ অক্টোবর থেকে হামাসের হাতে আটকে থাকা বাকি ইসরায়েলি জিম্মিরা তিন পর্যায়ে মুক্তি পাবেন। বিনিময়ে, ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে আটক থাকা ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবেন। তবে কতজন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবেন, তা এখনো জানা যায়নি।
এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাস কর্মকর্তা রয়টার্স এ বিষয়গুলো জানিয়েছেন।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তগুলো
এই কর্মকর্তা জানান, তাদের হাতে আসা প্রস্তাব মতে প্রথম পর্যায়ে বেসামরিক ব্যক্তিরা মুক্তি পাবেন (নারী, শিশু, অসুস্থ ও বয়স্ক মানুষ)।
দ্বিতীয় পর্যায়ে আটক সেনারা এবং সর্বশেষ পর্যায়ে নিহত জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
কর্মকর্তা আরও জানান, এই তিন পর্যায়ের পুরো সময়জুড়ে উভয় পক্ষ সামরিক অভিযান থেকে বিরত থাকবে। তবে এই তিন পর্যায়ের জন্য ঠিক কতদিন সময় লাগবে, তা জানাননি তিনি। এ ছাড়া, তৃতীয় পর্যায় শেষে কী হবে, সে বিষয়েও কিছু জানা যায়নি।
তবে হামাসের নীতিনির্ধারকদের অন্যতম মুহাম্মাদ নাজাল কাতারের টিভি চ্যানেল আল আরাবিকে জানান, হামাসের লক্ষ্য স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও 'বন্দি' বিনিময়। তিনি জানান, গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েল তাদের সব সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়ার বিষয়ে রাজি না হলে এই চুক্তি ভেস্তে যাবে।
এই আলোচনার গুরুত্ব বাড়িয়েছে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহর এক বক্তব্য। তিনি জানিয়েছেন, তিনি নিজেও সম্ভাব্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করতে মিশরে আসবেন। এর আগে প্রায় এক মাস আগে তিনি মিশর সফর করেন।
তবে আজকের বৈঠকে হানিয়েহ থাকবেন কী না, তা নিশ্চিত নয়।
আল আরাবি আরও জানিয়েছে, বুধবারের বৈঠকে যুদ্ধবিরতির সময়সীমা ও ইসরায়েল কতজন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে, সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
আরবি ভাষার সংবাদমাধ্যম আল-আরাবি আল-জাবিদের পৃথক এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রতিটি আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) সদস্য মুক্তির বিনিময়ে ১০০ থেকে ২৫০ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি চাইবে হামাস।
মিশরের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এই প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, হামাস-ইসরায়েল আগামী সপ্তাহের শুরুতে এই চুক্তি চূড়ান্ত করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের প্রতিক্রিয়া
তবে ইসরায়েল স্থায়ীভাবে গাজায় অভিযান বন্ধ করবে এবং বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে—এমন সংবাদকে ভুল বলে দাবি করেছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
এক বিবৃতিতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়, '(এ বিষয়ে) প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি—সব লক্ষ্য পূরণ হলেই কেবল যুদ্ধ বন্ধ হবে। আইডিএফ গাজা উপত্যকা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করবে না এবং হাজারো সন্ত্রাসীকে মুক্তি দেওয়া হবে না।'
'বন্দি মুক্তির চুক্তি বিষয়ক তথাকথিত প্রতিবেদনগুলো সত্য নয়। এটা নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি', যোগ করে নেতানিয়াহুর কার্যালয়।
সোমবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা জিম্মি মুক্তির বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছে বলে জানিয়েছে চ্যানেল ১২। বৈঠকে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
মন্ত্রিসভার এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদস্য চ্যানেল ১২ কে বলেন, 'এই চুক্তির শর্ত হজম করতে আমাদের কষ্ট হবে। তবে আমাদেরকে অসুস্থ, বয়স্ক ও নারীদের কথা মাথায় রাখতে হবে। এটাই হতে পারে তাদের মুক্তির শেষ সুযোগ'।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো নীতিগত ভাবে এই চুক্তিকে সমর্থন করছেন। কিন্তু তারা মনে করেন এই যুদ্ধবিরতি শেষে আবারও যুদ্ধ শুরু হবে এবং এতে স্থায়ীভাবে যুদ্ধের অবসান হবে না।
পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন হলে বৃহস্পতিবার আবারও মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে।
ইসরায়েলি জিম্মিদের বর্তমান পরিস্থিতি
হামাসের হাতে এখনো ১৩২ জন জিম্মি রয়েছে বলে মনে করে ইসরায়েল। নভেম্বরের শেষে এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে মুক্তি পান ১০৫ জন বেসামরিক নাগরিক। এর আগে আরও চার জনকে মুক্তি দেয় হামাস এবং একজনকে উদ্ধার করে ইসরায়েলি সেনারা।
আট জিম্মির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তিনি জিম্মিকে ভুল করে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। আইডিএফ নিশ্চিত করেছে, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্যে ২৮ জন নিহত হয়েছেন।
অপর এক জিম্মি নিখোঁজ আছেন।
হামাসের কাছে ২০১৪ সাল থেকে নিহত আইডিএফ সেনা অরন শল ও হাদার গোলডিনের মরদেহ রয়েছে। এছাড়া আভেরা মেনগিতসু ও হিশাম আল-সায়েদ নামে দুই বেসামরিক ব্যক্তিও তাদের হাতে আটক আছেন বলে ধারণা করা হয়। এই দুইজন স্বেচ্ছায় ২০১৪ ও ২০১৫ সালে গাজায় প্রবেশ করেন।
Comments