গাজায় জাতিসংঘের স্কুলে ইসরায়েলি বোমায় নারী-শিশুসহ ৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল আল-থাওয়াবতা বলেন, ‘মধ্য গাজার আল-আকসা হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য অসংখ্য আহত মানুষ এসেছেন। এ ছাড়া অনেকের মরদেহও এখানে নিয়ে আসা হচ্ছে।’
মধ্য গাজার দেওর এল-বালাহ এলাকায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় আহত ফিলিস্তিনিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স (৪ জুন, ২০২৪)
মধ্য গাজার দেওর এল-বালাহ এলাকায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় আহত ফিলিস্তিনিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স (৪ জুন, ২০২৪)

ইসরায়েলি বাহিনী মধ্য গাজার একটি জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট স্কুলে বোমাবর্ষণ করেছে। এই হামলায় গাজায় অন্যান্য জায়গা থেকে পালিয়ে আসা অন্তত ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন ও গাজার শাসক হামাস আজ ভোরবেলায় সংঘটিত এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। সংগঠনটি এই হামলাকে 'ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ' বলে অভিহিত করেছে এবং জানিয়েছে, হতাহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী ও শিশু রয়েছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ৩৭।

ওয়াফা আরও জানিয়েছে, গাজার অন্য অংশ থেকে পালিয়ে আসা হাজারো ফিলিস্তিনি নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের আল-সারদি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিল। এই স্কুলটি পরিচালণার সঙ্গে ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংগঠন (ইউএনআরডব্লিউএ) যুক্ত রয়েছে।

গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল আল-থাওয়াবতা বলেন, 'মধ্য গাজার আল-আকসা হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য অসংখ্য আহত মানুষ এসেছেন। এ ছাড়া অনেকের মরদেহও এখানে নিয়ে আসা হচ্ছে।'

ইসরায়েলি হামলার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় মধ্য গাজা থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি (৫ জুন, ২০২৪)
ইসরায়েলি হামলার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় মধ্য গাজা থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি (৫ জুন, ২০২৪)

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'ইসরায়েলিদের এই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ গণহত্যার স্পষ্ট প্রমাণ। এটি নারী, শিশু ও গাজা উপত্যকার অন্যান্য অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা বেসামরিক ব্যক্তিদের নিশ্চিহ্ন করার সুনিদৃষ্ট প্রচেষ্টা।'

তিনি জানান, হাসপাতালের সক্ষমতার চেয়ে তিন গুণ বেশি রোগী সেখানে আছেন।

'এটি একটি বিপর্যয় এবং এ কারণে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে', যোগ করেন তিনি।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বোমা বর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা জানায়, তাদের যুদ্ধবিমান 'নুসেইরাত অঞ্চলে ইউএনআরডব্লিউএ স্কুলের ভেতর লুকিয়ে রাখা হামাসের কমপাউন্ডে হামলা চালিয়েছে'। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) দাবি, 'ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনারত হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল করা হয়েছে'।

হামাস এই দাবি অস্বীকার করেছে।

আল-থাওয়াবতা রয়টার্সকে বলেন, 'দখলদাররা (ইসরায়েল) মিথা কথা বলে। তারা বানোয়াট ও অতিরঞ্জিত গল্প বলে জনমতকে প্রভাবিত করতে চায়। তারা অসংখ্য বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে পরিচালিত নৃশংস অপরাধকে যুক্তিযুক্ত করার চেষ্টা করছে'।

যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারী দেশ হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির কাজ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আল-সারদি স্কুলে এই হামলা চালাল ইসরায়েল।

মধ্য গাজার দেইর এল-বালাহ অঞ্চল থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, নুসেইরাতে হামলা চালানোর আগের ২৪ ঘণ্টা ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত ১০২ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ) জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত আল-আকসা হাসপাতালে ৭০ জনের মরদেহ এসেছে এবং ৩০০ আহত ব্যক্তি চিকিৎসার জন্য এসেছেন।

ইসরায়েল-গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি ট্যাংক। ছবি: রয়টার্স
ইসরায়েল-গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি ট্যাংক। ছবি: রয়টার্স

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এএফপির সর্বশেষ হিসাব মতে, এই হামলায় এক হাজার ১৮৯ জন নিহত হন। একইসঙ্গে ২৫২ জনকে জিম্মি করে হামাস। জিম্মিদের মধ্যে ১২১ জন এখনো গাজায় আছেন। ইসরায়েলের দাবি, ৩৭ জিম্মি নিহত হয়েছেন।

এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে সেদিনই গাজার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ও নির্বিচার বিমানহামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরবর্তীতে স্থলবাহিনীও এতে যোগ দেয়। গত ৭ মাসে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা অন্তত ৩৬ হাজার ৫৮৬ ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা ৮৩ হাজার ৭৪। হতাহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Comments