যুদ্ধের মধ্যেই চলবে আলোচনা: ইসরায়েল, যুদ্ধ বন্ধ না হলে জিম্মি মুক্তি পাবে না: হামাস

এক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মধ্যস্থতাকারীদের বরাত দিয়ে জানান, হামাস খুব সম্ভবত ইসরায়েলি প্রস্তাব মেনে নেবে। তবে তারা কিছু শর্ত দেবে, যার ফলে আলোচনা আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।
মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের এই স্কুলে আজ সকালে ইসরায়েলি বোমা হামলায় ৩৭ জন নিহত হন। নিহতদের মরদেহ ঘিরে স্বজনরা শোক প্রকাশ করছে। ছবি: এএফপি
মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের এই স্কুলে আজ সকালে ইসরায়েলি বোমা হামলায় ৩৭ জন নিহত হন। নিহতদের মরদেহ ঘিরে স্বজনরা শোক প্রকাশ করছে। ছবি: এএফপি

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট জানিয়েছেন, 'যুদ্ধের মাঝেই অব্যাহত থাকবে' হামাসের সঙ্গে জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির আলোচনা। 

আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।

এর আগে হামাস দাবি করেছে, ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হলে তারা আলোচনায় অংশ নিতে আগ্রহী নয়। ইসরায়েলি মন্ত্রী গ্যালান্ট এই দাবি সরাসরি নাকচ করেন।

ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর ১৩৩তম স্কোয়াড্রনের একটি এফ-১৫ যুদ্ধবিমানে বসে গ্যালান্ট সাংবাদিকদের বলেন, 'ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) যেখানে হামলা করছে, সেখান থেকে ধোঁয়া উঠছে এবং এই ধোঁয়া গাজা উপত্যকা ও উত্তরাঞ্চল থেকে খালি চোখেই দেখা যায়'।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। ছবি: আইডিএফ
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। ছবি: আইডিএফ

'আমরা শত্রুকে ক্লান্ত-অবসন্ন করে হারিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। এসব হামলা অব্যাহত অবস্থায় জঙ্গি সংগঠন হামাসের সঙ্গে (জিম্মি মুক্তির) আলোচনা চলবে', যোগ করেন তিনি।

বুধবার হামাসের রাজনীতি বিষয়ক নেতা ইসমাইল হানিয়ে জানান, সংগঠনটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহারের শর্তে যেকোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে 'গুরুত্ব সহকারে ও ইতিবাচকভাবে' বিবেচনা করবে।

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার জানিয়েছেন, হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবেন না তিনি। এমন কোনো চুক্তিতে যেতে চান না, যেখানে তার এই লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়বে।

ইসরায়েলি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা একটি জিম্মি মুক্তির প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে, যা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হলে যুদ্ধের অবসান হবে। তবে নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, এই চুক্তিতে সম্মত হলেও ইসরায়েল তাদের যুদ্ধের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে।

এই প্রস্তাবটিই গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জনসম্মুখে উপস্থাপন করেন।

বাইডেন বর্ণিত প্রস্তাব পুরোপুরি মেনে নেওয়া হলে নেতানিয়াহুর সরকারে ভাঙন দেখা দিতে পারে। জোটের দুই অংশীদার কট্টর ডানপন্থী দল বলেছে, বাইডেনের কথা অনুযায়ী চুক্তি বাস্তবায়ন করা হলে তারা সরকার ছেড়ে যাবেন।

যুক্তরাষ্ট্র বরাবরের মতো এবারও দাবি করছে, 'বল এখন হামাসের কোর্টে', অর্থাৎ, হামাস রাজি হলে ইসরায়েলও রাজি হবে এবং চুক্তি বাস্তবায়িত হবে। কারণ হিসেবে ওয়াশিংটন বলছে, এবারের চুক্তির শর্তগুলো হামাসের দেওয়া সর্বশেষ প্রস্তাবের সঙ্গে মিলে যায়।

হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ে। ছবি: এএফপি
হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ে। ছবি: এএফপি

বিশ্লেষকদের মতে, খসড়া চুক্তির আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা দুই পক্ষের সাংঘর্ষিক চিন্তাধারা—নেতানিয়াহু বলছেন হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন, হামাস বলছে ইসরায়েল স্থায়ী যুদ্ধবিরতির শর্তে রাজি না হওয়া পর্যন্ত জিম্মিদের মুক্তি দেবে না।

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দরকষাকষি করছে মোসাদ প্রধান ডেভিড বারনিয়ার নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল। অচলাবস্থা নিরসনে বারনিয়া সর্বশেষ খসড়া প্রস্তাবে নতুন একটি শর্ত যোগ করেছেন। 

(বাইডেনের উপস্থাপন করা) মূল প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহ যুদ্ধ বন্ধ থাকবে। এ সময়য় জীবিত নারী, বয়স্ক ও অসুস্থ জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস। প্রথম ধাপে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করবে। বারনিয়ার দেওয়া বাড়তি শর্তে বলা হয়েছে, যদি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনা সুষ্ঠুভাবে চলতে থাকে (এবং ছয় সপ্তাহে শেষ না হয়), তাহলে এই ধাপে যুদ্ধবিরতির সময়সীমা আরও বাড়ানো যাবে।

এই শর্তে খানিকটা ধোঁয়াশা রাখা হয়েছে যাতে দুই পক্ষ অন্তত প্রথম ধাপে একমত হয়।

তবে নেতানিয়াহু হামাসকে পরাজিত না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার জানানোর পর হামাস মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে আরও স্পষ্ট ব্যাখ্যা ও অঙ্গীকার দাবি করেছে, যাতে চুক্তি নিয়ে তারা এগিয়ে যেতে পারে। এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা এই তথ্য জানান।

তবে এই চুক্তি বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র বেশ আশাবাদী। সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নস ও হোয়াইট হাউজের মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ব্রেট ম্যাকগার্ক এই লক্ষ্য অর্জনে মধ্যপ্রাচ্যে এসেছেন।

বুধবার দোহায় কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও মিশরের গোয়েন্দা প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন বার্নস। এরপর তারা হামাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এ সময় কাতারি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মেদ বিন আবদুলরাহমান আল থানি ও মিশরের গোয়েন্দা প্রধান আব্বাস কামেল হামাসকে প্রস্তাব মেনে নেওয়ার অনুরোধ করেন।

গাজায় যুদ্ধবিরতির চার মধ্যস্থতাকারী। বাম থেকে ডানে সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নস, মিশরের গোয়েন্দা প্রধান আব্বাস কামেল, মোসাদ প্রধান ডেভিড বারনিয়া ও কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহামেদ বিন আবদুলরাহমান আল-থানি। কোলাজ ছবি: এএফপি
গাজায় যুদ্ধবিরতির চার মধ্যস্থতাকারী। বাম থেকে ডানে সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নস, মিশরের গোয়েন্দা প্রধান আব্বাস কামেল, মোসাদ প্রধান ডেভিড বারনিয়া ও কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহামেদ বিন আবদুলরাহমান আল-থানি। কোলাজ ছবি: এএফপি

অপরদিকে, ম্যাকগার্ক কায়রোতে মিশরীয় কর্মকর্তাদের সংগে আলোচনা করেন।

কাতার ও মিশর চলতি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে।

এক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মধ্যস্থতাকারীদের বরাত দিয়ে জানান, হামাস খুব সম্ভবত ইসরায়েলি প্রস্তাব মেনে নেবে। তবে তারা কিছু শর্ত দেবে, যার ফলে আলোচনা আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।

বুধবার রাতে ইসরায়েলি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Wealth accumulation: Heaps of stocks expose Matiur’s wrongdoing

Wealth accumulation: Heaps of stocks expose Matiur’s wrongdoing

NBR official Md Matiur Rahman, who has come under the scanner amid controversy over his wealth, has made a big fortune through investments in the stock market, raising questions about the means he applied in the process.

17h ago