গাজায় দৈনিক ১১ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা ইসরায়েলের

গাজায় সামরিক অভিযানে ইসরায়েলি সেনা। ফাইল ছবি: এএফপি
গাজায় সামরিক অভিযানে ইসরায়েলি সেনা। ফাইল ছবি: এএফপি

আজ রোববার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) ঘোষণা দিয়েছে যে তারা ফিলিস্তিনিদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করতে প্রতিদিন দক্ষিণ গাজা উপত্যকার এক গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথের আশেপাশে 'সব ধরনের সামরিক কার্যক্রমে কৌশলগত বিরতি' দেবে।  

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েল।

ইসরায়েলের কেরেম শালম সীমান্ত ক্রসিং থেকে শুরু করে রাফার পূর্ব শহরতলীর সালাহ আ-দিন সড়ক এবং তারপর উত্তরের দিকে খান ইউনিস এলাকা পর্যন্ত জায়গাটুকু এই যুদ্ধবিরতির আওতায় থাকবে বলে আইডিএফ জানিয়েছে। প্রতিদিন স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এই বিরতি কার্যকর থাকবে।

রাফা সীমান্তে মিশর থেকে আসা ত্রাণ। ফাইল ছবি: রয়টার্স
রাফা সীমান্তে মিশর থেকে আসা ত্রাণ। ফাইল ছবি: রয়টার্স

সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, 'আইডিএফ ও কোগ্যাট (এ অঞ্চলে ইসরায়েলের সরকারি কার্যক্রমের সমন্বয়কারী সংস্থা) এই যুদ্ধের শুরু থেকে যেসব মানবিক ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে, তার সঙ্গে এই বাড়তি পদক্ষেপ যোগ করা হল।'

আইডিএফ জানিয়েছে, শনিবার প্রথমবারের মতো এই বিরতি কার্যকর করা হয়েছে।

হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আইডিএফ গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়মিত বিরতিতে কয়েক ঘণ্টার জন্য 'ট্যাকটিকাল পজ' বা কৌশলগত বিরতি দিয়েছে। এসব উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনিরা যাতে ত্রাণ পেতে পারেন বা বিতরণ করতে পারেন।

বিশ্লেষকদের মতে, সর্বশেষ এই ঘোষণা বেশ উল্লেখযোগ্য, কারণ একটি বড় এলাকা জুড়ে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে (১১ ঘণ্টা) যুদ্ধ বন্ধ থাকবে।

সামরিক বাহিনী একটি পৃথক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তারা 'দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ স্থগিত করা হচ্ছে না এবং রাফায় যুদ্ধ চলতে থাকবে।'

'এ ছাড়া, গাজা উপত্যকায় পণ্য প্রবেশের মাত্রা বা ধরনের কোনো পরিবর্তন আসছে না। যে রুট ধরে পণ্য আসে, তা দিনের বেলায় আন্তর্জাতিক সংস্থাদের সঙ্গে সমন্বয় অনুযায়ী খোলা থাকবে, এবং তা শুধু মানবিক ত্রাণ পরিবহনে ব্যবহার হবে', যোগ করে আইডিএফ।

সামরিক বাহিনীর প্রাথমিক ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সামরিক সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং জানান, 'এই উদ্যোগের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না এবং এটি তার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়'। এক কূটনীতিক সূত্রের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি:
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি:

সূত্রটি বলেন, 'সেনাবাহিনীর এই ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে, আইডিএফের নীতিতে কোনো পরিবর্তন নেই এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী রাফার অভিযান চলতে থাকবে।'

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টও এই উদ্যোগ সম্পর্কে কিছু জানতেন না এবং এ ধরনের কোনো প্রস্তাবে অনুমোদন দেননি বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম।

অপরদিকে কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গির প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, 'যে এ ধরনের নীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে একজন নির্বোধ এবং তার এ ধরনের পদে থাকা উচিত নয়।'

'দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই উদ্যোগটি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হয়নি এবং এটি মন্ত্রিসভার দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে যায়। ৭ অক্টোবরের আগের নিরাপত্তা বিষয়ক ধ্যানধারণা থেকে বের হয়ে আসার সময় হয়েছে এবং এ ধরনের অদ্ভুত কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে, যা আমাদের জন্য শুধু আরও নিহত ও আহতের সংখ্যা বাড়াবে', যোগ করেন তিনি।

২০২৩ এর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এতে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন ও হামাসের হাতে জিম্মি হয় প্রায় ২৫১ জন। এ ঘটনার পর গাজার ওপর নির্বিচার পাল্টা হামলা শুরুর পাশাপাশি সেখানে সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল।

পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মহলের চাপে ধীরে ধীরে কিছু পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয় ইসরায়েল। এ মুহূর্তে গাজায় যতটুকু ত্রাণ প্রবেশ করছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।  

জাতিসংঘ বলছে, গাজায় দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে ফিলিস্তিনিরা।

গত ৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা অন্তত ৩৭ হাজার ২৯৬। আহতের সংখ্যা অন্তত ৮৪ হাজার ৮৩২। হতাহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Comments

The Daily Star  | English

One-stop crisis centre: Conviction in less than 2pc cases

The one-stop crisis centres are supposed to provide comprehensive support to women and children victims of violence, offering healthcare, police assistance, legal aid and other services.

7h ago