পুলিশের গুলিতে কিশোর নিহত: ফ্রান্সজুড়ে তৃতীয় দিনের মতো সহিংস বিক্ষোভ

ফ্রান্সের বিক্ষোভকারীরা এই গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। ছবি: রয়টার্স
ফ্রান্সের বিক্ষোভকারীরা এই গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। ছবি: রয়টার্স

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের একটি তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে কিশোর নিহত হওয়ার জেরে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের তৃতীয় দিনে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়েছে।

আজ শুক্রবার বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ২ দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রীসভার জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন।

বিক্ষোভের তৃতীয় দিন শত শত পুলিশ আহত হন এবং অসংখ্য মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সারা ফ্রান্স জুড়ে বড় ও ছোট শহরগুলোতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। অনেক দালান ও পরিবহনে অগ্নিসংযোগ ও দোকানপাটে লুটপাট চালানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিন বৃহস্পতিবার রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৪০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করেন। তিনি টুইটারে আজ জানিয়েছেন, পুলিশ এখন পর্যন্ত ৬৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।

ফ্রান্সের মার্সেই, লিওঁ, পাউ, তুলুস, লিল ও প্যারিস শহরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার প্যারিসের পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত কর্মজীবীদের শহরতলী নানতেরে এলাকায় ট্রাফিক চেকপোস্টের নির্দেশনা না মেনে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালালে আলজেরিয়া ও মরক্কো বংশোদ্ভূত তরুণ নাহেল ম. (১৭) এর ওপর খুব কাছে থেকে গুলি চালান এক পুলিশ কর্মকর্তা।

কর্তৃপক্ষ জানায়, নাহেলের মৃত্যুর পর থেকে চলমান বিক্ষোভ দমনে সারা দেশে ২৪৯ পুলিশ আহত হয়েছেন। 

প্রেসিডেন্ট মাখোঁ এখন পর্যন্ত দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিপক্ষে আছেন। তিনি ব্রাসেলসে অনুষ্ঠানরত একটি ইউরোপীয় সম্মেলন শেষে ফ্রান্সে ফিরে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টার দিকে মন্ত্রিসভার সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসবেন।

পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাত। ছবি: রয়টার্স
পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাত। ছবি: রয়টার্স

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেশের বিভিন্ন অংশে অগ্নিসংযোগের ঘটনা সম্পর্কে জানা গেছে। লিওঁ শহরে একটি ট্রামে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। প্যারিসের উত্তরে অবস্থিত অবারভিলিয়ার্সে একটি বাস ডিপোতে ১২টি বাস ভাঙচুর করেন বিক্ষোভকারীরা।

পরিবহন মন্ত্রী ক্লেমেন্ত বিউন জানান, তিনি আজ শুক্রবার রাজধানীর সরকারি পরিবহন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিতে পারেন।

সবচেয়ে তীব্র ও সহিংস বিক্ষোভ চলছে নানতেরে এলাকায়। সেখানে বিক্ষোভকারীরা গাড়িতে আগুন দেয়, রাস্তা বন্ধ করে রাখে এবং পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে মারে।

প্যারিসের শাতেলেত লে হালে শপিং মলে একটি নাইকি জুতার ব্র্যান্ডের দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। সংলগ্ন রু দে রিভোলি শপিং ডিসট্রিক্টে দোকানের জানালা ভাঙ্গার অপরাধে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

রয়টার্সকে এক সূত্র জানিয়েছে, সারা দেশের বেশ কিছু ক্যাসিনো সুপারমার্কেট লুটপাটের শিকার হয়েছে।

প্যারিসের শাতেলেত লে হালে শপিং মলে একটি নাইকি জুতার ব্র্যান্ডের দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। ছবি: রয়টার্স
প্যারিসের শাতেলেত লে হালে শপিং মলে একটি নাইকি জুতার ব্র্যান্ডের দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। ছবি: রয়টার্স

প্যারিস পুলিশ জানিয়েছে, তারা শহরের আশেপাশে এবং ভেতরে ৩০৭ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছেন। ৯ পুলিশ কর্মকর্তা এ সময় আহত হন।

ফ্রান্সে দীর্ঘদিন থেকেই বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও এর কর্মীরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ আনছে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের ও  ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের ক্ষেত্রে।

নাহেলের মৃত্যুতে এ বিতর্ক নতুন করে সামনে এসেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Army chief reaffirms Bangladesh’s commitment to UN peacekeeping

"As Bangladesh's senior-most peacekeeper, I feel proud and honoured to be here today"

20m ago