ইউক্রেনের বাঁধ ধ্বংস: যুদ্ধ কৌশল না নাশকতা

দক্ষিণ ইউক্রেনে নিপ্রো নদীর ওপর অবস্থিত কাখোভকা বাঁধ ধ্বংস হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ ইউক্রেনে নিপ্রো নদীর ওপর অবস্থিত কাখোভকা বাঁধ ধ্বংস হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ ইউক্রেনে নিপ্রো নদীর ওপর অবস্থিত কাখোভকা বাঁধ ধ্বংস হওয়ার পর এর মধ্য দিয়ে প্রচুর পরিমাণে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে যুদ্ধক্ষেত্রের বেশ কিছু অংশ বন্যায় ভেসে গেছে এবং গ্রামবাসীরা পালাতে বাধ্য হচ্ছেন।

আজ মঙ্গলবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

ইউক্রেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই বাঁধে বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগ এনেছে। রাশিয়াও পালটা অভিযোগ এনেছে।

নোভা কাখোভকা বাঁধ ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল ও ঝাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে পানি সরবরাহ করে। উভয় অবস্থানই রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

বিশ্লেষকদের মতে, এই বাঁধ ধ্বংস হওয়ায় যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনে আরও একটি মানবিক দুর্যোগ দেখা দিতে পারে। নিজেদের ভূখণ্ড ফিরে পেতে ইউক্রেন যখন পালটা হামলার প্রস্তুতিতে নিচ্ছে, তখনই এই বাঁধ ধ্বংস হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে বড় ধরনের রূপান্তর এলো।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রুশদের 'সন্ত্রাসী' বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, 'কাখোভকা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ ধ্বংসের ঘটনায় সারা বিশ্ব আবারও নিশ্চিত হল, যে তাদেরকে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের প্রতিটি অংশ থেকে বিতরণ করা প্রয়োজন।'

তিনি আরও জানান, রাশিয়া ' (এই) অবকাঠামোতে নিজেরাই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় প্রায় ৮০টি অবস্থানে জনবসতি রয়েছে।'

ইউক্রেনের খেরসন অঞ্চলের রাশিয়ার নিয়োগ দেওয়া গভর্নর কিয়েভের বিরুদ্ধে বাঁধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর অভিযোগ আনেন। তিনি জানান, 'পালটা হামলার ব্যর্থতা থেকে মনোযোগ অন্যদিকে সরাতে ইউক্রেন এই হামলা চালিয়েছে।'

উভয় পক্ষের কেউই নিজ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি।

বাঁধের পেছনে থাকা জলাধার ক্রিমিয়ার অসংখ্য কৃষিজমিতে মিঠা পানি সরবরাহ করে থাকে। ক্রিমিয়া ছাড়াও এই বাঁধ ঝাপোরিঝঝিয়ার কারখানায় কুলিং ওয়াটার সরবরাহ করে থাকে।

রুশ রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক জ্বালানি প্রতিষ্ঠান রোসাতম জানিয়েছে, বাঁধ ধ্বংস হলেও তাৎক্ষণিকভাবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ঝুঁকিতে নেই এবং পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।

বাঁধ সংলগ্ন শহরগুলোতে পানির উচ্চতা ১২ মিটার পর্যন্ত যেতে পারে বলে জানান রাশিয়া নিযুক্ত মেয়র ভ্লাদিমির লেওনতিয়েভ।

ইউক্রেনের খেরসন অঞ্চলের ১৪টি জনবসতিতে ২২ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হওয়ার আশংকায় আছেন।

ক্রিমিয়ার গভর্নর সের্গেই আকসিওনভ জানান, উত্তর ক্রিমিয়া খালে পানির উচ্চতা কমে যেতে পারে। এই খালের মাধ্যমে নিপ্রো নদী থেকে ক্রিমিয়া উপদ্বীপে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হয়। তবে আপাতত ক্রিমিয়ায় যথেষ্ট পানির সঞ্চয় রয়েছে। আগামী কয়েকদিনে এই ঝুঁকির মাত্রা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। 

রুশ গণমাধ্যম তাস নোভা কাখোভকা শহরের রুশ-নিযুক্ত এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, প্রায় ৩০০ বাড়ির মানুষকে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে বাঁধ মেরামত প্রায় অসম্ভব।

ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা টেলিগ্রামে জানায়, রুশ বাহিনী 'ভীত হয়ে' বাঁধটি ধ্বংস করেছে। তারা আরও বলেন, এটি নিঃসন্দেহে 'সন্ত্রাসী কাজ ও যুদ্ধাপরাধ'। এসব ঘটনাকে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে তথ্য-প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে।'

আপাতত বাঁধ ধ্বংসে ইউক্রেনের কোনো কৌশলগত সুবিধা আছে বলে ভাবছেন না বিশ্লেষকরা। বরং এতে ক্রিমিয়ায় বহুল প্রতীক্ষিত পালটা আক্রমণ চালাতে ইউক্রেনকে নতুন করে ভাবতে হবে। এই বাড়তি সময়টি রাশিয়া কীভাবে কাজে লাগায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Comments

The Daily Star  | English

Tax authority to split. Will it bring the desired outcome?

Touted as a historic overhaul, the move has ignited debate over whether it will drive meaningful reform or merely deepen the layers of bureaucracy, given the NBR's persistent failure to meet its targets.

14h ago