ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ

১০০ বর্গকিলোমিটার ভূখণ্ড দখলমুক্তের দাবি, রাশিয়া বলছে ইউক্রেন ‘বিপর্যয়ের’ শিকার

দনেৎস্ক অঞ্চলের একটি গ্রামের দখল ফিরে পাওয়ার পর সেখানে হাওইটজার কামান মোতায়েন করেছে ইউক্রেন। ছবি: রয়টার্স
দনেৎস্ক অঞ্চলের একটি গ্রামের দখল ফিরে পাওয়ার পর সেখানে হাওইটজার কামান মোতায়েন করেছে ইউক্রেন। ছবি: রয়টার্স

পাল্টা আক্রমণ করে রাশিয়ার দখল করা ১০০ বর্গকিলোমিটার ভূখণ্ডের দখল ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি করেছে ইউক্রেন। রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের ৬৮তম সপ্তাহে এ সাফল্যের কথা জানাল কিয়েভ।

অপর দিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, পাল্টা আক্রমণ চালানোর সময় 'বিপর্যয়কর' ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে ইউক্রেন এবং চলমান সংঘাতে মস্কোর চেয়ে কিয়েভ পক্ষে হতাহতের সংখ্যা অন্তত ১০ গুণ বেশি। 

গতকাল বুধবার কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

পুতিন আরও বলেন, 'এখন পর্যন্ত কিয়েভের পাল্টা হামলার সব উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। তবে এখনো কিয়েভের সেনাদের আক্রমণ চালানোর সক্ষমতা অটুট রয়েছে।'

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সাবেক প্রশিক্ষক কমান্ডার দিমেত্রিয়াস অ্যান্ড্রু গ্রাইমস জানিয়েছেন, পাল্টা আক্রমণ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

তিনি আল জাজিরাকে বলেন, 'এখন ইউক্রেন রাশিয়াকে ছোট ছোট হামলার মাধ্যমে হেনস্থা করার কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে। এতে তারা হালকা অস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন থেকে শুরু করে কামান পর্যন্ত সব কিছুই ব্যবহার করছে।'

অ্যান্ড্রু জানান, এ ধরনের হামলার উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিপক্ষ বাহিনীকে এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত ও শক্তিশালী হতে না দেওয়া। বিভিন্ন অবস্থানে হামলার কারণে বাহিনীকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মোতায়েন করতে বাধ্য হচ্ছে রাশিয়া। যার ফলে তাদের সরবরাহ লাইন কিছুটা হলেও অরক্ষিত থাকছে।

ইউক্রেন প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সম্মুখ যুদ্ধের তীব্রতা বাড়িয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা পূর্ব দনেৎস্ক অঞ্চলে ৯ জুন ইউক্রেনের স্থলবাহিনীর ৪টি হামলা প্রতিহত করেছে।

ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সের্হেই চেরেভাতি জানান, কিয়েভ বাহিনী বাখমুতের কাছাকাছি স্থানে ২ দিনে প্রায় আড়াই কিলোমিটার এগিয়েছে। রুশ বাহিনীও বিষয়টি স্বীকার করেছে।

এ ছাড়া ইউক্রেনীয় বাহিনী দনেৎস্ক ও ঝাপোরিঝঝিয়ার সংযোগস্থলেও আক্রমণ শুরু করেছে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের প্রাথমিক হামলা প্রতিহত করার কথা জানিয়েছে। তবে ২ দিন পর ওয়াশিংটনভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) জানিয়েছে, 'রুশ সূত্র ও স্যাটেলাইট ছবি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, ইউক্রেনের বাহিনী পশ্চিম দনেৎস্ক ওবলাস্টের ভেলাইকা নোভোসিলকার কাছাকাছি বেশ কিছু গ্রামের দখল নিয়েছে।'

ইউক্রেনের উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়ার জানিয়েছেন, ইউক্রেন এখানেই সবচেয়ে বেশি ভূখণ্ড দখল করতে পেরেছে—যার পরিমাণ ৯০ বর্গকিলোমিটার।

পশ্চিম ঝাপোরিঝঝিয়ায় রুশ প্রতিরক্ষা অনেক সুসংহত হলেও সেখানেও আক্রমণ চালিয়েছে কিয়েভ।

রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু জানান, এ অঞ্চলে ৮ জুন দেড় হাজার সেনা ও ১৫০টি সাঁজোয়া যান নিয়ে রুশ প্রতিরক্ষাব্যুহ ভেদ করার চেষ্টা চালায় কিয়েভ।

তিনি জানান, এ যুদ্ধে ইউক্রেন ৩০টি ট্যাংক ও ৩৫০ জন সেনা হারিয়েছে।

'কামান, উড়োজাহাজ ও ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করে আমরা এই হামলা প্রতিহত করেছি। শত্রুরা ৪ দিক থেকে এগিয়ে এলেও তাদের অগ্রযাত্রা থামানো হয়েছে, যোগ করেন তিনি।

১২ জুন এই যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া পাল্টা আক্রমণ চালায় বলে রুশ সাংবাদিকরা জানান।

ভ্লাদিমির পুতিন | রয়টার্স  ফাইল ফটো
ভ্লাদিমির পুতিন | রয়টার্স ফাইল ফটো

ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ জানিয়েছেন, ৮ ও ৯ জুন; এই ২ দিনের যুদ্ধে রাশিয়া ১ হাজার ৯০০ সেনা হারিয়েছে।

আল জাজিরা যুদ্ধক্ষেত্রে উভয় পক্ষের দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

কিছু বিশ্লেষকের মতে, গেরিলা যুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাফল্য পেলেও প্রথাগত সম্মুখ যুদ্ধে ইউক্রেন অতটা সুবিধা করতে পারছে না।

প্রতিরক্ষা বিষয়ক সাংবাদিক টমাস থেইনার উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক এক যুদ্ধে অন্তত ৩টি রুশ ড্রোন ও ১টি হেলিকপ্টার ইউক্রেনীয় বাহিনীর ওপর দিয়ে উড়ে যায় এবং রুশ কামানের জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের কাজটি সহজ করে দেয়।

ইউক্রেনের সাবেক সামরিক প্রশিক্ষক অ্যান্ড্রু গ্রাইমস আরও জানান, এখনো ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য অনেক কিছু শেখার রয়েছে।

আইএসডব্লিউ জানিয়েছে, ইউক্রেন পাল্টা হামলার জন্য ১২ ব্রিগেড সেনা প্রস্তুত করেছে এবং এখন পর্যন্ত তারা পশ্চিম ঝাপোরিঝঝিয়ায় পুরো রিজার্ভ বাহিনীর ছোট একটি অংশ পাঠিয়েছে।

কাখোভকা বাঁধ ধ্বংস হওয়াতে এ পথে এখনো ইউক্রেন পালটা হামলা চালায়নি।

ইউক্রেনের পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কাখোভকা বাঁধ ধ্বংস হওয়ার পর খেরসনের ৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে।

খেরসনে আক্রমণ চালাতে না পারলেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, তিনি সার্বিকভাবে পালটা হামলা নিয়ে সন্তুষ্ট।

জেলেনস্কি ভিডিও বক্তব্যে বলেন, 'তীব্র যুদ্ধ হচ্ছে, তারপরও আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শত্রু পক্ষের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে এবং ঠিক এটাই আমাদের প্রয়োজন।'

 

Comments

The Daily Star  | English
BNP's stance on president removal in Bangladesh

BNP for polls roadmap in 2 to 3 months

Unless the interim government issues a roadmap to the next election in two to three months, the BNP may take to the streets in March or April next year, say top leaders of the party.

7h ago