ইউক্রেনের পালটা হামলার পঞ্চম দিনে উভয় পক্ষের সাফল্যের দাবি
শুরুতে সরাসরি স্বীকার না করলেও গত শনিবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে পালটা আক্রমণ শুরুর বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির। এরপর ২ পক্ষ থেকেই আসছে পরস্পরবিরোধী তথ্য।
রাশিয়া দাবি করছে, ইউক্রেনের আক্রমণ ব্যর্থ হচ্ছে। আর ইউক্রেনের দাবি, তারা বেশ কিছু রুশ-অধিকৃত অঞ্চলকে স্বাধীন করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
আজ আনুষ্ঠানিকভাবে পালটা হামলা শুরুর পঞ্চম দিনে উভয় পক্ষই সাফল্যের দাবি করেছে।
রুশ শীর্ষ জেনারেল নিহতের দাবি
আজ বুধবার কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পালটা আক্রমণ চালানোর সময় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে শীর্ষ রুশ জেনারেল সের্গেই গোরিয়াচেভ (৫২) নিহত হয়েছেন।
ঝাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে মস্কোর দখলে থাকা অংশের কর্মকর্তা ভ্লাদিমির রোগোভ জানান, রাশিয়ার সেনাবাহিনীর ৩৫তম ইউনিটের চিফ অব স্টাফ মেজর-জেনারেল সের্গেই গোরিয়াচেভ যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয়েছেন।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে এই সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করেনি।
কাখোভকা বাঁধ ও ইউক্রেনের বেঁচে যাওয়া
গত মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কাখোভকা বাঁধ ধ্বংসের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করে বলেন এটি ইউক্রেনের জন্য 'শাপে বর' হয়েছে। রুশ সংবাদ সংস্থা তাস এ তথ্য জানিয়েছে।
পুতিন দাবি করেন, এই বাঁধ ধ্বংস হওয়ায় ইউক্রেনীয় বাহিনী বড় ধরনের রক্তপাতের হাত থেকে বেঁচে গেছে।
ক্রেমলিনে সাংবাদিকদের পুতিন জানান, বাঁধে বোমা বিস্ফোরণ না ঘটালেও কিয়েভের বাহিনী মার্কিনদের কাছ থেকে পাওয়া হিমার্স রকেট দিয়ে বারবার এর ওপর হামলা চালাচ্ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এটি ধ্বংস করে নিপার নদীর পাড়ে বন্যা সৃষ্টি করা এবং তারা সফল হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'তাদের পালটা হামলা আলোর মুখ দেখেনি। কারণ তারা এদিক দিয়ে হামলা চালালে ভালো হতো। আমাদের জন্য ভালো হতো, কারণ এ পথে হামলা করলে তারা খুবই করুণ পরিণতির শিকার হতো। যেহেতু বাঁধ ভেঙে দেওয়ায় বন্যা হলো, তারা আর হামলা চালালো না।'
পুতিন নিশ্চিত করেন, পালটা হামলায় ইউক্রেন কোনো সাফল্যই পায়নি এবং 'বড় ধরনের ক্ষতির' শিকার হয়েছে।
রুশদের ধারণা, ইউক্রেন পালটা হামলায় অন্তত ১৬০টি ট্যাংক ও ৩৬০টি সাঁজোয়া যান হারিয়েছে। এগুলো পশ্চিমের মিত্রদের কাছ থেকে পাওয়া সামরিক উপকরণের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ।
পুতিন জানান, কাখোভকা বাঁধ ধ্বংসের কারণে সৃষ্ট বন্যা মোকাবিলায় রাশিয়া সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে বেসামরিক ব্যক্তিদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ওডেসায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৩
ইউক্রেনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বন্দরনগরী ওডেসায় রাতভর রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৩ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন।
ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু ছিল গুদাম, বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও দোকানপাট।
ইউক্রেনের সাউদার্ন কমান্ড সতর্ক করেছে, কিছু মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকতে পারেন।
কিয়েভের একটি টিভি চ্যানেলে জানানো হয়েছে, কৃষ্ণ সাগরে যুদ্ধ জাহাজ থেকে ওডেসায় ৪টি ক্যালিবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।
ওয়ান প্লাস ওয়ান টিভি আরও জানায়, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ২টি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে। একটি ক্ষেপণাস্ত্র খুচরা বিক্রেতার গুদামে আঘাত করলে সেখানে আগুন ধরে যায়। দোকানের ৩ কর্মচারী নিহত ও ৭ জন আহত হন।
বাণিজ্যিককেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবন, কফির দোকান ও বিপণি বিতানও হামলার মুখে পড়ে। এতে অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন।
ব্লগারদের সঙ্গে পুতিনের বৈঠক
গতকাল মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ১৮ জন প্রখ্যাত সামরিক ব্লগার ও যুদ্ধক্ষেত্রের সংবাদদাতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে পুতিন জানান, ইউক্রেন পালটা হামলায় 'চরম বিপর্যয়ের' মুখে পড়েছে।
তবে পশ্চিমের গণমাধ্যমের দাবি, যেসব ব্লগার ('মাইল্ডব্লগার' নামে পরিচিত) পুতিনের যুদ্ধ কৌশল ও নানান উদ্যোগের সমালোচনা করে থাকেন, তাদেরকে এই বৈঠকে ডাকা হয়নি।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) জানিয়েছে, 'রাশিয়া ব্যর্থ হলে ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠবে। এটি সামলানোর জন্য পুতিন তার প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য সাজানোর চেষ্টা করছেন।'
সংস্থাটি দাবি করে, রুশ প্রেসিডেন্ট সামরিক ব্লগারদের প্রভাব সম্পর্কে জানেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করছেন।
Comments