যুক্তরাজ্যের কাঁচাবাজারে যে কারণে টমেটো নিয়ে ‘টানাটানি’

যুক্তরাজ্যের কাঁচাবাজারে যে কারণে টমেটো নিয়ে ‘টানাটানি’
ছবি: রয়টার্স

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের কাঁচাবাজারে দেখা দিয়েছে এক বিশেষ সংকট। খাবারের তালিকায় বেশ শীর্ষে থাকা টমেটো নিয়েই নাকি টানাটানি চলছে সেখানে। অনেক রেস্তোরাঁর মেন্যু থেকেও বাদ পড়ছে নিত্য ব্যবহৃত এই খাদ্যদ্রব্যটি।

তবে শুধু টমেটো নয়, ক্ষেত্রবিশেষে শসা, লেটুস এসব উপাদানেরও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সংকটের এই খড়গটা অবশ্য টমেটো আর মরিচের উপরেই বেশি নেমে এসেছে। হয়তো অন্যান্য ফল ও শাক-সবজির চেয়ে এগুলোর অপেক্ষাকৃত বেশি জনপ্রিয়তা কোনো বিশেষ প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। 

যুক্তরাজ্যের সর্ববৃহৎ বাজার টেসকো থেকে জানা যায়, একজন ক্রেতা মাথাপিছু হিসেবে ৩টি পর্যন্ত টমেটো, মরিচ ও শসা কিনতে পারবেন। আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী বাজার মরিসনের ক্ষেত্রে বাঁধাধরা আরও বেশি। সেখানে এসব পণ্য  দুটির বেশি কেনার অনুমতি নেই। অন্য বড় কাঁচাবাজারগুলোতেও সংকটের প্রভাব রয়েছে, কিন্তু তারা এখনো কোনো ক্রয়সীমা বেঁধে দেয়নি। তবে এই সংকট সামাল দিতে প্রায় সব স্থানেই ক্রয়সীমা নির্ধারণের সম্ভাবনা রয়েছে। 

কেন এই সংকট? 

শীতের মাসগুলোতে সাধারণত যুক্তরাজ্যে শতকরা ৯৫ ভাগ টমেটো ও ৯০ ভাগ লেটুস আমদানি করা হয়। ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়াম বা বিআরসি প্রদত্ত তথ্য থেকে জানা যায়, এর বেশিরভাগই আসে স্পেন ও উত্তর আফ্রিকা থেকে। কিন্তু এবারের বাজারচিত্রটা ভিন্ন। এই শীতে স্পেনের দক্ষিণাংশে অন্যবারের চেয়ে ঠান্ডা একটু বেশিই পড়েছিল। অন্যদিকে মরক্কোর শস্যক্ষেতগুলোতে দেখা যায় আকস্মিক বন্যার আগ্রাসন। যার কারণে এসব দেশের নিয়মিত রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র অ্যান্ড্রু ওপির মতে, দক্ষিণ ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকার প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে টমেটোসহ কিছু ফল ও সবজি ব্যাপক পরিমাণে নষ্ট হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের কাঁচাবাজারে যে কারণে টমেটো নিয়ে ‘টানাটানি’
দোকানগুলোতে মিলছে না টমেটো। ছবি: রয়টার্স

বছরের এই সময়ে যুক্তরাজ্য স্থানীয় কৃষক এবং নেদারল্যান্ড থেকেও কিছু শাক-সবজি আমদানি করে থাকে। কিন্তু উভয় দেশের কৃষকরাই বিদ্যুতের সাম্প্রতিক উচ্চমূল্যের কারণে শীতকালীন ফসল ফলানোর জন্য গ্রিনহাউজ ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সেখানকার আমদানিও আর আগের মতো হচ্ছে না। 

কতদিন থাকবে এই সংকট?

বিআরসির তথ্যমতে, এই ঘাটতি 'আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ' থাকবে– অন্তত যতদিন যুক্তরাজ্যের নিজস্ব শস্য উৎপাদন সক্রিয় না হয় বা অন্য কোনো বিকল্প যোগানের পথ খুঁজে পাওয়া না যায়। অবশ্য এ নিয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে। শস্য উৎপাদনকারী এক দল মনে করেন, আগামী মে মাসের আগে এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় নেই। যদিও ব্রিটিশ টমেটো উৎপাদনকারী সংস্থা এক্ষেত্রে বেশ আশাবাদী– 'এই ঘাটতি মূলত আমদানিকৃত পণ্যের অভাবের ফলাফল। তবে ব্রিটিশ টমেটোর মৌসুম শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে এবং আমরা মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের মধ্যে বাজারের তাকগুলোতে টমেটো দেখতে পাব।' 

যুক্তরাজ্যের খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী মার্ক স্পেনসার গত সোমবার কাঁচাবাজারের মালিকদের সঙ্গে একটি ভিডিও কলে অংশ নিয়েছিলেন। এ আলাপের পর তিনি মতপ্রকাশ করেন, সমগ্র অঞ্চলের যোগান ব্যবস্থাই আপাতত নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। যদিও বাস্তবে ইউরোপের অন্যান্য দেশের অবস্থা যুক্তরাজ্যের চাইতে ভালো। যুক্তরাজ্যের এমন পরিস্থিতির পেছনে ব্রেক্সিট দায়ী কি না, এ নিয়েও অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। যদিও মূল কারণ হিসেবে এখনো আমদানি কমে যাওয়াকেই চিহ্নিত করা হয়েছে।

মুদ্রার অপর পিঠ

ব্রিটিশ রাজ্যের খাদ্যতালিকায় টমেটোর যেমন জয়জয়কার, ভারতীয় উপমহাদেশ কিংবা বা বাংলাদেশে অতটা নয়। বাংলাদেশে যে টমেটো খাওয়া হয় না, তা নয়। তবে ঠিক মূল খাদ্য হিসেবে নয়– স্বাদবর্ধক হিসেবেই এর ভূমিকা বেশি। উৎসবের খাবারের পাশাপাশি সালাদ বা খাওয়ার শেষে টমেটো চাটনি, আধুনিক সময়ে পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুকরণে ফাস্টফুড বা ভাজাপোড়া জাতীয় খাবারের সঙ্গে সস। খাবারের পাতে এইটুকুই টমেটোর দৌড়। তাই একই ধরনের টমেটো সংকট বাংলাদেশে দেখা দিলে দুশ্চিন্তা হবার কথা নয়। অন্তত ভোক্তাদের জন্য তো নয়ই। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা উল্টো। এই তো গত বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালেই বাংলাদেশের কাঁচাবাজারেও দেখা দিয়েছিল টমেটো ও শসার ঘাটতি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এত সংকটের পরও যুক্তরাজ্যে ঘাটতিকৃত পণ্যগুলোর দাম বৃদ্ধি পায়নি, বরং বেঁধে দেওয়া হয়েছে ক্রয়সীমা। যাতে যথাসাধ্য বেশি মানুষ এই পণ্যটি পরিমিত পরিমাণে সংগ্রহ করতে পারেন, তাই মূল উদ্দেশ্য। অথচ বাংলাদেশে চলাকালীন একই ধরনের সংকটে দেখা যায় এসব পণ্যের চড়া মূল্যবৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত মজুদ করার মানসিকতা– যা কিনা বাজার কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ী সংস্থা ও ভোক্তাসমাজ, সব পক্ষকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। 

সংকটকালে নেতৃস্থানীয় লোকেরা সব অঞ্চলেই বোধকরি এক পথে চিন্তা-ভাবনা করে থাকেন। একসময় বাংলাদেশে যেমন ভাতের বদলে আলু খেতে বলা হয়েছিল, অনেকটা সেই সুর শোনা গেল যুক্তরাজ্যেও। দেশটির খাদ্য, পরিবেশ ও গ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা টেরেইজ কফি জনগণকে ঘাটতিতে থাকা খাদ্যপণ্য, যেমন টমেটো বা লেটুসের দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে শালগম খাওয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

তথ্যসূত্র: বিজনেসটুডে, বিবিসি, টেলিগ্রাফ

 

Comments

The Daily Star  | English
August 5 declared as July Mass Uprising Day

Govt declares 3 new days for nat’l observance

The interim government yesterday declared August 5 as “July Mass Uprising Day” to commemorate the student-led protests that toppled the Sheikh Hasina regime that day last year.

8h ago