মন্টেরি পার্কের বন্দুক হামলার সন্দেহভাজন ব্যক্তির আত্মহত্যা

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের মন্টেরি পার্কে বন্দুক হামলায় ১০ ব্যক্তিকে হত্যার করেন হু কান ত্রান (৭২)। ছবি: লস অ্যাঞ্জেলস কাউন্টি শেরিফের কার্যালয়ের টুইটার পেজ
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের মন্টেরি পার্কে বন্দুক হামলায় ১০ ব্যক্তিকে হত্যার করেন হু কান ত্রান (৭২)। ছবি: লস অ্যাঞ্জেলস কাউন্টি শেরিফের কার্যালয়ের টুইটার পেজ

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের মন্টেরি পার্কে বন্দুক হামলার ঘটনায় ১০ ব্যক্তিকে হত্যার সন্দেহভাজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। লস অ্যাঞ্জেলসের কাছে অবস্থিত এই শহরে অসংখ্য এশীয় বংশোদ্ভূত মানুষের বসবাস রয়েছে।

আজ সোমবার বার্তাসংস্থা এএফপি স্থানীয় শেরিফের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে পুলিশ এগিয়ে গেলে তিনি নিজের ওপর গুলি ছুঁড়ে আত্মহত্যা করেন।

শনিবার মন্টেরি পার্কে এক সন্দেহভাজন ব্যক্তি একটি নাচের স্টুডিও ও ক্লাবে অতর্কিতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোর পর তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য বড় আকারে পুলিশি অভিযান শুরু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বন্দুকধারী নির্বিচারে গুলি করেন এবং তার কাছে গোলাবারুদের কোনো অভাব ছিল না।

পুলিশ জানায়, ৫ নারী ও ৫ পুরুষ মারা গেছেন। তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ৫০ ও ৬০ এর কোঠায়। এছাড়া আরও প্রায় ১০ জন আহত হয়েছেন ।

সন্দেহভাজন বন্দুকধারীকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। হু কান ত্রান (৭২) এ ঘটনার পর অল্প দূরত্বে অবস্থিত আরেকটি নাচের অনুষ্ঠানে যান, কিন্তু সেখানে উপস্থিত জনতা তাকে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নেয়।  এরপর সেখান থেকে পালিয়ে যান হু কান ত্রান।

লস অ্যাঞ্জেলস কাউন্টির শেরিফ রবার্ট লুনা জানান, হামলার কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ একটি নিখোঁজ ভ্যান অনুসরণ করে। ভ্যানটিকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে টোর‍্যান্স নামের জায়গায় খুঁজে পাওয়া যায়।

পুলিশের কর্মকর্তারা ভ্যানের দিকে আগাতে থাকলে গাড়ির ভেতর থেকে একটি গুলির শব্দ শোনা যায়।

লুনা বলেন, 'সন্দেহভাজন ব্যক্তি নিজের ওপর গুলি চালান। তাকে ঘটনাস্থলেই মৃত বলে ঘোষণা দেওয়া হয়'।

'আমি নিশ্চিত করছি, গোলাগুলির ঘটনার আর কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তি নেই', যোগ করেন তিনি।

লুনা আরও জানান, এই ভয়াবহ হামলার কারণ এখনও রহস্যে আবৃত।

দ্বিতীয় নাচের ক্লাবে উপস্থিত ২ ব্যক্তির বিশেষ প্রশংসা করেন লুনা।

এই নাচের ক্লাবেই হামলা চালিয়ে ১০ ব্যক্তিকে হত্যা করেন হু কান ত্রান। ছবি: রয়টার্স
এই নাচের ক্লাবেই হামলা চালিয়ে ১০ ব্যক্তিকে হত্যা করেন হু কান ত্রান। ছবি: রয়টার্স

'আমি জানাতে পারি, সন্দেহভাজন ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। সম্ভবত তিনি আরও মানুষ হত্যার উদ্দেশ্যে সেখানে যান। তবে সম্প্রদায়ের ২ সাহসী সদস্য সিদ্ধান্ত নেন, তারা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে এই ব্যক্তিকে নিরস্ত্র করবেন। তারা সেই ব্যক্তির কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেন এবং তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান', যোগ করেন লুনা।

লুনা জানান, 'সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছে সেমি-অটোমেটিক অ্যাসল্ট পিস্তল ছিল। যার সঙ্গে একটি বড় ধারণক্ষমতার ম্যাগাজিন যুক্ত ছিল'।

মন্টেরি পার্কে প্রায় ৬০ হাজার লোকের বসবাস, যাদের বেশিরভাগই এশীয় বংশোদ্ভূত।

লুনা জানান, 'আমরা এখনও জানি না এই হামলাকে আইনের দৃষ্টিতে ঘৃণা অপরাধ বলা যায় কী না।'

পরবর্তীতে নিহতদের স্মরণে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

রোববার সন্ধ্যায় দেওয়া এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, 'আমরা এই অর্থহীন হামলার কারণ সম্পর্কে এখনো অনেক কিছুই জানি না, তবে এটুকু জানি যে অনেক পরিবার আজ রাতে শোকাহত, অথবা প্রার্থনা করছে যে তাদের প্রিয়জনের আঘাত সেরে উঠবে'।

গত বছর একই কায়দায় এক চীনা-মার্কিন বন্দুকধারী ক্যালিফোর্নিয়ার তাইওয়ানভিত্তিক গির্জায় হামলা করেন। হামলায় ১ ব্যক্তি নিহত ও ৫ জন আহত হন।

মার্কিন বিচার বিভাগ জানিয়েছে, ২০২১ সালে ৭ হাজার ঘৃণা অপরাধের বিষয়টি তাদের গোচরে এসেছে। এর দুই তৃতীয়াংশই জাতিগত বিদ্বেষ সংক্রান্ত।

গত মে মাসে টেক্সাসের উভালদে শহরের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হামলায় ২২ জন নিহত হওয়ার পর এটাই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনা।

যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতা বেশ বড় একটি সমস্যা। গত বছর এ ধরনের ৬৪৭টি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোতে অন্তত ৪ ব্যক্তি গুলির আঘাত পেয়েছেন অথবা নিহত হয়েছেন। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ ওয়েবসাইট এই তথ্য জানিয়েছে।

এরপর লুইজিয়ানার নাইটক্লাবে বন্দুক হামলায় ১২ ব্যক্তি আহত হন।

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গুলির আঘাতে সৃষ্ট ক্ষত থেকে ৪৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়য়। তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

10h ago