বৈষম্য বাড়ছেই

​​​​​​​ ২০২১ সালে বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয়ের ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হাতে কুক্ষিগত। বিপরীতে নিচু তলার ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে আছে মোট আয়ের ১৭ দশমিক ১ শতাংশ। যা দারিদ্রতার পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি অসাম্যের দেশ হিসেবে রূপ দিয়েছে।

২০২১ সালে বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয়ের ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হাতে কুক্ষিগত। বিপরীতে নিচু তলার ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে আছে মোট আয়ের ১৭ দশমিক ১ শতাংশ। যা দারিদ্রতার পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি অসাম্যের দেশ হিসেবে রূপ দিয়েছে।

এমন চিত্র উঠে এসেছে প্যারিসের ওয়ার্ল্ড ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাব কর্তৃক প্রকাশিত অসাম্য প্রতিবেদন 'ওয়ার্ল্ড ইনইক্যুয়ালিটি রিপোর্ট-২০২২'-এ, যেখানে বাংলাদেশের কোনো র‌্যাঙ্কিং করা হয়নি।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের মোট জাতীয় আয়ের ২০ শতাংশই কুক্ষিগত করে রেখেছে উপর তলার ১ শতাংশ মানুষ। সে হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান খানিকটা উঁচুতে।

অসাম্য সূচকের হালনাগাদ তথ্য নিয়ে গত ৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয়ের ৪৪ শতাংশ আছে ১০ শতাংশ মানুষের হাতে।

আগের বছরের তুলনায় এই পরিসংখ্যানের খুব বেশি রকমফের না হলেও এতে দেখানো হয়েছে যে কীভাবে গত শতকের আশির দশক থেকে বাংলাদেশে আয় বৈষম্য বাড়ছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে করপূর্ব জাতীয় আয়ের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল ১ শতাংশ মানুষের হাতে। বিপরীতে নিচু তলার ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে ছিল সম্পদের ২০ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ধনীদের সংখ্যা।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, 'প্রবণতাটি নতুন নয়...অন্তর্ভূক্তিমূলকভাবে জিডিপি না বাড়ার কারণে কয়েক বছর ধরে বৈষম্য বাড়ছে।'

সর্বশেষ ২০১৬ সালে প্রকাশিত গৃহস্থালি আয় ও ব্যয়ের জরিপ এর একটি উদ্বেগজনক অগ্রগতি তুলে ধরেছে।

সেলিম রায়হান বলেন, 'ওই জরিপে দেখা গেছে, দেশে তেমন কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে যথেষ্ট ব্যয় করা হয়নি। বৈষম্য কমানোর জন্য যেগুলো মৌলিক বিষয়।'

অসাম্য প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১ লাখ মানুষের জন্য ৩৩টি আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) শয্যা ছিল। তবে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এর সংখ্যা ছিল ২টির কাছাকাছি।

সেলিম রায়হানের মতে, ক্রমেই বাড়তে থাকা এই বৈষম্যের আরেকটি মূল কারণ হলো দুর্নীতি। তিনি বলেন, 'আমাদের অবশ্যই সিস্টেমের প্রতিটি পর্যায়ে ছড়িয়ে থাকা দুর্নীতির সমস্যা দূর করতে হবে। এ ছাড়া আমাদের কর কাঠামোও দুর্বল।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমের ভাষ্য, এটি একটি সাধারণ তত্ত্ব যে, কোনো দেশ অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত বাড়তে থাকলে সেখানে বৈষম্যও বাড়বে।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে বৈষম্যের দিক থেকে এই জায়গাটি স্থিতিশীল আছে। আর আমরা সড়ক-মহাসড়কের মাধ্যমে সংযুক্তি বাড়ানো, বিদ্যুৎ সুবিধা, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের সুবিধা দিয়ে এই ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করছি।'

প্রতিমন্ত্রী জানান, সরকার যেহেতু শিল্পের ওপর জোর দিয়ে বেশি বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টা করছে, সেহেতু এই বৈষম্য আর বাড়বে না।

তিনি বলেন, 'আমরা দুর্নীতি কমানোর চেষ্টা করছি, যা আমাদের দেশের একটি ঐতিহাসিক সমস্যা। কিন্তু আমরা একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ দুর্নীতি দমন কমিশন তৈরি করেছি। যার দ্বারা অনেক সরকারপন্থীও মামলার মুখোমুখি হচ্ছেন।'

অসাম্য প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ণকালীন কর্মীরা বছরে প্রায় ২ হাজার ১০০ ঘণ্টা কাজ করেন। ধনী দেশগুলোতে এর পরিমাণ ১ হাজার ৬০০ ঘণ্টা।

অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

9h ago