যুদ্ধকালীন মনোবল বাড়ানোর হাতিয়ার আইসক্রিম

ছবি: রিপলি'স

আপনি কি জানেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আইসক্রিম যুদ্ধকালীন মনোবল বাড়ানোর একটি 'কমফোর্ট ফুড' হিসেবে বিভিন্ন সময় ব্যবহৃত হয়েছে? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এই ডেজার্টটিকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে। কারণ এটি সৈন্যদের মনোবল বৃদ্ধিতে দুর্দান্ত ছিল। সে সময়ে এটি আমেরিকার প্রতীক হিসেবে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে ইতালির মুসোলিনি এই প্রতীকের সঙ্গে সম্পর্ক এড়াতে আইসক্রিম নিষিদ্ধ করেছিলেন।

এই আরামদায়ক খাবারটি একটি শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া তৈরি করে যা অবচেতনভাবে শান্ত স্মৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়। মনে করা হয় এটি মানুষকে অতিবাহিত ভাল সময়, বাড়ির আরামের স্মৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়। এটি শৈশবের সুখের স্মৃতিকে যেমন ছোটবেলায় বাসায় আরামে ডেজার্ট খাওয়ার স্মৃতিকে ডেকে আনে এবং আমাদের ভাল অনুভব করায়। বিশেষ করে সামরিক বাহিনীতে যাদেরকে দীর্ঘদিন যুদ্ধে মোতায়েন করা হয়, তাদের মানসিক স্বস্তির জন্য এটি দেওয়া হত।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, নৌবাহিনীর জাহাজে অ্যালকোহল নিষিদ্ধ করা হয়, যার ফলে উচ্চ-পদস্থ মিলিটারি কর্মকর্তারা তাদের সৈন্যদের খুশি রাখার একটি উপায় বের করেন। সমাধানটি ছিল অ্যালকোহলের পরিবর্তে মিষ্টি একটি উপাদেয় খাদ্য আইসক্রিম। নৌবাহিনীর একটি জাহাজে আইসক্রিম রাখা কঠিন ছিল, কিন্তু জাহাজে থাকা ব্যক্তিরা এই কাজটিকে বেশ গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিল। তারা সেনাবাহিনীর রেফ্রিজারেটেড রণতরীকে একটি আইসক্রিম কারখানায় রূপান্তরিত করেছিল!

ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আইসক্রিম আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠে সৈন্যদের মধ্যে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সমস্ত শাখা তাদের সৈন্যদের জন্য কিছু পরিমাণে হলেও আইসক্রিম প্রদান করতো। মার্কিন নৌবাহিনীর কিছু আকর্ষণীয় আইসক্রিম প্রকল্প ছিল। একটি কংক্রিট রণতরীকে একটি ভাসমান আইসক্রিম কারখানায় রূপান্তর করতে ১ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা তার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত একটি ঘটনা। এই ভাসমান কারখানা ২ হাজার গ্যালনের বেশি আইসক্রিম ধারণ করতে পারতো এবং প্রতি ৭ মিনিটে ১০ গ্যালন আইসক্রিম তৈরি করতে পারতো। যে জাহাজগুলোতে আইসক্রিম তৈরির সরঞ্জাম ছিল না সেদিকে  এই কারখানাকে নিয়ে যাওয়া হতো। এমনকি ইউএস আর্মি যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইনে মিনি আইসক্রিম কারখানা তৈরি করে সেখান থেকে ফক্সহোলে অবস্থানরত সৈন্যদের আইসক্রিম সরবরাহ করতো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিমান দুর্ঘটনায় আহত পাইলটদের উদ্ধারের কোনো ভাল উপায় ছিল না। তখন প্রত্যেক ফিরে আসা পাইলটের জন্য একটি অনুদানের প্রস্তাব দেওয়া হয় আর তা হচ্ছে আইসক্রিমে! সেই সময় যুদ্ধকালীন এই সুস্বাদু ডেজার্টটি ছিল বেশ বিরল। আর সাধারণ সৈনিকরা সহজে এটি পেতেনও না। তাই এর জন্য অনেকেই এগিয়ে আসে পাইলটদের উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনার জন্য।

একটি মজার ঘটনা থেকে দেখা যায়, আইসক্রিম এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যে, নাবিকরা তাদের জাহাজ ডুবে যাওয়ায় সময় যে যতটুকু পারে আইসক্রিম সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ১৯৪২ সালের মে মাসে, ইউএসএস লেক্সিংটন 'ব্যাটেল অফ কোরাল সি' যুদ্ধের সময় গুরুতরভাবে আক্রমণের শিকার হয়। সেখানে ২০০ জনেরও বেশি ক্রুম্যান মারা যান।

নৌবাহিনীর প্রবীণ ভেটেরান মেরলে লেবস বলেন, জাহাজটি পরিত্যাগ করার আদেশের পরে, নাবিকরা ফ্রিজারে ঢুকে পড়ে এবং জাহাজের ভিতর হতে ঝাঁপ দেওয়ার আগে যতটুক সম্ভব নিজেদের আইসক্রিম খেয়ে ফেলে।

Comments

The Daily Star  | English

'Why should an innocent person be punished?' says Jahangir on Hamid's arrival

The home adviser says Hamid will face legal consequences only if an investigation finds him guilty

4h ago