বাজারে চিনির দামও বাড়তি

চিনি
চিনি। ছবি: সংগৃহীত

তেল, চাল ও গমের পর এবার চিনি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় বাজারে এর দাম বাড়তে শুরু করেছে। চিনির দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা ও পাইকারি পর্যায়ে মণ প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনায় উৎপাদন ব্যহত হওয়া এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে গম ও ভোজ্যতেলে ভয়াবহ খাদ্য সংকট দেখছে বিশ্ব। এরইমধ্যে ভারতের চিনি রপ্তানি সীমিত করার খবরে সংকট আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

প্রতিবেশী দেশটি একটি সীমা আরোপ করে বলেছে, তারা নিজেদের বাজারে প্রাপ্যতা ও মূল্যের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য ১ জুন থেকে মাত্র ১ কোটি টন চিনি রপ্তানির অনুমতি দেবে।

২০২০-২১ অর্থবছরে ব্রাজিলের পর চিনির দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশ ভারত ৭০ লাখ টন চিনি রপ্তানি করেছে।

আমাদের নয়াদিল্লি সংবাদদাতা জানান, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশও দেশটির চিনির অন্যতম ক্রেতা।

বাংলাদেশ চিনি আমদানির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মতে, দেশে বছরে প্রায় ১৮ লাখ টন পরিশোধিত চিনির প্রয়োজন হয়।

এর প্রায় ৯৮ শতাংশ আমদানি করা হয়। আমাদানির বেশিরভাগই ব্রাজিল থেকে আসে।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) অধীনে থাকা রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলো চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আখ থেকে ১৯ হাজার ৫০০ টন চিনি উৎপাদন করেছে।

কাস্টম হাউস, চট্টগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ ১০ মাসে ১ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৪ লাখ ৮৫ হাজার টন পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে।

বর্তমানে অপরিশোধিত চিনিতে প্রতি টনে ৩ হাজার টাকা শুল্ক, ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও ৪ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হয়।

গতকাল বুধবারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক বছরে চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ।

ডিলারদের কাছ থেকে সরবরাহ কমতে থাকায় গতকাল ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে মন প্রতি চিনির পাইকারি মূল্য ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে চিনির দাম ৩ দিন আগে ২ হাজার ৭৭০ টাকা থেকে ২ হাজার ৭৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮৫০ থেকে ২ হাজার ৮৩৫ টাকা মণ দরে।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি খুচরা বাজারেও দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ৫ টাকা বেড়ে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় পৌঁছেছে।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান দাবি করেন, বাজারে পণ্যের কোনো সংকট নেই। তবে, ডিলাররা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, মিল থেকেও সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর কাওরান বাজারের ৭ জন খুচরা বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত এক মাস ধরে একই দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে এবং ডিলাররা এখন পর্যন্ত তাদের মূল্যবৃদ্ধির কথা জানায়নি।

রাজধানী মিরপুরের বর্ধিত পল্লবী এলাকার মামুন জেনারেল স্টোরের মালিক নুরুল আলম শিকদার জানান, ২ দিন আগে এক কেজি খোলা চিনির দাম ছিল ৮০ টাকা। গতকাল তিনি বিক্রি করেছেন ৮৫ টাকায়। ১ কেজির প্যাকেটের দাম ছিল ৮৫ টাকা, যা ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, দাম বৃদ্ধির কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ডিলাররা তাকে বলতে পারেনি।

একটি রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান জানায়, ভারতের রপ্তানি সীমিত করার ঘোষণা বিশ্ববাজারে প্রভাব ফেলবে।

দেশের বড় একটি চিনি পরিশোধন প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল জানান, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এ ছাড়া, তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, বর্তমানে বাজারে চিনি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য রয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চিনির দাম আরও বৃদ্ধির ইঙ্গিত রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Wrap up polls preparations by December

Chief Adviser Muhammad Yunus yesterday instructed all relevant authorities to complete preparations by December for the upcoming national election.

41m ago