কর উদ্যোগ: ধনীদের স্বস্তি, অন্যদের বোঝা

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করতে সংসদে প্রবেশ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ছবি: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সৌজন্যে

গত কয়েক মাসে জীবনযাপনের খরচ বাড়তে থাকায় সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন।

তাদের যুক্তি, করমুক্ত আয়সীমা বাড়ালে অপেক্ষাকৃত কম আয়ের পরিবারগুলো জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান খরচ কিছুটা পোষাতে পারবে। তাদের ক্রয়ক্ষমতাকে কিছু পরিমাণে সুরক্ষা দিতে পারবে।

তবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে তাদের জন্য আয়করে কোনো সুখবর নেই। কারণ করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি।

এর অর্থ হচ্ছে, একজন মানুষের মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকার বেশি হলেই তাকে আয়কর দিতে হবে।

আয়ের পরিমাণ করের হার ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করের হারেও কোনো পরিবর্তন আসেনি।

তবে ব্যক্তি পর্যায়ে বিনিয়োগের অনুমোদন যোগ্য সীমা আয় নির্বিশেষে কমানো হয়েছে।

আগামী অর্থবছরে একজন ব্যক্তি তার মোট আয়ের ২০ শতাংশ বিভিন্ন ইনস্ট্রুমেন্টে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকৃত অংকের ওপর ১৫ শতাংশ কর রেয়াত পাবেন।

চলতি অর্থবছরে বিনিয়োগযোগ্য আয়সীমা ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে।

একই সঙ্গে যাদের ১৫ লাখ টাকার বেশি আয়, তাদের জন্য কর রেয়াতের হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এই পরিবর্তনে অপেক্ষাকৃত কম আয়ের অর্থাৎ নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত করদাতারা আগের চেয়ে রেয়াত কম পাবেন। ফলে তাদের ওপর করের চাপ বাড়বে।

অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত বেশি আয়ের করদাতা বা উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা কর রেয়াত বেশি পাবেন।

উদাহরণস্বরূপ, বিদায়ী বছরে ৬ লাখ টাকা উপার্জনকারী একজন করদাতা বিনিয়োগের অনুমোদিত ২৫ শতাংশ হারে তার মোট আয়ের ওপর ২২ হাজার ৫০০ টাকা কর রেয়াত পেতেন।

প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগের অনুমোদিত সীমা কমায় তিনি কর রেয়াত পাবেন ১৮ হাজার টাকা। ফলে করদাতার ওপর করের বোঝা বাড়বে এবং তার হাতে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য কম টাকা থাকবে।

অপরদিকে, একজন ব্যক্তি যদি বছরে ২০ লাখ টাকা উপার্জন করেন, তাহলে তিনি ১৫ শতাংশ রেয়াতের সুবিধা নিয়ে আগামী অর্থবছরে ৬০ হাজার টাকা কর রেয়াতের সুবিধা পাবেন। এতদিন পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে ৫০ হাজার টাকা রেয়াত পেতেন তিনি। অর্থাৎ তাদের ওপর করের ভার কমবে।

তবে এ ধরনের পরিবর্তনে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।

চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং প্রতিষ্ঠান স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোং এর অংশীদার স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, 'বর্ধমান মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে এই অতিরিক্ত কর (নিম্ন আয়ের করদাতাদের জন্য) বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।'

তিনি আরও বলেন, 'এটি মধ্যম আয়ের মানুষের প্রতি অন্যায্য, বিশেষ করে যারা বছরে ১০ লাখ টাকার মতো আয় করেন। এতে করদাতাদের হাতে খরচ করার মতো টাকার পরিমাণ কমে যাবে।'

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান জানান, রপ্তানি নির্ভর ও অভ্যন্তরীণ বাজারের ওপর নির্ভরশীল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উভয়ের জন্যই করপোরেট কর কমানো হয়েছে।

তিনি বলেন, 'কিন্তু আমরা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের করদাতাদের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ব্যতিক্রম বা রেয়াত দেখছি না। আমি অবাক হয়েছি। এটা তো তাদের সঙ্গে একধরনের প্রতারণার সামিল।'

তিনি আরও বলেন, 'মধ্যবিত্তরা কোনো ধরনের সহায়তা পান না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, তারা এখন যে ধরনের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সেটার প্রতি কারও সহমর্মিতা নেই।'

সিপিডি খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ও মহামারির কারণে আয় কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করার সুপারিশ করেছিল।

আগামী বছরে ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকার পরে পরবর্তী এক লাখ টাকা আয়ের ওপর ৫ শতাংশ কর দিতে হবে।

সিপিডি সুপারিশ করেছিল, করমুক্ত আয় পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫ শতাংশ হারে কর আরোপ করার।

তবে সেই সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়নি।

যাদের বেশি আয় তাদের কাছ থেকে বেশি হারে কর আহরণের মাধ্যমে সমাজে কর ব্যবস্থায় ন্যায্যতা আনার জন্য সিপিডি সর্বোচ্চ করের হার ৩০ শতাংশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল।

২০২০-২১ অর্থবছরে এনবিআর এই হার ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনে। সর্বোচ্চ কর হার বাড়ানো হয়নি। একই ভাবে ধনীদের সম্পদ কর সারচার্জও বাড়ানো হয়নি। এর অর্থ হচ্ছে, ধনাঢ্য করদাতাদের তাদের সম্পদের ওপর কোনো ধরনের বাড়তি সারচার্জ দিতে হবে না। টানা ২ বছর ধরে এনবিআর এই নীতিমালা অপরিবর্তিত রেখেছে।

কর কর্তৃপক্ষ ২০১১-১২ অর্থবছরে সম্পদের বিপরীতে করের বিকল্প হিসেবে সারচার্জ চালু করে, যাতে সমাজের ধনী শ্রেণীর কাছ থেকে আরও বেশি পরিমাণে কর আদায় করা যায়।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
government decision to abolish DSA

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

12h ago