মেগা প্রকল্পের ফল আসতে শুরু করেছে, আছে ঋণ পরিশোধের চিন্তাও

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশের যোগাযোগ ও পরিবহন অবকাঠামোতে বিপুল পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি বড় উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়।

পরবর্তীতে এই তালিকায় বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আরও কয়েকটি মেগা প্রকল্প যুক্ত হয়। সরকার বছরের পর বছর ধরে প্রকল্পগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকা ঢেলেছে, যার বেশিরভাগই এসেছে বিদেশি ঋণ থেকে।

তবে দুর্বল পরিকল্পনা, অর্থায়নে অনিশ্চয়তা ও করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পগুলোর ব্যয় ও সময়সীমা একাধিকবার সংশোধন করা হয়।

শেষ পর্যন্ত দেশের মানুষ এসব প্রকল্প থেকে শিগগির উপকৃত হতে যাচ্ছে। কেননা, এসব প্রকল্পের মধ্যে বেশ কিছু ১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন অর্থবছরে চালু হবে।

আগামী ২৫ জুন দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এর সূচনা হতে যাচ্ছে। ডিসেম্বরেই দেশের প্রথম মেট্রোরেল আংশিকভাবে চালু হওয়ার কথা রয়েছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সংযোগ প্রকল্প চালু হওয়ার পাশাপাশি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের একটি ইউনিট ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে উৎপাদনে যেতে পারে।

৮টি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের মধ্যে ৪টির কাজ শেষ হওয়ার পথে। ফলে, নতুন বাজেটে সেসব প্রকল্পের জন্য বাজেট বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

একইভাবে, আগামী অর্থবছরে আরও বেশ কয়েকটি নতুন বড় প্রকল্পের ভৌত কাজ শুরু হওয়ার কথা আছে। পাশাপাশি কিছু চলমান প্রকল্পের গতি বাড়বে। ফলে, সেসব প্রকল্পে অর্থায়ন বাড়বে।

ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-১ নামে পরিচিত দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল প্রকল্প, এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট), ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্প ও ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ আগামী অর্থবছরে শুরু হতে পারে।

আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কিছু প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণের অর্থ পরিশোধ শুরু হবে। কাজেই, এখন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মেগা স্ট্রাকচারগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। সেইসঙ্গে চলমান প্রকল্পগুলোর কাজের গতি বাড়াতে হবে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য রেকর্ড ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনা মহামারির প্রভাবে দেশ সংকটের মুখে রয়েছে।

প্রস্তাবিত এডিপি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় ৯ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, '২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত মেগা প্রকল্পগুলোর সার্বিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৮ দশমিক ৬০ শতাংশে।'

তিনি জানান, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল ও ঢাকা বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ীর কাছে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দ্রুতই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, 'পায়রা সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ আরও কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ শেষ হলে তা দেশের অগ্রগতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।'

কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে সরকার ধীরে চলার নীতি গ্রহণ করবে। বিপরীতে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বাড়বে।

৮টির মধ্যে ৭টি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প—পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, এমআরটি লাইন-৬, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর— আগামী অর্থবছরে ৩৩ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা পাবে। যা চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বরাদ্দের চেয়ে ২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা কম।

আগামী অর্থবছরের জন্য মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প ছাড়া বাকি ৬টি প্রকল্পের বরাদ্দ কমেছে। অপর ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ অর্থ এডিপি থেকে আসে না।

বিপরীতে, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫, ঢাকা-সিলেট ৪ লেন প্রকল্প, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু, ঢাকা বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি হবে।

এসব প্রকল্পে ১৯ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৮ হাজার ৪১১ কোটি টাকা।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেলটি চলতি বছরের ডিসেম্বরে উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এটি বড় অংকের বরাদ্দ পাবে।

তবে, ৩ বছরেরও বেশি সময় আগে অনুমোদিত প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের বাংলাদেশ রেলওয়ের জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডাবল লাইন এবং আখাউড়া-সিলেট রেল সম্প্রসারণ প্রকল্প অর্থায়নের কারণে অনিশ্চয়তায় পড়েছে। আগামী অর্থবছরে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী প্রকল্প পাচ্ছে মাত্র ৪৭ কোটি টাকা। অন্য প্রকল্পটি কোনো বরাদ্দ পাচ্ছে না।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

7h ago