‘বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার’
বাংলাদেশে বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
আজ রোববার জাতীয় নির্বাচন কমিশনে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সংলাপে এ কথা বলেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার বলেন, 'আজকের এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আপনারা আমাকে আমন্ত্রণ করায় নিজেকে ধন্য মনে করছি। বিশেষভাবে আজ এই সমাবেশে বর্তমান ও সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের উপস্থিতি আমাকে উদ্দীপিত করেছে।'
'আমার মতে আগামী জাতীয় নির্বাচনের একটাই চ্যালেঞ্জ। তা হলো, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করা। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। অন্যদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন বিশ্বমানের হতে হবে। বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার। গ্রহণযোগ্য সরকারই কেবল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারে।'
'আমাদের দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় জাতীয় নির্বাচনের প্রতিটি আসনে অধিষ্ঠিত সংসদ সদস্যদের পদে বহাল রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারনা বাতুলতা মাত্র। নির্বাচনের পূর্বে সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ না করলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, অর্থাৎ সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।'
'জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের তাদের নিজস্ব এলাকায় রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়ে থাকে। জেলা প্রশাসকের বদলে নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তাদের স্থলাভিষিক্ত করা প্রয়োজন। যদি একান্তই জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করতে হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে তাদের ভিন্ন জেলায় বদলি করা আবশ্যক।'
'বর্তমানে সংলাপের যে ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা আমার কাছে গতানুগতিক মনে হয়। বিগত কমিশনগুলোর সংলাপ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আমন্ত্রিত সুধীজন প্রায় একই ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। ইভিএম বা ভোটকেন্দ্রের পাহারা এই মুহূর্তের চ্যালেঞ্জ নয়।'
'আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করতে হবে। পুলিশের কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটর ও নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক।'
'আমি মনে করি, অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সংলাপ প্রয়োজন। আমি যে রূপরেখা উপস্থাপন করলাম, তার বাস্তবায়ন করতে হলে সংবিধান সংশোধন করা অপরিহার্য। ২ এমপি অর্থাৎ মানি পাওয়ার ও মাছল পাওয়ারকে প্রতিহত করতে হবে। অন্যদিকে নির্বাচনি আচরণবিধি ও অন্যান্য বিধি-বিধান পরিপালনে শূন্য সহিঞ্চু নীতির কোনো বিকল্প নেই। সংবিধান সংশোধন না করা হলে নির্বাচনি প্রক্রিয়ার পরিবর্তন করা যাবে না। নির্বাচনি প্রক্রিয়ার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।'
Comments