স্নায়ুযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা-ব্যবহারের ঝুঁকি বাড়ছে
আগামী কয়েক বছরে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর কাছে থাকা পারমাণবিক অস্ত্রের পরিধি বাড়ছে বলে মত দিয়েছে বৈশ্বিক সংঘর্ষ ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কাজ করা এক শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
আজ রোববার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৫০ থেকে ১৯৮০'র দশকে চলমান স্নায়ুযুদ্ধের পর এবারই প্রথম এমনটি ঘটতে যাচ্ছে। এ ছাড়াও, গত কয়েক দশকের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকিও এখন সবচেয়ে বেশি।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) নতুন গবেষণায় জানা গেছে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন ও কিয়েভের প্রতি পশ্চিমের দেশগুলোর সমর্থন বিশ্বের ৯ পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারির মধ্যে বিশ্বে পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা কিছুটা কমলেও, শিগগির উত্তেজনা কমানোর উদ্যোগ না নেওয়া হলে গত কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী গণবিধ্বংসী এই অস্ত্রের সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
এসআইপিআরআই'র ওয়েপন অব মাস ডেসট্রাকশন প্রকল্পের পরিচালক উইলফ্রেড ওয়ান ২০২২ সালের ইয়ারবুকে বলেন, 'পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী প্রতিটি দেশ তাদের অস্ত্রাগারের উন্নয়ন বা পরিবর্ধন করছে। বেশিরভাগ দেশই তাদের সামরিক কৌশলে পরমাণু অস্ত্রের ভূমিকাকে আরও প্রাধান্য দিচ্ছে।'
'এটা খুবই উদ্বেগজনক বিষয়,' যোগ করেন তিনি।
ইউক্রেনে 'বিশেষ সামরিক অভিযানের' ৩ দিনের মাথায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশের পরমাণু অস্ত্র বহনকারী বাহিনীকে উচ্চ সতর্কতায় থাকতে বলেন।
পুতিন হুমকি দেন, 'আমাদের পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে এমন পরিণতি হবে যা তারা তাদের ইতিহাসে কখনো দেখেনি।'
রাশিয়ার কাছে পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। তাদের কাছে মোট ৫ হাজার ৯৭৭টি ওয়ারহেড আছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে প্রায় ৫৫০টি বেশি।
এসআইপিআরআই'র তথ্য অনুযায়ী, এই ২ দেশ মিলে বিশ্বের ৯০ শতাংশ পরমাণু অস্ত্রের মালিক। চীনও তাদের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। আনুমানিক ৩০০টিরও বেশি নতুন মিসাইল সাইলো নির্মাণ করছে মহাপ্রাচীরের দেশটি।
প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা ১৩ হাজার ৮০টি থেকে কমে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ১২ হাজার ৭০৫টিতে এসে দাঁড়ায়।
প্রায় ২ হাজার ৭৩২টি পরমাণু অস্ত্র ইতোমধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র ও উড়োজাহাজের সঙ্গে যুক্ত আছে। আরও ২ হাজার অস্ত্র যেকোনো মুহূর্তে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা আছে। এই অস্ত্রগুলো মূলত ২ পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার হাতে।
এসআইপিআরআই'র বোর্ড চেয়ারম্যান ও সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্তেফান লফইয়েন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, 'যখন সমগ্র পৃথিবী বা সার্বিকভাবে, মানবজাতি এমন সব সমস্যায় ভুগছে, যেগুলোর সমাধান শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ও পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব, ঠিক সে সময় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে।'
Comments