ইরানের পরমাণু স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলা, তেজস্ক্রিয় বিকিরণ কি আসন্ন?

ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর ম্যাক্সার স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি। রয়টার্স

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলার ফলে বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক ও রাসায়নিক বিকিরণের শঙ্কা তীব্র হয়েছে। 

এর মধ্যে পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে।

ইসরায়েল গত শুক্রবার তেহরানে বিমান হামলা করে ও ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা করে। জবাবে ইরানও তেল আবিবে হামলা চালায়।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলে আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ তৈরি হয়। 

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি আল জাজিরাকে জানান, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণবিক স্থাপনার মধ্যে নাতাঞ্জ থেকে তেজস্ক্রিয় ও রাসায়নিক দূষণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এ হামলার সময় যুক্তরাষ্ট্র ও তেহরানের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনাও চলছিল। নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের পক্ষে ছিলেন। 

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলায় তাদের কোনো ভূমিকা নেই।

আইএইএ কী বলছে?

ভিয়েনায় আইএইএ বোর্ড অব গভর্নর্সের জরুরি সভায় গ্রোসি বলেন, হামলার পর নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনার বাইরের তেজস্ক্রিয়তার স্তর স্বাভাবিক থাকলেও, সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়ানোর সম্ভাবনা বাড়ছে।

নাতাঞ্জে মাটির ওপরের কাঠামো ধ্বংস হলেও নিচের কিছু ইউনিট বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। এতে ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড গ্যাসযুক্ত সেন্ট্রিফিউজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই গ্যাস অতি দূষণকারী, ত্বকের জন্য ক্ষতিকর এবং নিঃশ্বাসের মাধ্যমে এটি শরীরে প্রবেশ করলে তা প্রাণঘাতীও হতে পারে।

আইএইএ প্রধান বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমরা সময়মতো ও নিয়মিত তথ্য না পেলে সঠিকভাবে ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে বা সহায়তা দিতে পারব না।

পারমাণবিক স্থাপনায় যত হামলা

সাম্প্রতিক সময়ে ইরান ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার রেকর্ড নেই। 

তবে নির্মাণাধীন অনেক স্থাপনায় অতীতে হামলা হয়েছে। যেমন, ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় ইরান ইরাকের নির্মাণাধীন ওসিরাক রিঅ্যাক্টরে হামলা চালায়। ১৯৮১ সালে ইসরায়েল 'অপারেশন অপেরা'র মাধ্যমে সেই রিঅ্যাক্টর ধ্বংস করে।

২০০৭ সালে সিরিয়ার একটি প্লুটোনিয়াম রিঅ্যাক্টরে ইসরায়েল হামলা চালায়।

এছাড়া স্পেন, ফ্রান্স ও দক্ষিণ আফ্রিকায় রাজনৈতিক কারণে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটেছে, যদিও তাতে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়নি।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান ড্যান স্মিথ আল জাজিরাকে জানান, বিশ্ব এখন পর্যন্ত পারমাণবিক যুদ্ধের খুব কাছাকাছি যায়নি। 

তবে, ভুলবশত কিছু ঘটনা ঘটেছে। যেমন—১৯৮৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, কৃত্রিম উপগ্রহ ভুল করে এমন তথ্য দেখিয়েছে।

সেসময় দায়িত্বপ্রাপ্ত রুশ প্রকৌশলী স্টানিস্লাভ পেতরভ উপগ্রহের তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে আমলে না নেওয়া যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়।

সম্প্রতি, ভারত পাকিস্তানে ব্রাহমোস ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘটনায়ও পারমাণবিক ঝুঁকি তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং তা মারাত্মক ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খুররম দস্তগীর খান আল জাজিরাকে বলেছিলেন, 'এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র একবার ছোড়া হলে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত না করা পর্যন্ত জানা যায় না যে এটা কী ধরনের বোমা বহন করছে।'

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ঝুঁকি

২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলা করে ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক কেন্দ্র জাপোরিঝঝিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া। রুশ সেনারা ঐ কেন্দ্রের রিঅ্যাক্টর ইউনিটের ইঞ্জিনরুমে অবস্থান নেয় ও পাশের শহরে হামলা চালায়।

ইউক্রেন তখন সতর্ক করে জানায় যে, এতে হাইড্রোজেন গ্যাস লিক ও রেডিওঅ্যাকটিভ পদার্থ ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে। পরবর্তীতে আইএইএ সেখানে হস্তক্ষেপ করে রিঅ্যাক্টরগুলো বন্ধ করে দেয়।

চলমান ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের এ পর্যায়ে পারমাণবিক দূষণের ঝুঁকি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অন্যান্য পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা, যেটি বৈশ্বিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। 

Comments

The Daily Star  | English

Trump calls for Iran's 'unconditional surrender' as Israel-Iran air war rages on

Israel and Iran attacked each other for a sixth straight day on Wednesday, and Israeli air power reigns over Iran, but needs US for deeper impact

6h ago