নেত্রকোণার কলমাকান্দায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি

অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় নেত্রকোণায় কলমাকান্দায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
ছবি: স্টার

অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় নেত্রকোণায় কলমাকান্দায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় উব্দাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আজ শনিবার বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত।    

কলমাকান্দা উপজেলা সদরসহ নদী তীরবর্তী এলাকা ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোণায় ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গতকাল শুক্রবার নেত্রকোণায় ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল বলেও জানান নির্বাহী প্রকৌশলী।

উপজেলা প্রশাসন অফিসের তথ্য অনুসারে, বন্যায় এ পর্যন্ত উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। ৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫ হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

কলমাকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসেন জানান, এ পর্যন্ত ৩৫০ হেক্টর জমির আউশ ধান তলিয়ে গেছে। আমন বীজতলারও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ২ হাজার ৩৫০টি মাছের পুকুর ভেসে গেছে।

অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সীমান্তবর্তী উব্দাখালী নদীসহ গনেশ্বরী, মঙ্গলেশ্বরী, মহাদেও ও পাঁচগাও ছড়ায় পানি বেড়ে যাওয়ায় কলমাকান্দা সদরের সঙ্গে ৮ ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হাসেম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কলমাকান্দার সব এলাকাতেই এখন বন্যার পানি। উপজেলা সদরের সড়কের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্যাদুর্গতদের আশ্রয়ের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে।'

ইউএনও জানান, কলমাকান্দা উপজেলা প্রশাসন চাল, ডাল, চিনিসহ ২ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করেছে। জেলা প্রশাসন থেকে ২০ টন চাল বরাদ্দ এসেছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে এগুলো বিতরণ করা হচ্ছে।   

শুকনো খাবার ও গ্যাস সিলিন্ডার সংকট

কলমাকান্দায় চিড়া-মুড়িসহ শুকনো খাবারের সংকটের কথা জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

ছবি: স্টার

কলমাকান্দা সদরের ব্র্যাক ম্যানেজার মো. বসির উদ্দিন খাঁন জানান, প্রাথমিকভাবে তারা ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কলমাকান্দা বাজার থেকে চিড়া-মুড়িসহ শুকনো খাবার সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তাই নেত্রকোণা থেকে শুকনো খাবার এনে আগামীকাল রোববার বিতরণ কর্মসূচি শুরু করা হবে।

এদিকে বন্যার মধ্যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন ক্রেতারা। বর্তমানে প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডার ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এক ক্রেতা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, 'বিষয়টি জেনেছি। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও যদি কেউ বেশি দাম নেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'  

এদিকে অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকার কারণে কলমাকান্দা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিচু এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। দুর্গাপুর উপজেলায় সোমেশ্বরীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার কারণে নদীভাঙনের কবলে পড়েছে নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষ। জেলার হাওর উপজেলা খালিয়াজুরীর ধনু নদের পানি বৃদ্ধির ফলে কৃষ্ণপুর এলাকার সড়ক ভাঙনের কবলে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিমাপক মোবারক হোসেন জানান, গতকাল শুক্রবার উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

Comments