বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করুন যুদ্ধাবস্থার মতো

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যায় তলিয়ে গেছে সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ এলাকা। সুনামগঞ্জের মল্লিকপুর ঘাট থেকে ছবিটি শনিবার বিকেলে তোলা। ছবি: রাজিব খান

সিলেট বিভাগে চলমান বন্যায় যে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে, এতে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে। তা হলো- বন্যা মোকাবিলায় আমাদের অনেক সুনাম থাকার পরেও, সিলেটের মতো এমন বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য আমাদের প্রস্তুতি ছিল যথেষ্ট দুর্বল।

যদিও এটা সত্য যে, এবারের বন্যার মাত্রা ও তীব্রতা দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এটিকে গত ১২২ বছরের ইতিহাসে একমাত্র ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন।

এ ঘটনায় আমাদের সক্ষমতার একটি বিষয়কে কাজেই লাগানো হয়নি। আর তা হলো স্যাটেলাইটের তথ্য।

সরকার স্যাটেলাইট থেকে দুর্যোগের সতর্কবার্তা পাওয়ার পর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আগেই নিরাপদে সরিয়ে নিতে পারত কিংবা বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোতে জরুরি ত্রাণ সরবরাহ করতে পারত। কিন্তু সরকার তা করেনি। এটিকে ব্যর্থতা হিসেবেই দেখা উচিত।

গত শনিবার রাত পর্যন্ত সিলেট বিভাগের ৭২ শতাংশ প্লাবিত ছিল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা। এ অঞ্চলের পাশাপাশি ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এ দুর্যোগের সৃষ্টি হলো।

তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত দেশের ১০টি জেলার প্রায় ৬৪টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে এবং বেশিরভাগ এলাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। খাদ্য, পানীয় জল ও আশ্রয় পেতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। শিশু ও বয়স্করা বিশেষ ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, মঙ্গল বা বুধবার পর্যন্ত মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে আরও বেশি এলাকা প্লাবিত হতে পারে, দেশের ভেতরে বন্যা শুরু হতে পারে। অর্থাৎ সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার আগে আরও অবনতি হওয়ার সম্ভাবনাও আছে।

এই আকারের একটি দুর্যোগ বেসামরিক প্রশাসন একা মোকাবিলা করতে পারে না। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, অগ্নিনির্বাপক বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উদ্ধার তৎপরতা চালাতে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করছেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ত্রাণ হিসেবে ৪০০ টন চাল, ৪১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং নগদ ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে বলে জানা গেছে। বরাদ্দের পরিমাণ আরও অনেক বাড়াতে হবে। যারা এখনো পানিবন্দি আছেন বা আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন, তাদের কাছে এসব সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে হবে।

এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উত্সাহের খবর এই যে, ব্যক্তিগত বা সামষ্টিক উদ্যোগে জরুরি ত্রাণ ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বন্যার্তদের কাছে।

জীবন বাঁচানো এবং ক্ষয়ক্ষতি কমানোই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। সরকারের নেতৃত্বেই এটা করতে হবে। বন্যার পানি কমতে শুরু করার পরের কয়েক দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইন ও অফলাইন যোগাযোগের সব মাধ্যম আবার সচল হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তারপরই আমরা ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র পাব।

আমরা সরকারকে চলমান বন্যা পরিস্থিতিকে যুদ্ধাবস্থার মতো জরুরি অবস্থা বিবেচনা করে যত শিগগির সম্ভব সার্বিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করার আহ্বান জানাই।

Comments

The Daily Star  | English

DU JCD leader stabbed to death on campus

Shahriar Alam Shammo, 25, was the literature and publication secretary of the Sir AF Rahman Hall unit of Jatiyatabadi Chhatra Dal

6h ago