‘বাচ্চারা খাবার চাচ্ছে, দিতে পারছি না’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ধরলা নদী তীরবর্তী চর ফলিমারী গ্রাম। ২০ জুন ২০২২। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে বন্যায় আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ বানভাসি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩০ হাজারের বেশি শিশু। শিশুদের খাবার সংগ্রহ ও যোগান দিতে মহাসংকটে পড়েছেন বানভাসি লোকজন।

শিশুরা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করলেও অভিভাবকরা তা দিতে পারছেন না। ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় থেকে শিশুখাদ্যের যোগান দিতে নগদ অর্থ সহায়তা বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখনো এর বিতরণ শুরু হয়নি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ধরলা নদী তীরবর্তী চর ফলিমারী গ্রামের বন্যাদুর্গত মা লাইলি বেগম (২৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২ ও ৬ বছর বয়সী ২ ছেলে আছে। তাদেরকে প্রয়োজনীয় খাবার দিতে পারছি না। গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যার পানিতে আছি। আমরা অনাহারে-অর্ধাহারে থাকছি। বাচ্চারা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করে।'

লাইলি বেগমের স্বামী মাহা আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যা আর বৃষ্টির কারণে কাজের জন্য বাইরে যেতে পারছি না। এ ছাড়াও, এলাকায় দিনমজুরের কাজ নেই। তাই বাচ্চাদের জন্য খাবারও কিনতে পারছি না। ঋণ নিয়ে কোনোরকমে সংসার চালাচ্ছি।'

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের বানভাসি গৃহবধূ রিক্তা বেগম (৩২) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ৩ সন্তান। বন্যা শুরু হওয়ায় গত ৮ দিন ধরে বাচ্চাদের পর্যাপ্ত খাবার দিতে পারছি না। ওরা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করে। ঘরে জমানো টাকাও নেই। আমাদের সঙ্গে বাচ্চারাও অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে।'

রিক্তা বেগমের স্বামী এলাহী হক পেশায় দিনমজুর। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এলাকায় কাজ নেই। আয় নেই। বন্যার কারণে বাচ্চারাও এক বেলা খাচ্ছে। ওরা খাবার চায়। কিন্তু, দিতে পারছি না।'

'সরকারি-বেসরকারিভাবে কোনো সহায়তা পাইনি,' যোগ করেন তিনি।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে চর পার্বতীর বানভাসি মা রোকেয়া বেগম (২৮) কেঁদে কেঁদে ডেইলি স্টারকে বলেন, '২ ছেলে আছে। বড় ছেলের বয়স ৯ বছর, ছোট ছেলের ২ বছর। বড় ছেলেকে বুঝ দেওয়া যাচ্ছে। কিন্তু, ছোট ছেলে শুধু খাবারের জন্য কান্না করে। তার জন্য খাবার জরুরি। আমি নিজেও ঠিকমতো খাবার পাচ্ছি না। বাচ্চাটা বুকের দুধও পাচ্ছে না।'

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র জানিয়েছে, কুড়িগ্রামে বানভাসি পরিবারের শিশুখাদ্য কেনার জন্য ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ও লালমনিরহাটের জন্য ৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুনেছি সরকার শিশুখাদ্যের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু, এখনো সেই বরাদ্দ পৌঁছায়নি। বানভাসিরা অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে পারেন, কিন্তু শিশুরা খাবার চায়। বানভাসিদের কাছে শিশু খাদ্য পৌঁছে দেওয়া জরুরি।'

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ডিআরআরও) আব্দুল হাই সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শিগগির শিশু খাদ্য সহায়তা বানভাসিদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

5h ago