করোনা পরীক্ষায় জালিয়াতি

জেকেজির সাবরিনা-আরিফুলসহ ৮ জনের ১১ বছরের কারাদণ্ড

অর্থের বিনিময়ে নমুনা সংগ্রহ করে করোনার ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়ার মামলায় জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী ডা. সাবরিনা চৌধুরীসহ ৮ জনকে ১১ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেন জালিয়াতি মামলার রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে সাবরিনা। ছবি: এমরুল হাসান বাপ্পী/স্টার

মামলার বাকি ৬ আসামি হলেন—আরিফুলের বোন জেবুন্নেছা রিমা, সাবেক কর্মচারী হুমায়ুন কবির হিমু ও তার স্ত্রী তানজিনা পাটোয়ারী, জেকেজির সমন্বয়ক আবু সাঈদ চৌধুরী, জেকেজির কর্মচারী বিপুল দাস ও শফিকুল ইসলাম রোমিও।

রায়ে বিচারক বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এই অপরাধে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।

১১ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ১১ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১১ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩টি ধারায় আদালত আসামিদের ভিন্ন ভিন্ন সাজা দিয়েছেন। একটি সাজা শেষ হওয়ার পরে অন্যটি শুরু হবে।

সূত্র জানিয়েছে, দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় (প্রতারণা) ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৩ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ মাসের কারাদণ্ড; ৪৬৬ ধারায় (ভুয়া প্রতিবেদনকে সত্য বলে চালিয়ে দেওয়া) ৪ বছরের কারাদণ্ড ও ৪ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৪ মাসের কারাদণ্ড এবং ৪৭১ ধারায় (জালিয়াতি) ৪ বছরের কারাদণ্ড ও ৪ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৪ মাসের কারাদণ্ড।

বাংলাদেশের ইতিহাসে করোনা জালিয়াতির মামলায় এটিই প্রথম রায়।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আসামিদের কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়।

২০২০ সালের ২০ আগস্ট আদালত এই মামলায় ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর আগে ৫ আগস্ট পুলিশের গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলী চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিলেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, করোনা জালিয়াতিতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন সাবরিনা ও স্বামী আরিফুল। মামলা থেকে মামুনুর রশীদ নামে এক আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

ওই বছরের ২৩ জুন কামাল হোসেন নামে একজন তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। করোনা পরীক্ষায় ভুয়া সনদ দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় হুমায়ুন কবির হিমু ও তার স্ত্রী তানজিনা পাটোয়ারীসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

ওই দিনই হুমায়ুন, তানজিলা, আরিফুল চৌধুরী ও আরও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হুমায়ুন ও তানজিলা তাদের অপরাধ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ পরবর্তী বিভিন্ন সময় আরও ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে।

সাবরিনা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন। পুলিশ গ্রেপ্তার করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, এই মামলায় ৪০ জনের মধ্যে ২৬ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

২০২০ সালের ৩০ আগস্ট সাবরিনার বিরুদ্ধে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও আয়কর বিবরণী সনদ জালিয়াতির অভিযোগে মামলা হয়। নির্বাচন কমিশনের গুলশান থানার নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

ইসির এনআইডি শাখা জানায়, ২০০৯ সালে সাবরিনা প্রথমবারের মতো ভোটার হন। তখন তিনি তার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা মোহাম্মদপুর এবং জন্ম তারিখ ২ ডিসেম্বর ১৯৭৮ উল্লেখ করেছিলেন।

ওই এনআইডিতে তিনি তার স্বামীর নাম এইচ হক এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর উল্লেখ করেছিলেন।

কিন্তু, ২০১৬ সালে করা তার দ্বিতীয় এনআইডিতে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা বাড্ডা উল্লেখ করেন। সেখানে তিনি জন্ম তারিখ ২ ডিসেম্বর ১৯৮৩ ব্যবহার করেন।

সেখানে তিনি তার মায়ের নাম ও শিক্ষাগত যোগ্যতাও পরিবর্তন করেন।

ইসির এনআইডি শাখার মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, 'দুটি এনআইডি রাখায় এর আগে কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রেও আমরা কাউকে ছাড় দেবো না।'

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

3h ago