চামড়া শিল্প নগরী পরিদর্শন শেষে হতাশ নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান

সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (সিইটিপি), সিইটিপি ল্যাব ও শিল্প নগরীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। ছবি: পলাশ খান

সাভারের চামড়া শিল্প নগরী পরিদর্শন শেষে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

আজ সোমবার সকালে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা সভা শেষে সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (সিইটিপি), সিইটিপি ল্যাব ও শিল্প নগরীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই হতাশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, 'চামড়া শিল্প নগরী নিয়ে আমরা পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্নভাবে বিভিন্ন অভিযোগ পাই, মূলত সরেজমিনে সেসব অভিযোগ ও এর বাস্তব পরিস্থিতি জানতে আমরা আজ এখানে পরিদর্শনে এসেছি। কিন্তু, এখানে এসে ও এখানকার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে যতটুকু বুঝতে পেরেছি, তাতে আমি খুবই হতাশ।'

'আপনারা দেখেছেন- এখানে যে ল্যাবটি আছে, এত বড় একটি শিল্প নগরী, যেখানে ১৪০টি ট্যানারি কারখানা, সেখানে ল্যাব নেই বললেই চলে। কোন ইন্সট্রুমেন্ট নেই, কার্যক্রম নেই, এর চেয়ে তো গ্রামের স্কুলের ল্যাবেও বেশি ইকুইপমেন্ট থাকে,' বলেন তিনি।

এসময় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী শিল্প নগরী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও সিইটিপির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনাকালে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান। বিশেষ করে নদী ও পরিবেশ দূষণ, সিইটিপ'র কার্যক্ষমতাসহ ট্যানারি সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুর ওপর জোর দিয়ে এ সংক্রান্ত সমস্যা ও এর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চান।

তবে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজস্ব অবস্থান ও কাজের অগ্রগতি তুলে ধরার চেষ্টা করলেও তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

চামড়া শিল্প নগরীর সিইটিপি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েস্টেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট কোম্পানির সিনিয়র প্রসেস ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় ঠাকুর সিইটিপিকে সম্পূর্ণ কার্যকর দাবি করে এর বিভিন্ন কার্যক্ষমতা ও সিইটিপি থেকে কোনো অপরিশোধিত তরল বর্জ্য নদীতে অপসারণ করা হয় না দাবি করেন।

তিনি বলেন, 'আমরা নিয়মিত আমাদের ল্যাবে সিইটিপি আউটলেটের পানি পরীক্ষা করি এবং তাতে দেখা যায় বিভিন্ন প্যারামিটারে এর মান নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ডের মধ্যেই থাকে।'

এ সময় এই কর্মকর্তা দাবি করেন, 'সিইটিপি থেকে পরিশোধিত যে তরল নদীতে অপসারণ করা হয়, তার মান নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী শোধনের পর নদীতে রিলিজ করা হয় এবং নিয়মিত নিজস্ব ল্যাবে তা পরীক্ষা করা হয়।'

তবে এই কর্মকর্তার এই দাবি ভিত্তিহীন উল্লেখ করে সভায় উপস্থিত পরিবেশ অধিদপ্তরের (ঢাকা অঞ্চল) উপ-পরিচালক জহিরুল ইসলাম তালুকদার কমিশনকে জানান, সিইটিপির আউটলেটের পানিতে যে পরিমাণ দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকার কথা দাবি করা হচ্ছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ল্যাবে পরীক্ষায় এর মাত্রা স্ট্যান্ডার্ড মানের চেয়ে অনেক কম পেয়েছেন তারা। এ ছাড়াও, বিভিন্ন প্যারামিটারে এর মান পরীক্ষা করে ক্রোমিয়ামসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে এর উপস্থিতি বেশি পেয়েছেন তারা।

এ সময় উভয়পক্ষের উপস্থাপিত সিইটিপির তরল পরীক্ষার ফলাফলে অমিল দেখা যায়।

সিইটিপির সক্ষমতা প্রসঙ্গে ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েস্টেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট কোম্পানির সিনিয়র প্রসেস ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় ঠাকুর কমিশনকে জানান, সিইটিপিতে ২৫ হাজার কিউবিক মিটার তরল বর্জ্য পরিশোধনের সক্ষমতা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে ট্যানারিগুলোতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করার কারণে এর পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।

তবে এই বেড়ে যাওয়ার কারণে তরল বর্জ্য অপরিশোধিত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, 'নির্দিষ্ট সক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত বর্জ্য সিইটিপি প্রবেশ করলে সেক্ষেত্রে এর মানে কিছুটা ভিন্নতা এলেও অপরিশোধিত অবস্থায় কোনো তরল পরিবেশে অপসারণ করা হয় না।'

চামড়া শিল্প নগরী পরিদর্শন শেষে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, 'অপরিশোধিত তরল বর্জ্য নদীতে অপসারণ প্রসঙ্গে তাদের যে বক্তব্য, তা আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। আমি বিশেষভাবে তাদের (সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা) প্রতি বলব, যেন রেশনিংয়ের মাধ্যমে ২৫ হাজার কিউবিক মিটার, অর্থাৎ সক্ষমতার অধিক তরল বর্জ্য যেন কোনোভাবেই উৎপন্ন না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, আগামী ১০ দিনের মধ্যে ট্যানারি সংশ্লিষ্ট যারাই আছেন, সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আমরা সভা করব কীভাবে এটিকে আরও উন্নত করা যায়।'

তিনি আরও বলেন, 'আপনারা জানেন- লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের যে সনদ সেটি যদি পাওয়া যেতো, তাহলে এই চামড়া খাত কয়েক ধাপ এগিয়ে যেত। কিন্তু আমি এখানে এসে, লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সনদ পাওয়ার জন্য তাদের তেমন কোনো আগ্রহ, অগ্রগতি লক্ষ করলাম না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা সরকারের উচ্চ মহলে সুপারিশ করব, কীভাবে এই খাতকে আরও এগিয়ে নেওয়া যায়, কারণ আমরা কেউই চাই না শিল্প বন্ধ হয়ে যাক, প্রয়োজনে ম্যানেজমেন্ট চেঞ্জ করে হলেও এটিকে কীভাবে আরও আধুনিক করা যায়, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেজন্য আমরা সুপারিশ করব। শুধু তো ট্যানারি নয়, সাভারে আরও অনেক শিল্প কলকারখানা আছে যারা পরিবেশ দূষণ করে যাচ্ছে, বর্তমানে সাভারের পানি দূষিত, মাটি দূষিত, বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত হয়েছে এই সাভার।'

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, '২০২৩ সনের ১৭ মার্চের মধ্যে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের আগে ঢাকার চারপাশের সকল নদ-নদী দূষণমুক্ত করব।  আমরা সেই লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এখন প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে নদ-নদী দূষণ মুক্ত করা।'

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জহিরুল ইসলাম তালুকদার জানান, সাভার বিসিক চামড়া শিল্প নগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) এখনো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পায়নি। এছাড়া সাভার বিসিক চামড়া শিল্প নগরীর অধীনস্থ কোনো কারখানারই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই।

কতদিন নাগাদ সিইটিপি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাবে এমন প্রশ্ন করা হলে ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েস্টেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুস্তাক আহমেদ কোনো উত্তর দেননি।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

8h ago