‘ওরা ১১ জন’কে সিনেমা নয়, বাস্তব জীবনের গল্প মনে হয়েছিল: নূতন

অভিনেত্রী নূতন। ছবি: নূতনের ফেসবুক থেকে নেওয়া

চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত এবং নায়ক সোহেল রানা প্রযোজিত বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা 'ওরা ১১ জন' মুক্তির ৫০ বছর পূর্ণ হলো আজ ১১ আগস্ট।

নায়করাজ রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, হাসান ইমাম, এটিএম শামসুজ্জামান, খসরু অভিনয় করেছিলেন এই সিনেমায়। সোনালী দিনের কালজয়ী এই সিনেমার অনেক শিল্পী আর বেঁচে নেই। 'ওরা ১১ জন' সিনেমার অন্যতম একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেত্রী নূতন। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আজ সিনেমাটি নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।  

'ওরা ১১ জন আমার অভিনয় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সিনেমা। এই সিনেমায় শিলা চরিত্রে অভিনয় করে আজও মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হই আমি। আমার গর্ব হয়, আমি এইরকম একটি সিনেমায় অভিনয় করতে পেরেছিলাম। যেখানেই যাই, ওরা ১১ জন নিয়ে আলোচনা হয়।

‘ওরা ১১ জন’ মুক্তির ৫০ বছর পূর্ণ হলো আজ ১১ আগস্ট। ছবি: সংগৃহীত

বিখ্যাত অভিনেত্রী সুমিতা দেবীর বাসায় সেই সময়ে একদিন বসেছিলাম আমরা । সেখানে সোহেল রানা ও চাষী নজরুল ইসলাম ছিলেন, আরও অনেকে ছিলেন। সেখানেই শিলা চরিত্রের জন্য আমাকে চূড়ান্ত করা হয়। গল্প ও চরিত্র দুটোই আমাকে মুগ্ধ করেছিল। যাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ পেয়েছি, যাদের আত্মত্যাগে এই দেশ, তাদের জীবনের ওপরই ওরা ১১ জন সিনেমার গল্প।

সিনেমার শেষদৃশ্যে একটি গান ভেসে আসে, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে গানটি। ওই সময় আমরা বীরাঙ্গনা চরিত্রে যারা অভিনয় করেছিলাম, তারা বের হয়ে আসি। কী করুণ দৃশ্য! এই দৃশ্যটির শুটিং করেছিলাম এফডিসির ২ নম্বর ফ্লোরে। দৃশ্যটি করতে গিয়ে সত্যিই নিজেকে বীরাঙ্গনা মনে হয়েছি। কারণ, আমি নিজে যুদ্ধ দেখেছি। যুদ্ধের সময় পালিয়ে থেকেছি ।

মাকে নিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালে আমাদের গ্রামে চলে গিয়েছিলাম। সেই সময় কত মানুষের কষ্ট দেখেছি। পালিয়ে থাকার সময়ে না খেয়েও থেকেছি। সেজন্য ওরা ১১ জন করতে গিয়ে সিনেমা মনে হয়নি, বাস্তব জীবনের গল্প মনে হয়েছিল।

ওরা ১১ জন নূতনের দ্বিতীয় সিনেমা। ছবি: সংগৃহীত

সাভার ও এফডিসিতে আমার অংশের শুটিং করেছিলাম। তারপর মুক্তির আগেই এফডিসিতে প্রিমিয়ার শোর আয়োজন করা হয়েছিল। সিনেমাটি দেখে সেদিন  কেঁদেছিলাম, খুব কেঁদেছিলাম। সেই ঘটনা আজও মনে পড়ে। যতদিন বেঁচে থাকব মনে পড়বে। আমি মনে করি, আমার অভিনয় জীবনের অন্যতম সেরা সিনেমা এটি।

জীবদ্দশায় ওরা ১১ জন সিনেমা মুক্তির ৫০ বছর দেখে যেতে পারাটাও সৌভাগ্য, পরম  সৌভাগ্য বলব। এইরকম একটি সত্যি গল্প নিয়ে সিনেমা বানানোর জন্য অবশ্যই সোহেল রানা ও চাষী নজরুল ইসলামকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

আরেকটি স্মরণীয় ঘটনা বলব, খসরুসহ আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধো এই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। এটাও বড় ঘটনা। তারা সরাসরি যুদ্ধ করেছেন।

শিলা চরিত্র পাওয়ার পর বিষয়টিকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। নিজেকে  শিলা ও বীরাঙ্গনা ভাবতে শুরু করি  ওই সময়। এই সিনেমা চিরদিন থেকে যাবে। নতুন প্রজন্মকে বলব, দেশকে ভালোবাস এবং মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা দেখ।

‘ওরা ১১ জন সিনেমায় শিলা চরিত্রে অভিনয় করেন নূতন। ছবি: সংগৃহীত

আজ ৫০ বছর পেছনে ফিরে গেলে বার বার মনে পড়ছে এই সিনেমার যাদের হারিয়েছি, তাদের কথা। বিশেষ করে রাজ্জাক  এবং  চাষী নজরুল ইসলামকে মনে পড়ছে। মুক্তির পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও সিনেমাটি দেখেছিলেন। তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা । তিনি বাঙালির মহান নেতা । তার মতো নেতা পেয়েছিলাম বলেই বাংলাদেশ পেয়েছিলাম এবং একটি দেশ পেয়েছিলাম বলেই ওরা ১১ জনের মতো সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ হয়েছিল।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

8h ago