পাবনায় কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মোটা চালের দাম

ছবি: স্টার

দাম বাড়তে থাকায় ব্রি ২৯ জাতের চালের সংকট দেখা দিয়েছে পাবনার বাজারগুলোতে। এর পরিবর্তে ২৮ জাতের চাল কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। ফলে এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি চাল কিনতে প্রায় ১০ টাকা বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। 

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক মাস আগে খুচরা বাজারে ২৯ জাতের চাল বিক্রি হতো ৫০ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে ২৯ জাতের চাল পাওয়া যাচ্ছে না। এর পরিবর্তে ২৮ জাতের চাল কিনতে হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। 

বর্তমানে পাবনার বড় বাজারে প্রতি কেজি ২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা এবং খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। এক মাস আগে যেটা ছিল ৫০ ও ৫২ টাকা।

ব্যবসায়ীদের দাবি, চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালকল মালিকরা এখন ২৯ জাতের চালের সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে ২৮ জাতের চাল বাজারজাত শুরু করেছে। 

পাবনা সদর উপজেলার মালঞ্চি গ্রামের অটোরিকশা চালক বাদশা মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ঘরে চাল নেই, চাল কেনার জন্য বাসার পাশের দোকানে গেলে সেখানে ৬০ টাকা কেজির নিচে কোনো চাল না পেয়ে পাবনা বড় বাজারের চালের আড়তে এসেছি কিছুটা কম দামে পাবার আশায়। কিন্তু সেখানেও চালের দাম চড়া।'
 
বাদশা বলেন, 'মাসখানেক আগেও এক বস্তা (২৯ জাতের) চাল কিনেছিলাম ২ হাজার ২০০ টাকায়। এখন বাজারে কোথাও সে চাল পাচ্ছি না। সব দোকানেই ২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৮৫০ টাকায়। খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য বেশি দাম দিয়ে হলেও চাল কিনতে হবে।'

পাবনা বড় বাজারের চাল ব্যবসায়ী মো. আলামিন হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চালের দাম বাড়তে শুরু করায় চালকল মালিকরা বাজারে ২৯ জাতের চালের সরবরাহ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। বাজারে এখন ২৮ জাতের চাল এবং মিনিকেট চালের সরবরাহ বেশি।' 

গত কয়েক সপ্তাহে প্রতি বস্তা চালের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলেও জানান তিনি। 

আল-আমিন বলেন, 'গত মাসে ২৮ জাতের চাল বাজারে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এখন সেটা ২ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৮৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে মিনিকেট চাল এখন ৩ হাজার ১০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত মাসে ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা।' 

শুধু ২৮ বা মিনিকেট চাল নয়, বেড়েছে নাজিরশাইল, বাসমতীসহ সব ধরনের চালের দাম।
 
এদিকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমেছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। গত কয়েক দিন ধরেই চাল বিক্রি কমেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। 

পাবনা বড় বাজারের রতিন চক্রবর্তী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্বাভাবিক সময়ে প্রতি সপ্তাহে ২৫০ থেকে ৩০০ বস্তা চাল বিক্রি করি কিন্তু গত এক সপ্তাহে ১০০ থেকে ১২০ বস্তার বেশি চাল বিক্রি হয়নি।' 

দাম বাড়ার কারণে এখন অনেকেই প্রয়োজন না হলে আগে থেকে চাল কিনছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়বে। চালের দাম স্বাবভাবিক হলে ক্রেতা ও ব্যবসায়ী সবাই বাঁচবে। তবে, চালকল মালিকরা দাম না কমালে কিছুই করার নেই বলে জানান তিনি। 

এদিকে চালের দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পাবনার এ আর স্পেশালাইজড রাইচ মিলের মহাব্যবস্থাপক আখতার হোসেন রাসেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধানের দাম বাড়ার কারণে চাল উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ কারণে চালের দাম বেড়েছে। সংকট নিরসনে আমদানি শুল্ক বন্ধ রেখে চাল আমদানি করা হলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।'

রাসেল বলেন, 'যে ধানের দাম ছিল ১১ শ টাকা মন, কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে সেটার দাম হয়েছে ১৩ শ ৫০ টাকা মন। আর ১৫ শ টাকা মনের ধানের দাম হয়েছে ১৭ শ টাকার উপরে।'

তিনি আরও বলেন, 'ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে ধানের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি জ্বালানির দাম বাড়ায় চাল উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফলে বাজারে চালের দাম বেড়ে গেছে।'

বাজারে ২৯ চালের সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ২৯ চাল বাজারজাত করে লাভ হচ্ছে না। এ কারণে চালকলগুলো ২৯ জাতের চাল বাজারজাত কমিয়ে দিয়েছে।' 

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে আমদানি শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানি প্রয়োজন বলেও জানান তিনি। 

 

Comments

The Daily Star  | English
gold price hike in Bangladesh

Why gold costs more in Bangladesh than in India, Dubai

According to market data, gold now sells for $1,414 per bhori in Bangladesh, compared to $1,189 in India, $1,137 in Dubai

2h ago