ডিজেলের ব্যবহার কমছে না, আমদানি চাহিদা বেড়েছে ৮ গুণ

ডিজেল
ছবি: রয়টার্স

চলমান সংকটে সরকার সাশ্রয় নীতি হিসেবে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ নিলেও, তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকার মৌখিকভাবে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের ঘোষণা দিলেও, তাদের পরিকল্পনায় দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি ডিজেল আমদানি করা প্রয়োজন হচ্ছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চাহিদাপত্র অনুযায়ী বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জ্বালানি তেল আমদানি করে।

এ বছরের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল আমদানির প্রাথমিক চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছিল গত বছরের অক্টোবরে। তবে সংশোধিত চাহিদাপত্রে দেখা গেছে, ডিজেল আমদানি আগের চাহিদার তুলনায় ৮ গুণ ও ফার্নেস তেলের আমদানি দ্বিগুণ করতে বলা হয়েছে।

প্রাথমিক চাহিদাপত্রে ছিল, চলতি আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৩ মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৪২ হাজার ১৪০ মেট্রিক টন ডিজেল লাগতে পারে। সেখানে সংশোধিত চাহিদাপত্রে বলা হয়েছে ডিজেল লাগবে ৩ লাখ ৯১ হাজার মেট্রিক টন।

ফার্নেস তেলের চাহিদা প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৪৬ হাজার ধরা হলেও, চলতি আগস্টের ৮ তারিখে বলা হয়েছে ফার্নেস তেল লাগবে ২ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন।

বিদ্যুৎ ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে জ্বালানির ব্যবহার কমেনি বরং বেড়েছে। জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারের পদক্ষেপ যথাযথ ছিল কি না, এখন তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।

বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেওয়া ছাড়া আর কী ফল বয়ে আনতে পেরেছে।

এ বিষয়ে জানতে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমানের মোবাইল ফোনে কয়েক দফা চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে বিদ্যুৎ বিভাগের সংস্থা 'পাওয়ার সেল'র মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তাই হয়তো জ্বালানি তেলের বাড়তি চাহিদা দিয়ে থাকতে পারে।'

অথচ, সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি বেশি খরচ হচ্ছে বলে সেগুলো বন্ধ থাকবে। গত ১৮ জুলাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি ও চলতি মাসের ৮ তারিখে সবগুলো ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা হয়।

বাড়তি ডিজেল আমদানির পেছনে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা কয়েকটি কারণ দেখছেন।

একজন কর্মকর্তার মতে, ডিজেলের দাম বিশ্ববাজারে আরও বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কায় বেশি তেল আমদানি করতে বলা হয়েছে।

আরেক কর্মকর্তা বলছেন, 'সরকার বলেছিল যে অক্টোবরের মধ্যে কয়লাভিত্তিক দুটো বিদ্যুৎকেন্দ্র জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে, যেটা আদতে ডিসেম্বরের আগে সম্ভব হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ কারণে এ সময়টা ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবহার বাড়াতে হতে পারে।'

বিপিসির একজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'চলমান লোডশেডিং কিছুটা কমানোর জন্য জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরপর ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি লোডশেডিং চলাকালে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা চালু রাখতে জেনারেটরে ডিজেলের ব্যবহার অত্যধিক পরিমাণে বেড়েছে।'

'যদিও এখন সেচ মৌসুম না, তবে দেশের কিছু কিছু জেলায় খরার কারণে সেচ কাজে ডিজেলের ব্যবহার প্রজেকশনের চেয়ে বেশি হয়েছে,' তিনি বলেন।

এদিকে ফার্নেস তেলের আমদানি বাড়ার পেছনের কারণ সম্পর্কে বিপিসি ও পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে আগে মালিকেরা নিজেরাই ফার্নেস তেল আমদানি করতেন। কিন্তু ডলার এক্সচেঞ্জ রেটের তারতম্যের কারণে তারা ওই পরিমাণ আমদানি করতে পারবেন না বলে পিডিবিকে জানিয়েছেন।

তারা জানান, এ কারণে পিডিবি বাধ্য হয়ে বিপিসিকে বেসরকারি প্ল্যান্টগুলোর জন্য ফার্নেস তেল আমদানি করতে বলেছে।

তবে বাংলাদেশ ইনডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ইমরান করিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সরকারের কাছে তাদের যে পাওনা, সেটা নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করলে এই সমস্যা হতো না।

তিনি বলেন, 'এখন ডলারের রেটের ওঠানামায় আমাদের প্রতি লিটার ফার্নেস তেলে ১৫-২০ টাকা লস হচ্ছে। একটি ১০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য মাসে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২০ কোটি টাকা। ফলে আমদানিতে আমাদের যে ঘাটতি হচ্ছে, সেটা মেটানোর জন্য আমরা পিডিবিকে বলেছি যেন বিপিসির মাধ্যমে তেল আমদানি করে দেয়।'

তিনি জানান, তারা গত মার্চ মাসের বকেয়া পেয়েছেন, এখন এপ্রিলের বকেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।

বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, হঠাৎ করে ফার্নেস তেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়, আমদানিতে কিছুটা ঝামেলা হতে পারে।

'তবে ডিজেল আমদানিতে বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে হচ্ছে না। সামগ্রিক ব্যবহারও খুব বেশি বাড়ার কথা নয়,' যোগ করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডিজেলচালিত কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ীই এগুলো বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু এগুলো কেন চলছে সে বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই।'

বেসরকারি অফিস ও কলকারখানায় লোডশেডিংয়ের কারণে ডিজেলের ব্যবহার বেড়েছে উল্লেখ করে ম তামিম বলেন, 'তবে ওই চাহিদা তো পিডিবির চাহিদাপত্রে উল্লেখ করার কোনো কারণ নেই। পিডিবি কেন বেশি তেল আমদানি করতে বলেছে, সে ব্যাখ্যা তাদের দেওয়া উচিত।'

 

Comments

The Daily Star  | English
China urges US for fair trade talks

China warns countries against striking trade deals with US at its expense

Beijing "will take countermeasures in a resolute and reciprocal manner" if any country sought such deals, a ministry spokesperson said

1h ago